মসুলে পৌঁছেই জয়ের খবর দিলেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী

কিন্তু এই জয় কতটা ফিরিয়ে দেবে পুরনো মসুলকে? সেনার সাফল্যের পরপরই উঠেছে এই বিতর্কিত প্রশ্ন। কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে, সেনাবাহিনীর জন্য মসুলে এখনও অপেক্ষা করে রয়েছে বিপদ। আইএসের স্লিপার সেল এবং আত্মঘাতী বোমারুদের ফাঁড়া এখনও কাটেনি বলেই মনে করছেন তাঁরা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মসুল শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৭ ০৩:০৬
Share:

আইএস জঙ্গিদের হাত থেকে মসুল ছিনিয়ে নিল ইরাকি সেনা

ন’মাসের লড়াইয়ে ইতি। আইএস জঙ্গিদের হাত থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের শক্ত ঘাঁটি এবং ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, মসুল ছিনিয়ে নিল ইরাকি সেনা। রবিবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হায়দর আল-আবাদি সামরিক পোশাকে পৌঁছে যান মসুলে। আইএসকে এ শহর থেকে মুছে ফেলার জন্য অভিনন্দন জানান সেনাবাহিনীকে। আইএসের দাপটে যে শহরটায় এখন লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয়হীন, হাজার হাজার প্রাণ অকাতরে শেষ, ঐতিহ্যের অনেকটাই মাটিতে বিলীন।

Advertisement

কিন্তু এই জয় কতটা ফিরিয়ে দেবে পুরনো মসুলকে? সেনার সাফল্যের পরপরই উঠেছে এই বিতর্কিত প্রশ্ন। কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে, সেনাবাহিনীর জন্য মসুলে এখনও অপেক্ষা করে রয়েছে বিপদ। আইএসের স্লিপার সেল এবং আত্মঘাতী বোমারুদের ফাঁড়া এখনও কাটেনি বলেই মনে করছেন তাঁরা। শহরের আনাচে কানাচে কোথায় কত বাড়িতে বিস্ফোরক ঠাসা রয়েছে, তারও হদিস নেই। তাই সেনার সামনে এখন আরও বড় চ্যালেঞ্জ। বা়ড়িঘর বিপন্মুক্ত করে আশ্রয়হীনদের ঘরে ফেরানো এবং শহরটাকে পুরনো ছন্দে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। তা ছাড়া, ইরাকের অন্য শহরগুলোতে এখনও বহাল তবিয়তে আইএসের দাপট চলছে। ফলে সেগুলো এখনও সেনার মাথাব্যথা। ইরাকি সেনার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করা মার্কিন সেনার এক অফিসার কর্নেল প্যাট ওয়ার্ক তাই বলছেন, ‘‘প্রতিটা দিন এখন আরও কঠিন।’’ কারণ এই অফিসার সম্প্রতি পশ্চিম মসুলের অলিগলিতে ঘুরে বুঝেছেন, ‘‘আইএস পাল্টা আঘাত করবেই।’’

২০১৪ সালের জুন মাসে ইরাকের দ্বিতীয় বড় এই শহরটার দখল নেয় আইএস জঙ্গিরা। তার পর থেকে শহরের আড়াই লক্ষ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে দিয়েছে তারা। প্রকাশ্যে কখনও মাথা কেটে খুন, কখনও সমকামী পুরুষদের ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে হত্যা, দাড়ি না রাখায় পুরুষদের বন্দি করা— নির্বিচারে অত্যাচার চালিয়েছে তারা। মহিলাদের উপরে নির্যাতনের মাত্রাও চড়েছে পাল্লা দিয়ে। গণধর্ষণ, জোর করে বিয়ে, যৌনদাসী হিসেবে বন্দি করা— বাদ যায়নি কিছুই। দু’বছরের ‘আইএস শাসনে’ বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে শহরটা। গত বছর অক্টোবর মাসে মসুল পুনদর্খলের জন্য অভিযানে নামার কথা ঘোষণা করেন আল আবাদি। আমেরিকার সঙ্গে মিলে এক লক্ষ সেনার জোট নামে এই অভিযানে।

Advertisement

আরও পড়ুন:পরমাণু যুদ্ধের দিকে ঠেলছেন ট্রাম্পই, দাবি

জয়ী: জাতীয় পতাকা গায়ে ইরাকি প্রধানমন্ত্রী হায়দর-আল-আবাদি। রবিবার ‘মুক্ত’ মসুলে। ছবি: এএফপি।

২০১৪ সালে এখানকার যে আল নুরি মসজিদ থেকে খিলাফতের ঘোষণা করেছিলেন আইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি, ইরাকি সেনার অভিযানের মুখে বিস্ফোরক ভরে সেটিও সম্প্রতি উড়িয়ে দিয়েছে জঙ্গিরা। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, খিলাফতের দিন শেষ। গত সপ্তাহেই আল নুরি মসজিদ সংলগ্ন হেলানো মিনারের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তুলেছিলেন ইরাকি সেনা, ঠিক সেখান থেকেই শেষ বার প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল বাগদাদিকে।

কিন্তু আনন্দের মধ্যে মিশে থাকা উদ্বেগের কাঁটাও বিঁধছে। সব জঙ্গি কি নিকেশ হলো? অনেকেরই আশঙ্কা, যারা খতম হয়নি বা ধরা পড়েনি, তারা অস্ত্র ফেলে সেঁধিয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষের ভিড়ে। মসুলের স্থানীয় কাউন্সিলের সদস্য জুহেইর হাজিম আল-জিবৌরি বলছেন, ‘‘এর জন্য দাড়ি কাটতে, নিজেদের পোশাক পাল্টে ফেলতেও দ্বিধা করেনি ওরা!’’

শহরটা আবার কবে নিজের পায়ে দাঁড়াবে, সেই প্রশ্ন তো আছেই। তার চেয়েও বড় চিন্তা, আইএস এ বার কোন পথে বদলা নেবে, বলছেন সেনার অফিসাররাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন