কী আছে কপালে! সেনাবাহিনীর সঙ্গে আইএসের সংঘর্ষে ভিটেমাটি ছাড়তে হচ্ছে বহু ইরাকিকে। সোমবার মসুলের কাছে। — রয়টার্স
দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে জঙ্গিদের ট্যাঙ্কারটা। বাহিনীর দিকেই তাক করে আছে তার নল। ট্যাঙ্কারের পিছনে কেউ একটা রয়েছে। অথচ সশস্ত্র বাহিনী দেখেও পালাচ্ছে না। আশপাশের অন্য সব কিছুও যেন অস্বাভাবিক রকমের স্থির।
গত সপ্তাহে আইএসের হাত থেকে সদ্য দখল করা উত্তর মসুলের একটি গ্রামে অভিযান চালাতে গিয়ে এ সব দেখে প্রথমে খটকা লাগে যৌথ বাহিনীর। তবে কিছুটা এগোতেই আসল ব্যাপারটা বোঝা যায়। বাহিনী সূত্রের খবর, লোহা নয়, কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল ওই ট্যাঙ্কার, গাড়ি, অস্ত্র। তার সঙ্গে সঙ্গে রাখা ছিল ধবধবে সাদা দাড়ি লাগানো কালো রঙের বেশ কিছু মূর্তি। দূর থেকে দেখে জঙ্গি ঘাঁটি বলে ভুল হওয়াই স্বাভাবিক।
সূত্রের খবর, আইএসের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকেই উদ্ধার হয়েছে ওই কাঠের তৈরি একাধিক ট্যাঙ্কার। সঙ্গে হামভির আকারের বেশ কয়েকটি গাড়ি, যা লড়াইয়ের সময় সেনারা ব্যবহার করে থাকে। ট্যাঙ্কের পিছন থেকে যাকে উঁকি মারতে দেখা গিয়েছিল, উদ্ধার করা হয়েছে সেই মূর্তিও। বাহিনীর এক সূত্র বলেন, ‘‘কাছে গেলে পুরো খেলনার মতো দেখতে লাগছে। কিন্তু ট্যাঙ্ক ও অন্যান্য জিনিস যেভাবে বানানো হয়েছে, দূর থেকে দেখলে তা আসল বলেই ভুল হবে।’’ আইএসের এই কৌশল দেখে বাহিনীর মত, তাদের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্যই পরিকল্পনা করে এমন ছক কষেছে জঙ্গিরা।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মসুলকে জঙ্গিমুক্ত করতে অভিযানে নেমেছে ইরাক সরকার ও আমেরিকার যৌথ বাহিনী। মসুলকে চারপাশ থেকে ঘিরে এগোচ্ছে বাহিনী। আশপাশের বেশ কিছু গ্রাম ও শহরতলি নিজেদের দখলে নিতে পারলেও এখনও পর্যন্ত মসুলের মূল শহরে প্রবেশ করতে পারেনি তারা। সূত্রের খবর, কোনও নতুন জায়গায় আক্রমণ করার আগে সেখানে বিমান ও ড্রোন দিয়ে আগেভাগে নজরদারি চালাচ্ছে সেনা। সঠিক ভাবে জঙ্গিদের অবস্থান বুঝে নিয়ে তার পরেই সুযোগ বুঝে নির্দিষ্ট ওই সব জায়গাতে হানা দিচ্ছে। বাহিনী জানাচ্ছে, জঙ্গিদমনে মাটিতে যুদ্ধের সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিমানহানাও। আইএসের এই কৌশলে বাহিনীর বিমান হানায় কোনও প্রভাব পড়েছে কি না, তা এখনও অস্পষ্ট। বাহিনী যাতে মসুলের দিকে এগোতে না পারে, তাই দক্ষিণ মসুলের কাইয়ারায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে একটি গন্ধক কারখানা এবং বেশ কিছু তেল কূপে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল আইএস।
বাগদাদে মার্কিন বায়ুসেনার মুখপাত্র কর্নেল জন ডোরিয়ান বলেন, ‘‘আমরা একে বলি কৌশলগত ছলনা। এ ভাবে চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা আগেও হয়েছে। সে তুলনায় এটা কিছুই নয়।’’