নয়া ঠিকানায় পড়ে টলিউডের মন

এ দেশে এলেই পাওয়া যায় প্রাচীন সভ্যতার গন্ধ। পাওয়া যায় পাহাড়-সমু্দ্র-জলপ্রপাতের চোখ জুড়োনো লোকেশন। খরচটাও ইউরোপের অধিকাংশ দেশের তুলনায় কম। ভারতীয় টাকার নিরিখে ডলার-পাউন্ড-ইউরোর চেয়ে ঢের সস্তা টার্কিশ লিরা। এক লিরার দর এখন বাইশ টাকার মতো। সিঙ্গাপুর ডলারও এর চেয়ে দামি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৬ ০৩:১০
Share:

প্রতিরোধে একাই। আতাতুর্ক বিমানবন্দরের সামনে। ছবি: এপি।

এ দেশে এলেই পাওয়া যায় প্রাচীন সভ্যতার গন্ধ। পাওয়া যায় পাহাড়-সমু্দ্র-জলপ্রপাতের চোখ জুড়োনো লোকেশন। খরচটাও ইউরোপের অধিকাংশ দেশের তুলনায় কম। ভারতীয় টাকার নিরিখে ডলার-পাউন্ড-ইউরোর চেয়ে ঢের সস্তা টার্কিশ লিরা। এক লিরার দর এখন বাইশ টাকার মতো। সিঙ্গাপুর ডলারও এর চেয়ে দামি।

Advertisement

কথায় বলে, ‘টালা থেকে টালিগঞ্জ’। ইদানীং ব্যাপার যে রকম, প্রবচনটা খানিক পাল্টে ‘টালিগঞ্জ থেকে তুরস্ক’ বলাই যায়। সেই বছর চারেক আগে শুরু। তার পর থেকে বাংলা ছবির মিছিল লেগেই রয়েছে তুরস্কে। শনিবার সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা ও সংঘর্ষে প্রায় আড়াইশো মানুষের মৃত্যু নিয়ে দুনিয়া যখন তোলপাড়, কলকাতার স্টুডিওপাড়ায় তখন উদ্বেগ। কারণ, বিরসা দাশগুপ্ত পরিচালিত একটি ছবির গোটা শ্যুটিং ইউনিট এখন ইস্তানবুলে। বিরসারা অবশ্য মেসেজ-টুইটারে আশ্বস্ত করেছেন, তাঁরা নিরাপদে আছেন। কামাল আতাতুর্কের দেশে আরও ২০-২৫ দিন চলবে ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের এই ছবির শ্যুটিং।

এত দেশ থাকতে তুরস্কে এমন লম্বা শিডিউল কেন, সেই উত্তরটা গোড়াতেই রয়েছে। বাংলা থেকে এই নতুন লোকেশন-মৃগয়ায় প্রথম পাড়ি দেয় প্রযোজক-গোষ্ঠী এস কে মুভিজ। জিৎ-নুসরতকে নিয়ে বছর চারেক আগে ‘শত্রু’ ছবির শ্যুটিং হয়েছিল তুরস্কের তিনটি লোকেশনে। ভূমধ্যসাগরপারের পাহাড়ঘেরা শহর আনাতোলিয়া, ইউনেস্কো-চিহ্নিত ঐতিহ্যশালী জনপদ ক্যাপাডোশিয়া এবং চুনাপাথরের প্রাকৃতিক সৌধে ভরপুর পামুক্কালে-তে শ্যুটিং করেছিল বাংলা ছবির ইউনিট। সেই ছবির তরুণ প্রযোজক হিমাংশু ধানুকা বলেই দিচ্ছেন, ‘‘বাংলা ছবির জন্য নতুন-নতুন লোকেশন খুঁজে বার করা খুব জরুরি। প্রসেনজিতের ‘বিক্রম সিংহ’র জন্য জর্ডন, হিরণ-শ্রাবন্তীর ‘ভালবাসা ভালবাসা’র জন্য অস্ট্রিয়ায় গিয়েছিলাম। এর পরই তুরস্কের কথা মাথায় আসে! ওখানে শ্যুটিংয়ের খরচ বিলেতের অর্ধেক বলা চলে!’’

Advertisement

‘বাহুবলী’-খ্যাত কোরিওগ্রাফার শঙ্করাইয়া ডোরাইস্বামীর আবার মনে পড়ছে তুরস্কের দুর্দান্ত নৃত্যশিল্পীদের কথা। জিতের ওই ছবির সূত্রেই সে দেশে কাজ করেছিলেন তিনি। রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘শত্রু’র পর ফের তাঁর পরিচালনাতেই ‘বরবাদ’, জিতের ‘বস’, দেবের ‘লাভ এক্সপ্রেস’ ছবির শ্যুটিং হয়েছে তুরস্কে। বলিউড-যোগ অবশ্য তারও আগে। মণিরত্নমের ‘গুরু’-র ‘মাইয়া মাইয়া’ গানের দৃশ্যে ধরা পড়েছিল ইস্তানবুল-আনাতোলিয়ার প্রাচীন স্থাপত্য। ক্রমশ সলমন খানের ‘এক থা টাইগার’, ‘রেস-২’, ‘গেম’। এ দেশের ফিল্মরসিকের কাছে তুরস্ক আর অচেনা থাকেনি।

ধাক্কা খাওয়াটাও তাই হয়তো স্বাভাবিক। গত মাসে ইস্তানবুল বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের খবর পেয়েই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠেছিল ‘বরবাদ’-এর নায়ক বনি সেনগুপ্তের। শ্যুটিং করতে গিয়ে ওই তল্লাটেরই একটি হোটেলে ছিল গোটা ইউনিট। এই শনি-সকালেও ঘুম থেকে উঠে সেনা অভ্যুত্থানের খবর দেখেছেন। মন খারাপ হয়ে গিয়েছে আবার।

‘‘সমস্যাটা শুধু একটা সিনেমার বা দেশের নয়। নিরাপত্তাহীনতার বোধটা এখন সব দেশের, সব মানুষের’’— বলছিলেন পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। তুরস্কে বাংলা ছবির জন্য আকর্ষণীয় রসদ আছে, মানছেন তিনিও। কিন্তু এ-ও বলছেন, এই ধরনের ঘটনায় হোঁচট খাচ্ছে সেই ভাবনাগুলো। প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসান আবার বললেন বছর কয়েক আগেকার এক ভেস্তে যাওয়া শ্যুটিংয়ের কথা। তাঁর আক্ষেপ ‘‘বাঙালির প্রিয় ঋজুদার অ্যাডভেঞ্চারের গল্প নিয়ে আফ্রিকার বুরুন্ডিতে শ্যুটিংয়ের পরিকল্পনা অনেক দূর এগিয়েছিল। সে-দেশে রাজনৈতিক গোলমালে হঠাৎ সব ভেস্তে গেল।’’

তবে অনেকে এ-ও বলছেন, আজকের দুনিয়ায় একশো শতাংশ নিরাপদ লোকেশন বলে কিছু নেই। সিনেমারও তাতে কিছু যায়-আসে না। ২৬/১১-য় বলিউডের ‘স্পিরিটে’ ধাক্কা লাগেনি। রোজ রক্তাক্ত হচ্ছে ঘরের কাছে বাংলাদেশ। কিন্তু সে দেশের পরিচালকেরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন, এমন অভিযোগ নেই।

স্টুডিওপাড়ায় তাই শনিবার দিনভর চর্চায় রইল ‘টার্কিশ কফি’, ‘টার্কিশ বাথ’, ‘টার্কিশ ডিশ’, ‘টার্কিশ লোকেশন’। আর এক টুকরো শুভকামনা— শ্যুটিংয়ের পাট নির্বিঘ্নে চুকিয়ে ফিরে আসুক বন্ধুরা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন