লন্ডনে জগদ্ধাত্রী পুজোতে মাতল বাঙালি

পরের বছর আয়োজন হয় লন্ডন হ্যারোর জোরাষ্টৃয়ান সেন্টারে। দারুণভাবে সার্থক হয়ে ওঠা দ্বিতীয়বারের এই পুজোর আয়োন করছে ‘বিলেতে বাঙালি’। এই পুজোর প্রধান আয়োজক কিংশুক বসুর কাছে জানা গেল, অষ্টমীর সন্ধিপূজোর আতি থেকে শুরু করে তিনিন ধরে পেটপুরে ভোজন—সবই চলে।

Advertisement

সোমা ঘোষ চক্রবর্তী

লন্ডন শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ২২:০৭
Share:

টেমস তীরে স্বমহিমায় অবতীর্ণ।

শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন জগতকে যিনি ধারণ করেছেন তিনিই জগদ্ধাত্রী। এই দেবী, যিনি গোটা জগতকে ধারণ করেছেন তিনি যে বাংলা তথা ভারতের কাঁটাতারের সীমা অতিক্রম করে টেমস তীরে স্বমহিমায় অবতীর্ণ হবেন এতে আর আশ্চর্য কী!

Advertisement

তবু, প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে বিলেত ভূমিতে মা দুর্গার আগমন ঘটলেও, বিলেতেও বাঙালির প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয় লন্ডন ওয়াটফোর্ডে মাত্র দু’বছর আগে। কিন্তু প্রথম প্রচেষ্টাতেই মাত করেছেন আয়োজকরা। পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত শহর লন্ডনের শহুরে যাপন থেকে কিছুটা দূরে, নিরিবিলি সবুজে ঘেরা ওয়াটফোর্ডের একটি স্পোর্টস হলে আয়োজন করা হয়েছিল তিনদিনব্যপী এই মহাযজ্ঞ।

পরের বছর আয়োজন হয় লন্ডন হ্যারোর জোরাষ্টৃয়ান সেন্টারে। দারুণভাবে সার্থক হয়ে ওঠা দ্বিতীয়বারের এই পুজোর আয়োন করছে ‘বিলেতে বাঙালি’। এই পুজোর প্রধান আয়োজক কিংশুক বসুর কাছে জানা গেল, অষ্টমীর সন্ধিপূজোর আতি থেকে শুরু করে তিনিন ধরে পেটপুরে ভোজন—সবই চলে। সঙ্গে ছোটদের নিয়ে লিটল চ্যাম্প ট্যালেন্ট হান্ট ও তার গ্র্যান্ড ফাইনাল, গান-বাজনার আসর ইত্যাদি প্রভৃতি মিলে মিশে জমজমাট অথচ আন্তরিক এক উৎসবের পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছিল পুজো মণ্ডপে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ভারতকে সশস্ত্র ড্রোন দিলে যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়বে: তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ পাকিস্তানের

গত বারের মত এ বারেও থাকছে নানা অনুষ্ঠান। গোটা ইংল্যান্ড থেকে বাচ্চারা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে। তার সঙ্গে এই উৎসবের আঙিনায় ইংল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলের বাঙালিরা তাঁদের নিজস্ব প্রযোজনা নিয়ে যোগদান করতে সামিল হচ্ছে। নাচ, গান, শ্রুতিনাটক-সব মিলিয়ে একটা বিশাল আয়োজন।

পুরাণে বলা হয় মহিষাসুরের মৃত্যুর পর দেবতাকুলের মধ্যে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে এক বিরাট অহং সৃষ্টি হয়। দেবী মহামায়াকে ব্রহ্মা যখন সৃষ্টি করেন তখন দেবকুল নিজ নিজ অস্ত্র দ্বারা দেবীকে যুদ্ধ সাজে সজ্জিত করেন। বিজয়ের পরে প্রত্যেক দেবতার মনে হতে তাকে কেবলমাত্র তাঁর ক্ষমতার জোরেই মহিষাসুর বধ করা সম্ভব হয়েছে। ব্রহ্মা বুঝতে পারেন এই অহং হয়ে উঠবে দেবকুল বিনাশের কারণ। তিনি তখন যক্ষ রূপে দেবতাদের একে একে আহ্বান করেন এবং একটি ছোট তৃণকে ভূমি থেকে উৎপাটিত করে দেখাতে বলেন। দেবতারা অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন যক্ষের এই বালখিল্য আচরণ দেখে। বায়ু বলেন তিনি স্বয়ং হিমালয়কে নাড়িয়ে দিতে পারেন। অগ্নি বলেন তিনি ব্রহ্মান্ড জ্বালিয়ে দিতে সক্ষম। কিন্তু একে একে প্রত্যেক দেবতা চেষ্টা করলেন, কিন্তু বাস্তবে একজন দেবতাও তাঁদের সমগ্র শক্তিকে ব্যবহার করেও ওই তৃণটিকে উৎপাটিত করতে সক্ষম হন না। দেবতারা মাথা নত করে হার স্বীকার করতে বাধ্য হলেন এবং উপলব্ধি করলেন তাঁদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা।

তখন দেবী মহামায়া আবার জগদ্ধাত্রী রূপে অবতীর্ণ হন কারিন্দাসুরকে বধ করার জন্যে। কারিন্দাসুর এখানে অহংকারের প্রতীক। দেবতারা বুঝতে পারেন তাঁরা কেউই পরম শক্তির অধিকারী নন। পরম শক্তির অংশমাত্র। যেমন ক্ষমতাধর সামান্য মানুষ যখন নিজ অহং নিয়ে মত্ত হয় এবং নিজের ক্ষমতা নিয়ে নীরব বা সরব আস্ফালন করে, শেষ পর্যন্ত সেটাই তার বিনাশ বা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

মর্ত্যে জগদ্ধাত্রী আরাধনার মূল লক্ষ্য, মানুষের মন থেকে এই অহং বোধ বা ইগোকে নির্মূল করে মাতা জগদ্ধাত্রীর পায়ে সমর্পণ করা।

শুক্রবার সাতাশে অক্টোবর হ্যারোর মাটিতে উৎসবপ্রিয় বাঙালি আবার মেতে উঠবে, সেজে উঠবে জগদ্ধাত্রী পুজো তথা বিলেতে বাঙালির উৎসবের সাজে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন