কাঠমান্ডুর বিমানবন্দরে দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা-কাঠমান্ডুকে মেলাবে দিদি-বোনে।
রামায়ণের কাহিনি অনুযায়ী, নেপাল ও বিহারের মধ্যে দিয়ে যাওয়া কোশী বা কৌশিকির সঙ্গে গঙ্গার সম্পর্কটা দিদি ও বোনের। ভূগোল বলছে, তিব্বত থেকে উৎপত্তি হয়ে নেপালের মধ্যে দিয়ে বিহারে গঙ্গায় মিশেছে কোশী নদী। এ বার সেই কোশী-গঙ্গার জলপথ কাজে লাগিয়েই কলকাতা-কাঠমান্ডুর মধ্যে সংযোগ গড়ে তুলতে চাইছে নেপাল।
বুধবার প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে এই প্রস্তাব দিয়েছেন নেপালের উপ-রাষ্ট্রপতি নন্দবাহাদুর পুন। নেপালে ভারতের রাষ্ট্রদূত রঞ্জিত রাই বলেন, “নেপাল ও ভারতের মধ্যে আরও সংযোগ গড়ে তুলতে চাইছি আমরা। সড়কের পাশাপাশি রেল যোগাযোগ নিয়েও কথা হয়েছে। সেই আলোচনার মধ্যেই নেপালের উপ-রাষ্ট্রপতি এই প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “হুগলি, গঙ্গা ও কোশীর মাধ্যমে কলকাতার সঙ্গে কাঠমান্ডুর যোগাযোগ গড়ে তোলা সম্ভব।”
চিন যখন নেপালের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলে আরও প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে, সে সময় নেপালের এই প্রস্তাব নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন কূটনীতিকরা। তাঁদের যুক্তি, নেপালের নিকটতম বন্দর হল কলকাতা ও হলদিয়া। জলপথে পণ্য পরিবহণ হলে স্বাভাবিক ভাবেই তার খরচ কমে যায়। সে সুযোগ নিয়ে নেপালেরও আর্থিক উন্নতি সম্ভব। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যও বাড়ানো সম্ভব। এ দিন নেপালের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, ভারতের আর্থিক উন্নয়ন হচ্ছে, তার সঙ্গে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলিরও আর্থিক উন্নয়ন জরুরি। ভারতও সেটাই চায় এবং প্রতিবেশী দেশগুলিকে সাহায্য করতে চায়।
মদেশীয়দের অবরোধে সম্প্রতি ভারত থেকে পেট্রোলিয়াম পণ্য-সহ জরুরি জিনিসপত্র পাঠানো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার জেরেও বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরির কথা কাঠমান্ডুর নেতাদের মাথায় এসেছে বলেও নয়াদিল্লির কূটনীতিকরা মনে করছেন। বেসরকারি ভারতীয় সংস্থাগুলিই নেপালে সবথেকে বড় লগ্নিকারী। এই জলপথ গড়ে তুললে তাঁদের পক্ষেও সুবিধা হবে। ভারত থেকে নেপালে এখন বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি পণ্য রফতানি হয়। নেপাল থেকে ভারতে রফতানি হয় প্রায় সাড়ে তিন বাজার কোটি টাকার পণ্য। জলপথ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে সেই বণিজ্যও বাড়তে পারে।
নয়াদিল্লির কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, এতে ভারতের যেমন পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। তবে তার থেকেও বেশি জরুরি হল কোশী নদীতে বর্ষার সময় বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাঁধ তৈরি করে সারা বছর নাব্যতা বজায় রাখা। কিন্তু একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিষয়ে নেপাল ও ভারতের মধ্যে চুক্তি হলেও কাজের কাজ এগোয়নি। কলকাতা-কাঠমান্ডু জলপথ গড়ে তুলতে হলে তাই নেপালকেই অনেক কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন