জতুগৃহ স্কুল, কুয়ালা লামপুরে ঝলসে মৃত্যু হল ছাত্র-সহ ২৪ জনের

বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার রাজধানী শহর কুয়ালা লামপুরের একটি ইসলামি আবাসিক স্কুলে আগুন লেগে মৃত্যু হল ২৪ জনের। অধিকাংশই স্কুল-পড়ুয়া। মারা গিয়েছেন দুই শিক্ষকও।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কুয়ালা লামপুর শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:২৮
Share:

শোকার্ত: ছেলেকে হারিয়ে। কুয়ালা লামপুরের স্কুলের বাইরে বৃহস্পতিবার। ছবি: এএফপি।

গায়ের জোরে জানলার গ্রিলগুলো বেঁকানোর চেষ্টা করেছিল খুদে হাতগুলো। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আর্তনাদ করে গিয়েছিল বাঁচার আশায়।

Advertisement

‘‘কিন্তু ওই ছোট-ছোট হাতে কি লোহার গ্রিল বেঁকানো সম্ভব!’’ আক্ষেপ করে বলছিলেন এক স্থানীয় বাসিন্দা। তাই নিরুপায় হয়ে তাঁরই মতো অনেককে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখতে হয়েছে, ক্রমেই নিস্তেজ হয়ে পড়ছে প্রাণগুলো। আবাসিক স্কুলের উপরের তলা তখন আগুনের দুর্গ।

বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার রাজধানী শহর কুয়ালা লামপুরের একটি ইসলামি আবাসিক স্কুলে আগুন লেগে মৃত্যু হল ২৪ জনের। অধিকাংশই স্কুল-পড়ুয়া। মারা গিয়েছেন দুই শিক্ষকও।

Advertisement

ভোর পৌনে ছ’টা নাগাদ আগুন লাগে স্কুলের তিন তলায়। বেশির ভাগ ছাত্র তখনও বিছানা ছাড়েনি। ঘুম জড়ানো চোখে যত ক্ষণে তারা টের পায় আগুন লেগেছে, পরিস্থিতি হাতের বাইরে। এক তলা থেকে উপরে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আগুনে। ফলে নীচ থেকে কেউ উপরে উঠতে পারেনি। ও দিকে তিন তলার ডর্মেটরিতে একটি মাত্রই দরজা। সেটাও আগুন ও ধোঁয়ায় ঢেকে গেলে ছাত্ররা জানলার গ্রিল বেঁকিয়ে বেরোতে চেষ্টা করে। কিন্তু একটা জানলারই গ্রিল ভাঙা গিয়েছিল। তাই জনা তেরো ছাত্র বেঁচে গিয়েছে। বাকিরা দমবন্ধ হয়ে মারা যায়।

কুয়ালা লামপুরের ‘পেত্রোনাস টুইন টাওয়ার’ থেকে ১৫ মিনিটের দূরত্বে ‘দারুল কোরান ইত্তিফাকিয়াহ’ নামে স্কুলটি। মূলত ধর্মগ্রন্থ পড়তে শেখানো হয় ওই আবাসিক স্কুলে। অগ্নিকাণ্ডে যখন স্কুলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষা দফতর জানিয়ে দিয়েছে, এটা তাদের দায়িত্ব নয়। ইসলামি স্কুলগুলোর দেখাশোনার ভার ধর্মীয় সংগঠনের হাতে। মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদির কথায়, ‘‘২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৩১টি স্কুলে আগুন লাগল। স্কুলগুলো নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও নিয়মনীতি মানছে না বলেই এই অবস্থা।’’ হামিদির দাবি, নিশ্চয় এই স্কুলটিতেও যথাযথ অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না।

আরও পড়ুন: ৩৩ ঘণ্টার ‘দুঃস্বপ্ন’ কাটিয়ে গন্তব্যে বৃদ্ধ

তবে এ-ও অভিযোগ, যত ক্ষণে দমকলের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছয়, বাড়িটির ৯০ ভাগই আগুনের গর্ভে। এ প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে দমকলকর্তা সইমন জাহিদ জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে তাঁদের সন্দেহ মশা মারার যন্ত্র থেকে শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লেগেছিল। ‘‘বাড়িটার উপরের তলায় জানলার অংশ লোহার গ্রিলে ঢাকা। ভিতর থেকে সেই গ্রিল খোলা যায় না। ডর্মেটরির একমাত্র দরজাটি আগুনে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাচ্চারা জানলা দিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করে। কিন্তু গ্রিল দিয়ে আটকানো থাকায় ওরা বেরোতে পারেনি,’’ বলেন সইমন। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘যারা বহু চেষ্টায় ডর্মেটরির দরজা দিয়ে বেরোতেও পেরেছিল, তারা দু’তলার আপৎকালীন দরজা দু’টোর কাছে এসে আটকে যায়। বাড়ি সারাইয়ের জন্য বন্ধ ছিল ওই দরজা দু’টো।’’ সইমন জানান, ডর্মেটরির তিন জায়গায় স্তূপাকার হয়ে পড়েছিল বীভৎস ভাবে পুড়ে যাওয়া দেহগুলো।

ওই স্কুলেই পড়ত নরহায়াতি খালিদের ১১ বছরের ছেলে আমিন আশরাফ। এক দিন আগেই ছেলেকে দেখতে এসেছিলেন। অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছে আমিনেরও। কাঁদতে কাঁদতে তরুণী বলেন, ‘‘তিন মাস আগেই ওকে ভর্তি করেছিলাম এই নতুন স্কুলে। পরশু ওর পছন্দের চিকেন ফ্লস এনেছিলাম। বলেছিল, নতুন স্কুল ওর খুব ভাল লাগছে।’’ বছর চব্বিশের মহম্মদ আরিফ মাওয়ারদি স্কুলবাড়ির নীচের তলায় ঘুমোচ্ছিলেন। পড়ুয়াদের চিৎকারে ঘুম ভাঙে। বললেন, ‘‘খুব চেষ্টা করেছি। কিচ্ছু করা গেল না।’’

বাচ্চাদের আর্তনাদ শুনে ঘুম ভেঙে যায় ওই এলাকার এক বাসিন্দা হাজিনের। তাঁরই ছেলে দমকলে খবর দেন। হাজিন বলেন, ‘‘বাচ্চাগুলো কী কাঁদছিল! এত অসহায় লাগছিল, কিচ্ছু করতে পারলাম না।’’ আর এক প্রত্যক্ষদর্শী শাহরিলের কথায়, ‘‘বাচ্চাগুলো গ্রিলে লাথি মারছিল। অনেক চেষ্টা করেছিল বেরোনোর। এক বন্ধু আর আমি খুব চেষ্টা করেছিলাম ভিতরে ঢোকার। পারিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন