শনিবার বেজিংয়ে কুশনারের পারিবারিক ব্যবসার তরফে চিনা শিল্পপতিদের কাছে জানানো হল আহ্বান।
চিন ছাড়া গতি নেই, আবারও বুঝিয়ে দিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ধনকুবের জামাইয়ের পারিবারিক ব্যবসা! ভিসার টোপ দিয়ে টানল চিনা শিল্পপতিদের বিনিয়োগও!
মার্কিন মুলুকে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগের জন্য বেজিংয়ে গিয়ে শিল্পপতিদের ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেল। ধনী চিনা শিল্পপতিদের মধ্যে বিক্রিবাট্টা করা হল মার্কিন মুলুকে বিনিয়োগের জন্য ‘বিনিয়োগকারী ভিসা’ (ইনভেস্টর ভিসা)। যার পোশাকি নাম- ‘ইবি-৫ অভিবাসী বিনিয়োগকারী ভিসা’। মার্কিন মুলুকের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় কড়কড়ে ৫ লক্ষ ডলার বিনিয়োগে রাজি হলেই হাতে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই ভিসা। খুব লোভনীয় বলে আমেরিকায় এই ভিসাকে ‘গোল্ডেন ভিসা’ (সোনার ভিসা) বলা হয়। আর সেই ভিসাই কার্যত, বিনিয়োগের মূল্যে ‘বিক্রি’ করা হল ধনী চিনা শিল্পপতিদের কাছে!
এই ভিসা থাকলে অন্য যে কোনও দেশের শিল্পপতি, ব্যবসায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে, আমেরিকায় এমন কোনও সরকারি, বেসরকারি বা যৌথ প্রকল্পে পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারেন। তার বদলে ওই ভিসার সুযোগ নিয়ে অন্য দেশের সেই শিল্পপতি-ব্যবসায়ী তাঁর নিজের দেশ থেকে কর্মী এনে ওই মার্কিন প্রকল্পে নিয়োগও করতে পারেন। এই ভিসার সুযোগ অতীতেও নিয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ধনকুবের জামাই জারেড কুশনারের পারিবারিক রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এক সময় মার্কিন মুলুকে ছিলেন ওই রিয়েল এস্টেট ব্যবসারই ‘লর্ড’। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি পুরোপুরি কার্যকর হলে ‘ইবি-৫ অভিবাসী বিনিয়োগকারী ভিসা’ নিয়েও দেখা দেবে গভীর অনিশ্চয়তা।
সেই অনিশ্চয়তার আগাম আভাস পেয়েই সম্ভবত, বেজিংয়ে পৌঁছে গেলেন মার্কিন ধনকুবের জারেড কুশনারের পারিবারিক ব্যবসার প্রতিনিধিরা। তাঁদের ‘প্রাইম টার্গেট’ ছিল চিন। আর চিনের খুব ধনী, সমৃদ্ধশালী শিল্পপতি, ব্যবসায়ীরা। ধনী চিনা শিল্পপতিতে জমজমাট বেজিংয়ের রিৎজ-কার্লটন হোটেলের বলরুমে কয়েক ঘণ্টা ধরে স্লাইড শো দেখিয়ে আর প্রেজেন্টেশন দিয়ে হোয়াইট হাউসের অন্যতম উপদেষ্টা জারেড কুশনারের বোন নিকোলে কুশনার শনিবার নিউ জার্সিতে রিয়েল এস্টেট প্রকল্পগুলিতে লক্ষ-কোটি ডলার পুঁজি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। চিনা শিল্পপতিদের বুঝিয়েছেন, ওই সব প্রকল্পে পুঁজি বিনিয়োগ করলে কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে, আয়করে কোথায়, কতটা ছাড় পাওয়া যাবে।
কেন তড়িঘড়ি ওই সব প্রকল্পে চিনা শিল্পপতিদের বিনিয়োগ করা প্রয়োজন, তাও বুঝিয়েছেন কুশনারের পারিবারিক রিয়েল এস্টেট ব্যবসার প্রতিনিধিরা।
অভিবাসীদের জন্য দরজা বন্ধ করতে গিয়ে মার্কিন মুলুকের রিয়েল এস্টেট ব্যবসার ধনকুবেরদেরই কিছুটা দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ট্রাম্প-কার্ডই (অভিবাসন নীতি) হয়তো এ বার ‘ব্যাক ফায়ার’ করতে চলেছে আমেরিকার রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে! স্বাভাবিক ভাবেই ওই ব্যবসায় জড়িত মার্কিন ধনকুবের শিল্পপতিরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ‘সোনার ভিসা’র ‘সোনালি দিন’ কি এ বার ফুরোতে চলেছে?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক সময় আমেরিকায় যে ব্যবসার ‘লর্ড’ ছিলেন, সেই রিয়েল এস্টেট ব্যবসারই আরেক ধনকুবের, তাঁর জামাই হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা জারেড কুশনারের রিয়েল এস্টেটের পারিবারিক ব্যবসা কিন্তু সেই উদ্বেগটা গোপন রাখল না। তারা বুঝিয়ে দিল, শিল্পপতিরা আমেরিকায় পুঁজি বিনিয়োগ করতে গিয়ে যাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির ফাঁসে আটকে না যান, সেটাই চাইছে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার মার্কিন ধনকুবেররা। তাঁদের লক্ষ্য একটাই, তা হল; চিনা শিল্পপতিরা যাতে মার্কিন মুলুকে পুঁজি বিনিয়োগে উৎসাহ না হারান। তার জন্য কুশনারের রিয়েল এস্টেটের পারিবারিক ব্যবসার তরফে শনিবার চিনা শিল্পপতিদের বলা হয়েছে, তাড়াতাড়ি করুন। বিনিয়োগ করতে চাইলে, এখনই করুন। লক্ষ-কোটি ডলার বিনিয়োগ করুন। কোনও চিন্তা নেই। কিন্তু অযথা দেরি করবেন না। দেরি করলেই বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। নতুন অভিবাসন নীতি পুরোপুরি কার্যকর হলে, তখন নানা রকমের বাধা-বিপত্তি আসতে পারে। এখন বিনিয়োগ করলে সেই সব ঝুটঝামেলা নেই। যেহেতু আগের নীতিই আপাতত রয়েছে, বহাল তবিয়তে।
আরও পড়ুন- বয়স্কতম এভারেস্ট জয়ী হতে গিয়ে বেস ক্যাম্পেই মারা গেলেন বৃদ্ধ
‘সোনার ভিসা’র ‘সোনালি দিন’ ফুরোনোর অশনি সঙ্কেত পেয়ে ইদানিং কিছুটা মুষড়েই পড়েছিলেন চিনা শিল্পপতিরা। কারণ, অতীতে ওই ‘সোনার ভিসা’র সুযোগ নিয়ে বিদেশে প্রচুর অর্থ পাঠিয়েছেন চিনা শিল্পপতিরা, দেশের আয়কর আইনের ‘রক্তচক্ষু’ এড়াতে!
কুশনারের বোন এসে তাঁদের আশ্বস্ত করতেই শনিবার মার্কিন মুলুকের ইবি-৫ অভিবাসী বিনিয়োগকারী ভিসা ‘কেনা’র উৎসাহে জোয়ার এল চিনা শিল্পপতিদের মধ্যে!