আজ ফের ভোট

শেষ বেলার প্রচার ব্রিটেনে, ত্রিশঙ্কু বলছে সমীক্ষা

সব দলের নেতা শেষ বেলার প্রচারে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন জনতার কাছে। বিশেষজ্ঞদের চোখে, এ বারের ভোট অনেকটাই অননুমেয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

লন্ডন শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৫
Share:

প্রত্যয়ী: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বুধবার লন্ডনে। ছবি: রয়টার্স।

দিন ফুরোলেই ভোট। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময়ে সকাল সাতটা থেকে ভোট শুরু। শেষ হতে রাত দশটা। শুক্রবার সকাল থেকে বোঝা যাবে, ব্রিটেন এ বার কোন পথে হাঁটবে।

Advertisement

সব দলের নেতা শেষ বেলার প্রচারে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন জনতার কাছে। বিশেষজ্ঞদের চোখে, এ বারের ভোট অনেকটাই অননুমেয়। জনমতসমীক্ষায় অবশ্য এখনও কনজ়ারভেটিভ পার্টিকে এগিয়ে রাখা হচ্ছে। কিন্তু অনেকের মতে, লেবার পার্টিও পিছিয়ে নেই এ বার। তাই কনজ়ারভেটিভ পার্টির ভোট অন্য দলে চলে গেলে ত্রিশঙ্কু পার্লামেন্ট হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য পার্লামেন্টে ৩২৬টি আসন পেতে হবে কনজ়ারভেটিভ পার্টিকে। পার্লামেন্টের ৬৫০টি আসনে ভোট হচ্ছে আগামিকাল। মঙ্গলবার সন্ধ্যার এক জনমতসমীক্ষায় উঠে আসছে, ৩৩৯টি আসন পাবে কনজ়ারভেটিভরা (৪৩ শতাংশ ভোট), লেবাররা পাবে ২৩১টি আসন (৩৪ শতাংশ ভোট), লিবারাল ডেমোক্র্যাটরা ১৫টি আসন (১২ শতাংশ ভোট), গ্রিন পার্টি একটি আসন (৩ শতাংশ ভোট) এবং ব্রেক্সিট পার্টি ৩ শতাংশ ভোট পেলেও কোনও আসন পাবে না। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) ৪১টি আসন পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

কনজ়ারভেটিভরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কি না, সময় বলবে। কিন্তু এ সপ্তাহটা দু’টি ঘটনার জেরে তাদের জন্য খুব ভাল কাটেনি।

প্রথম ঘটনাটিতে রীতিমতো সমালোচনার মুখে পড়েছেন বরিস জনসন। সম্প্রতি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত চার বছরের একটি শিশুর ছবি দেখতে চাননি বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী। ছেলেটি চার ঘণ্টা ধরে লিডস হাসপাতালের মাটিতে কয়েকটা কোটের উপরে পড়েছিল। শয্যা না পেয়ে ও ভাবেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। বরিসকে সেই ভিডিয়ো দেখাতে যান এক সাংবাদিক। বরিস তা দেখতে না চেয়ে সাংবাদিকের ফোনটি কেড়ে নিয়ে নিজের পকেটে ভরেন। এই গোটা ঘটনাক্রম ভাইরাল হয়েছে। পরে সে ছবি দেখলেও সমালোচনা থামেনি বরিসের বিরুদ্ধে। বিরোধী লেবার পার্টি তো বলতে শুরু করেছে, কারও প্রতি কোনও সমবেদনাই নেই জনসনের।

পরিস্থিতি সামলাতে কনজ়ারভেটিভ পার্টি পরে জানায়, তাঁদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক হাসপাতালে ছেলেটিকে দেখতে গেলেও সেই সময়ে দলের এক শীর্ষ স্তরের সদস্যকে ঘুষি মারে বিক্ষোভকারীরা। তবে সংবাদমাধ্যমের দাবি, এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। তখন ফের অভিযোগ ওঠে, কনজ়ারভেটিভ প্রার্থীরা মিথ্যে প্রচার চালাচ্ছেন।

দ্বিতীয় ঘটনাতেও অভিযোগের নিশানায় বরিস। লন্ডন ব্রিজের সন্ত্রাসে নিহত জ্যাক মেরিটের বাবা বরিসের কড়া সমালোচনা করে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। যাতে তিনি বলেছিলেন, জ্যাকের মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছেন বরিস। জ্যাকের বাবা বলেন, তিনি কোনও অবস্থাতেই সেটা হতে দেবেন না। জ্যাকের মৃত্যুর পরে সব দায় লেবার পার্টির উপরে চাপিয়ে জনসন বলেছিলেন, তিনি জঙ্গিদের বন্দি করে রেখে চাবিগুলো বাইরে ছুড়ে ফেলে দেবেন।

তবে এই দুই ঘটনায় বরিসের ভাবমূর্তিতে কিছুটা প্রভাব পড়লেও তা তাঁকে খুব পিছিয়ে দেবে, এমনটাও বলা যাচ্ছে না।

কারণ লেবার পার্টির জেরেমি করবিনও দলনেতা হিসেবে ভোটারদের খুব আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পারেননি। যাঁরা ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেরই বিশ্বাসভঙ্গ হয়েছে। কারণ লেবার পার্টি ফের গণভোট করানোর কথা বলেছে। সে ক্ষেত্রে ব্রেক্সিটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। আর যাঁরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থেকে যাওয়ার পক্ষে, সেই অংশও মনে করছে, তাদের বিশ্বাস রক্ষা করা হয়নি। করবিন ইইউ-এ থেকে যাওয়ার মতো কোনও ভরসাও দেননি। এর পাশাপাশি ইহুদি-বিদ্বেষ তো লেবার পার্টির বড় সমস্যা। ব্রিটেনের প্রধান র‌্যাবাই জনতার উদ্দেশে লেবার পার্টিকে ভোট না দেওয়ার ডাক দিয়েছেন। ব্রিটেনে বসবাসকারী ভারতীয়রাও লেবার পার্টির উপরে এখন ক্ষুব্ধ। তাঁরা বলছেন, কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর থেকেই লেবার পার্টি ক্রমশ ভারত-বিরোধী, হিন্দু-বিরোধী হয়ে উঠেছে।

জনসন মিথ্যে বলছেন, ভরসা জোগাতে পারছেন না বলা হলেও ভোটাররা করবিনের উপরে আস্থা খুঁজে পাবেন, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। তাই ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে জনসনেরই পুনঃপ্রবেশ ঘটবে কি না, স্পষ্ট হবে এক দিনের ব্যবধানে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন