বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় ঘোষিত। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
আদালতকক্ষ থেকে বেরিয়ে সরকারপক্ষের আইনজীবী জানান, পলাতক হওয়ায় রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন না হাসিনা। রায়ের কপি ভারত সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল। অপর অভিযুক্ত প্রাক্তন পুলিশকর্তা আল-মামুন। কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমা প্রদর্শন করে তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হল।
হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। রায় ঘোষণা হতেই হাততালিতে ফেটে পড়ে আদালতকক্ষ। বিচারপতি সকলকে শান্ত হতে অনুরোধ করেন।
হাসিনাকে তিনটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করল আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল। এক, উস্কানি দেওয়া। দুই, হত্যার নির্দেশ এবং তিন, দমনপীড়ন আটকানোর ক্ষেত্রে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা।
বিচারপতি বলেন, ‘‘হাসিনা, আসাদুজ্জামান এখনও পলাতক। বার বার পরোয়ানা সত্ত্বেও তাঁরা আত্মসমর্পণ করেননি। তাঁদের বিরুদ্ধে ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। দু’জনেরই শাস্তি হওয়া দরকার। কোনও কোনও সাক্ষাৎকারে হাসিনা নির্দেশের দায় স্বীকারও করেছেন।’’
বিচারপতি বলেন, ‘‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হয়েছে। হাসিনা, আসাদুজ্জামান এবং আল-মামুন এর জন্য দায়ী। প্রাক্তন পুলিশকর্তা আল-মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন। এখনও হেফাজতে রয়েছেন। কী কী ঘটেছে, তিনি সবটাই জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি যা অপরাধ করেছেন এবং স্বীকার করেছেন, তা সর্বোচ্চ শাস্তির যোগ্য। রাজসাক্ষী হওয়ার কথা বিবেচনা করে আমরা তাঁর শাস্তি কমাব। কী শাস্তি, তা পরে জানানো হবে।’’
হাসিনা-সহ অভিযুক্তদের দোষ প্রমাণিত। ট্রাইবুনালের আইন অনুযায়ী তাঁরা শাস্তির যোগ্য, জানালেন বিচারপতি।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করল। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।
যে সমস্ত ফোনালাপ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে, তা এআই সহায়তায় প্রণীত নয়। রায়ের শেষ অংশ থেকে পড়ে শোনালেন বিচারপতি।
রায়ের শেষ অংশ থেকে বিচারপতি পড়ে শোনান, ‘‘ছাত্রদের কথা শোনার পরিবর্তে আন্দোলনকে অবহেলা করেছেন হাসিনা। আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকার বলে অপমান করেছেন।’’
হাসিনার পক্ষে আইনজীবী দাবি করেছেন, কোনও হেলিকপ্টার আন্দোলন ঠেকাতে ব্যবহার করা হয়নি। কাউকে হাসিনা অপমান করেননি। আন্দোলন দমনে নিজে সরাসরি যোগও দেননি। আন্দোলনকারীদের সংখ্যাই সরকারি হিসাবে ৮০০। তা হলে দেড় হাজার আন্দোলনকারীর মৃত্যু হল কী ভাবে? প্রশ্ন তুলেছেন হাসিনার আইনজীবী।
বিচারপতি রিপোর্টের অংশ পড়ে বলেন, ‘‘অপরাধের জন্য ক্ষমা চাননি হাসিনা। তাঁর অনুশোচনা নেই। বরং আধিকারিকদের এবং ট্রাইবুনালের কর্মীদের হুমকি দিয়ে গিয়েছেন।’’
চিকিৎসককে চার থেকে পাঁচ বার আবু সাঈদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বদলাতে বাধ্য করা হয়েছিল। না বদলালে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। কাছ থেকে একাধিক বার আবুকে গুলি করেছিল পুলিশ। রিপোর্ট থেকে পড়লেন বিচারপতি।
আন্দোলনরত ছাত্র আবু সাঈদ। —ফাইল চিত্র।
ক্ষমতায় থাকার জন্য সংগঠিত ভাবে হামলা চালানো হয়েছে। সেই অনুযায়ী নির্দেশ দিয়েছেন হাসিনা। বিভিন্ন রিপোর্টের অংশ পড়ে শোনাচ্ছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিচারপতি।
জুলাই আন্দোলনের সময় কাকে ফোনে কী আদেশ দিয়েছিলেন হাসিনা? ফোনালাপ পড়ে শোনাচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। অভিযোগ, তিনি হেলিকপ্টার, ড্রোন, মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। হেলিকপ্টার থেকে বোমাবর্ষণ করতে বলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘একটাকেও ছাড়ব না। রাজাকারদের ছাড়িনি। এদেরও ফাঁসি দিয়ে দেব। আমি বলে দিয়েছি।’’
টেলিফোনের বার্তায় শোনা গিয়েছে, রাজাকারদের মতো আন্দোলনকারীদেরও ফাঁসি দেওয়ার কথা বলছেন তিনি। বলছেন, ‘‘আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগই যথেষ্ট।’’ হাসিনার কথায় কাজ করেছেন আসাদুজ্জামানেরা।
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবন থেকে সাংবাদিক বৈঠকে ‘রাজাকার’ সংক্রান্ত হাসিনার বিতর্কিত মন্তব্য পাঠ করলেন বিচারপতি। একে ‘অসম্মানজনক মন্তব্য’ বলে উল্লেখ করা হল।
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে হাসিনার উপস্থিতিতে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা সত্ত্বেও তা ঠেকাতে পারেননি তিনি। এর দায় তৎকালীন প্রধানের উপরেই বর্তায়। আইনের ধারা পড়ে শোনাতে গিয়ে জানালেন বিচারপতি।