ভারতে চলছে ভোট। কেমন ভোট হয় অন্য দেশে?
general-election-2019-national

দলতন্ত্রে ঘোর আপত্তি দেশের শিক্ষিত সমাজের

ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি এবং পিপলস কাউন্সিল, এই দুই নিয়েই তৈরি ভিয়েতনামের আইনসভা। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান।

Advertisement

মি হোয়াং

হো চি মিন সিটি (ভিয়েতনাম) শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৫৪
Share:

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সাত দফা ভোট হবে সেখানে।

Advertisement

ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি এবং পিপলস কাউন্সিল, এই দুই নিয়েই তৈরি ভিয়েতনামের আইনসভা। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। ভিয়েতনামে নির্বাচনের মূল মন্ত্র চারটি। ভোট হবে সর্বজনীন। সবাই নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন, সকলে প্রত্যক্ষ ভাবে ভোট দিতে পারবেন এবং সেই ভোট হবে অত্যন্ত গোপনে। বাইরের কেউ তাতে কোনও ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না। গোটা প্রক্রিয়াই নিয়ন্ত্রিত হয় নির্বাচনী আইনের মাধ্যমে।

এ দেশের নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, যে কেউ, এমনকি সেনাবাহিনীর সদস্যেরাও ভোটে দাঁড়াতে পারেন। কারও ইচ্ছে থাকলে প্রার্থী হতে পারেন কোনও প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্য ছাড়াই। এটা অনেকটা ভারতের নির্দল প্রার্থীর মতো। কিন্তু প্রার্থী-তালিকায় নাম তুলতে গেলে একটু কাঠখড় পোড়াতে হয় বইকি। সব প্রার্থীকেই সর্বদলীয় জোট বা ‘ন্যাশনাল ফ্রন্টে’র সামনে বেশ কয়েক রাউন্ড পরীক্ষা দিতে হয়। স্থানীয় ভোটারদের মতামত এখানে গ্রাহ্য করা হয়। ন্যাশনাল ফ্রন্টের পর্যবেক্ষণের পরেই ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে কারা বসতে চলেছেন, সেই প্রার্থী-তালিকা চূড়ান্ত হয়।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এর পরেই শুরু হয় প্রার্থীদের আসল পরীক্ষা। প্রচার পর্ব। ন্যাশনাল ফ্রন্টই বিভিন্ন প্রার্থীর জন্য নানা ধরনের আলোচনা সভার আয়োজন করে। যে যেখানকার প্রার্থী, সেই সেখানকার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমও এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। তবে প্রার্থীরা চাইলে অন্য ভাবেও নিজেদের প্রচার করতে পারেন। নির্বাচনী বিধিতে সে নিয়ে কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তবে সেই প্রচার আইনানুগ হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব ন্যাশনাল ফ্রন্টের।

২০১৬ সালে শেষ নির্বাচন হয়েছে আমাদের দেশে। ২০২১ সালে পরবর্তী ভোট। শেষ ভোটে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির জন্য ৪৯৬ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। পিপলস কাউন্সিলে গিয়েছিলেন প্রায় সাড়ে তিনশো জন প্রতিনিধি।

তবে এ দেশে মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা বেশ কম। গত বারের নির্বাচনেও মাত্র ২৬ শতাংশ মহিলা প্রতিনিধি পেয়েছে আমাদের দেশ। তিনটি অঞ্চলে কোনও মহিলা প্রতিনিধিই নেই। মাত্র দু’জন প্রতিনিধি নির্দল ছিলেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বও গত বার ছিল বেশ কম। মাত্র ১৭ শতাংশ। তবে গত ভোটে সার্বিক ভাবে ভোটারদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল সে বার। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে আবার

বেশির ভাগই উচ্চশিক্ষিত। প্রায় ৯৮ শতাংশ প্রতিনিধির বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি রয়েছে।

তবে গোটা ভোট-প্রক্রিয়া নিয়ে দেশের শিক্ষিত সমাজের একটা বড় অংশের আপত্তি রয়েছে। আর আপত্তির বিষয় হল দলতন্ত্র। ভারতেও এই দলতন্ত্রের রাজত্ব চলে বলেই শুনেছি। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বা পিপলস কাউন্সিলে যাঁরা প্রতিনিধিত্ব করতে যান, তাঁরা মূলত কোনও না কোনও দল দ্বারা পরিচালিত। সাধারণ মানুষ নিজের থেকে তাঁদের পছন্দ করতে পারেন না, বা কারও নাম মুছতেও পারেন না। ন্যাশনাল ফ্রন্টের মনোনীত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাঁদের বাছতে হয়। সেই তালিকায় যাঁদের নাম থাকে, দেশের সাধারণ মানুষকে তাঁদের উপরেই ভরসা করতে হয়।

লেখক: হো চি মিন সিটির ইউনিভার্সিটি অব ইকনমিকস অ্যান্ড ফিনান্স-এর শিক্ষিকা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন