প্রবাসে বসে দেশের ভোটের উত্তাপ উপভোগ করার একমাত্র মাধ্যম হল সোশ্যাল মিডিয়া আর অনলাইন পত্রপত্রিকা। তবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটে না। কিন্তু সুদূর বেজিংয়ে বসে এ ছাড়া আর কিছু করারও নেই। চিনের নির্বাচন প্রক্রিয়াও সরাসরি উপলব্ধি করার সুযোগ কম, বিশেষ করে প্রবাসীদের পক্ষে।
এ দেশেও নির্বাচন হয়, তবে তা আমাদের দেশের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিতে। উত্তেজনা, উদ্দীপনা বা নির্বাচন নিয়ে মাতামাতি এ দেশে নেই বললেই চলে। বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে ১৯৪৭ সালে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে ‘পিপলস রিপাবলিক অব চায়না’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তারপর প্রাথমিক দিকে জমির বণ্টন, সমাজতান্ত্রিক ব্যাবস্থার প্রতিষ্ঠা আর পরবর্তীকালে অর্থনৈতিক সংস্কারের মধ্যে দিয়ে চিন আজকের পৃথিবীর শক্তিধর অর্থনীতিগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় হয়ে উঠেছে। তা ছাড়া, জি-২০ গোষ্ঠীর একমাত্র কমিউনিস্ট সদস্য-ও চিন। ‘কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না’ (সিপিসি)-র তত্ত্বাবধানে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটাই সুনিয়ন্ত্রিত পথে পরিচালিত হয়।
জানেন কি, চিনের নির্বাচন প্রক্রিয়া হল একটি বিশেষ ধরনের ‘মাল্টিপার্টি কো-অপারেশন’ বা বহুদলীয় সহাবস্থান পদ্ধতি! বলা হয়, এই প্রক্রিয়া পশ্চিমের পাল্টিপার্টি ডেমোক্র্যাসি (বহুদলীয় গণতন্ত্র) বা বিশ্বের অন্য কিছু দেশের একমাত্রিক শাসনব্যবস্থার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কী ভাবে?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এখানে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। তবে আরও আটটি ‘নন কমিউনিস্ট ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’ নির্বাচন-পরবর্তী বিভিন্ন সিদ্ধান্তে কিছু কিছু ভূমিকা নেয়। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে আলোচনায় যুক্ত থাকে এই দলগুলি। এই আটটি পার্টি হল— রেভোলিউশনারি পার্টি ফর চাইনিজ কুয়োমিংতাং (আরসিকেকে), চায়না ডেমোক্র্যাটিক লিগ, চায়না জি গং পার্টি, জিয়ুসান সোসাইটি, চায়না ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন অ্যাসোসিয়েশন, তাইওয়ান ডেমোক্র্যাটিক সেল্ফ গভর্মেন্ট লিগ, চায়না অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোমোটিং ডেমোক্র্যাসি এবং চাইনিজ় পেজ়্যান্ট অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। এই দলগুলি সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। যেমন আরসিকেকে-র মূল উদ্দেশ্য হল চিনের আধুনিকীকরণ এবং তাইওয়ানের সংযুক্তি, আবার চায়না ডেমোক্র্যাটিক লিগের সদস্যরা আসেন শিক্ষা, বিজ্ঞান, এবং প্রযুক্তিক্ষেত্র থেকে। কমিউনিস্ট পার্টি এবং এই আটটি দলকে নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘চাইনিজ় পিপলস পলিটিকাল কনসালটেটিভ কনফারেন্স’। তারা বছরে একবার বেজিংয়ে আলাপ আলোচনার জন্য বসে।
লেখক বেজিংয়ে কর্মরত বিজ্ঞানী