লন্ডন যদি স্বর্গ হয় এবং মমতা হন ঢেঁকি তা হলে কি বা স্বদেশ, কি বা বিদেশ! অতএব, মমতা তাঁর দৈনন্দিন অভ্যাসমতো হাঁটতে বেরোবেন, এটাই মোটামুটি প্রত্যাশিত ছিল। হলও তাই।
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে সেন্ট জেম’স কোর্ট হোটেলের ঘর থেকে লন্ডনের পথে নেমে আসেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। পরনে সেই সাদামাটা শাড়ি, পায়ে চিরাচরিত হাওয়াই চপ্পল। বাকিংহাম গেট থেকে বাকিংহাম প্লেস, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট— এ গলিও গলি, এ রাস্তা-ও রাস্তা হনহনিয়ে হন্টন। লন্ডনের শীতল আবহাওয়ায় ঘামের ক্লান্তি তাতে না হলেও মিনিট চল্লিশেক হেঁটে আসার পরে মমতা হিসেব কষে বললেন, ‘‘সকালেই ৬ কিলেমিটার হয়ে গেল।’’
নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি চিরকালই মমতার না পসন্দ। লন্ডনের রাস্তায় তো তিনি আরও স্বচ্ছন্দ। সাদা পোশাকের নিজস্ব দুই নিরাপত্তা অফিসার ছাড়া হাঁটার দলে বাকি সকলেই তাঁর পরিচিতজন। হাঁটতে হাঁটতে তাঁর সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় লন্ডন প্রবাসী কয়েক জন ভারতীয়ের। তাঁদের কেউ গুজরাতের, কেউ বা হায়দরাবাদের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হাতের নাগালে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসেন শুভেচ্ছা বিনিময় করতে।
হোটেলের কাছেই সুসজ্জিত সেন্ট জেম’স পার্কে চক্কর কেটে হাস-পায়রা দেখে মুখ্যমন্ত্রী খুব খুশি। ‘‘কী সুন্দর সাজিয়ে করেছে এরা!’’ লন্ডন শহরে রাস্তাঘাটের পরিচ্ছন্নতাও তাঁর চোখ এড়ায়নি। তিনি বলেছেন, আসলে, এটা কলকাতার মতো ঘিঞ্জি শহর নয়। নিম্নবিত্ত মানুষের সংখ্যাও কম। তাই এদের পক্ষে শহরে এই ধরনের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাও সহজ। সেই সঙ্গেই যোগ করেন, ‘‘তবে আমাদের কলকাতাও যে পরিচ্ছন্ন সুন্দর শহর হয়ে উঠছে এতে কোনও ভুল নেই। এত বড় সার্টিফিকেট শোনার জন্য মমতার সফরসঙ্গী মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় কিন্তু সেই মুহূর্তে সেখানে ছিলেন না। কী মিস! কী মিস!
ভিক্টোরিয়া স্ট্রিটে সার সার দোকানে চলছে বেচাকেনা। সেখানেও খনিক দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী। তারপর হাল্কা রসিকতায় বলেন, ‘‘আমাদের নিউমার্কেটেও এমন অনেক কিছু পাওয়া যায়।’’ হাঁটার পরে স্নেট জেম’স কোর্টের ঠিক উল্টো দিকে একটি কফি শপে সকলকে নিয়ে খানিক ক্ষণ আড্ডাও চলে। সেখানেই এসে যোগ দেন অর্থ ও শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং কয়েক জন শিল্পোদ্যোগী। বিকেলে দু’দেশের শিল্প প্রতিনিধিদের সামনে বক্তৃতা করার আগে তিনি আরও এক বার জানিয়ে দেন, তাঁর এই সফরকালে উভয় দেশের মধ্যে ২২টি মউ স্বাক্ষরিত হবে।
লন্ডনে পৌঁছেই ক্যামেরনের চিঠি পেলেন মমতা
দেখুন বিলেতে মুখ্যমন্ত্রীর মর্নিং ওয়াকের ছবি