মমতা-হাসিনা মুখোমুখি আজ, মোদীর আমন্ত্রণেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কলকাতায়

মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বৃহস্পতিবার বহরমপুরে সাংবাদিকদের জানান, ‘‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিন বার আমার দেখা হবে। দুপুরে ইডেনে, সন্ধ্যায় তাজ বেঙ্গল হোটেলে, তার পর আবার ইডেনে— সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৯ ০২:২২
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আজ শুক্রবার একান্ত বৈঠকে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রক জানায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে শেখ হাসিনার এই সফর। তবে মোদী নিজে থাকতে পারছেন না। এমনকি, আগে আসার কথা থাকলেও আসছেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

Advertisement

হাসিনার এ দিনের কলকাতা সফর মূলত ইডেনে ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যাচ উপলক্ষে। তবে হাসিনা-মমতার বৈঠক গোলাপি বলে ম্যাচের চেয়ে কম আকর্ষণীয় নয়। কারণ, তিস্তা চুক্তি-সহ ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক যে সব বিষয় এখনও অমীমাংসিত তার অনেকগুলিই পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত।

মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বৃহস্পতিবার বহরমপুরে সাংবাদিকদের জানান, ‘‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিন বার আমার দেখা হবে। দুপুরে ইডেনে, সন্ধ্যায় তাজ বেঙ্গল হোটেলে, তার পর আবার ইডেনে— সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে।’’

Advertisement

বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মিনিট কুড়ির সৌজন্য সাক্ষাতে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি সম্ভবত তুলছেন না হাসিনা। ওই সূত্রের মতে, তিস্তা নিয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছে ঢাকা। এ বিষয়ে সহমত তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে কয়েক মাস আগে হাসিনার দিল্লি সফরের সময়েও মোদী সরকার আশ্বাস দিয়েছে।

তিস্তা নিয়ে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর যে ভিন্নমত রয়েছে, হাসিনা সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল। মমতা বহু বার জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের ‘স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে’ কোনও চুক্তি তিনি চান না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। এ বারে সেই আন্তরিকতাকে আরও বাড়িয়ে তোলা তাঁর উদ্দেশ্য। গত বছর শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসেছিলেন শেখ হাসিনা। তখন হাল্কা চালে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বাংলাদেশের ইলিশ পাঠানোর কথা বলায় হাসিনা বলেছিলেন, ‘‘আপনি পানি দিন। আমিও ইলিশ পাঠাব।’’

তবে আপাতত সৌজন্যের আবহ রেখেই দুই নেত্রী কথা বলবেন বলে উভয় মহলেই খবর। তাই বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, তিস্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয় হাসিনা এই সফরে না-ও তুলতে পারেন। মমতাও এ দিন বলেন, ‘‘আমরা শেখ হাসিনাকে ভালবাসি। বাংলাদেশকে, বাংলার মানুষকে ভালবাসি। ভাষা, সংস্কৃতি, সভ্যতা— আমাদের সবই তো এক।’’

ঘরোয়া মহলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শুক্রবার তাঁর কলকাতা সফর হবে নিছক ক্রিকেটীয়, রাজনীতির কোনও মারপ্যাঁচ তাতে থাকবে না। ক্রিকেট-অন্ত-প্রাণ হাসিনার কথায়, ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেন্সে বাংলাদেশের জাতীয় দল টেস্ট খেলবে, এটা বিরাট ব্যাপার। সেই ক্ষণটিতে হাজির থাকার জন্য আমন্ত্রণ পাওয়া মাত্র তিনি হ্যাঁ বলেছেন।

তবে একটি বিষয়ে মমতার কাছে কিছু প্রস্তাব হাসিনা দিতে পারেন। তা হল, কলকাতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িগুলি এবং কলকাতায় স্বাধীন বাংলা সরকারের সদর দফতর বলে চিহ্নিত বাড়ির সংরক্ষণ। আগামী বছর শেখ মুজিবের জন্মশতবর্ষ। তাঁর ছাত্রজীবন যেমন এই কলকাতায় কেটেছে, প্রবাসী সরকারের রাজধানীও ছিল কলকাতার একটি বাড়িতে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চান, বাবার স্মারক ভবনগুলির সঙ্গে ওই বাড়িটিও সংরক্ষণ করে প্রদর্শনশালা করা হোক। এ বিষয়ে একেবারে মৌখিক ভাবে মমতার কাছে হাসিনা কিছু প্রস্তাব দিতে পারেন।

মমতার জন্য তাঁর প্রিয় হাল্কা রঙের জামদানি শাড়ি ও মিষ্টি নিয়ে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলার শাড়ি উপহার দেবেন মমতাও। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্যও পাঞ্জাবি এবং মিষ্টি আনছেন হাসিনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন