লিয়োনোরা
চার বছর আগে প্রেমিক মার্টিন লেমকে-র হাত ধরে ঘর ছেড়েছিলেন কিশোরী লিয়োনোরা। দু’জনেই জার্মান নাগরিক। লিয়োনোরার বয়স তখন মাত্র ১৫। দু’চোখে নতুন জীবনের স্বপ্ন। জার্মানি ছেড়ে সিরিয়ায় পালিয়ে এসেছিলেন ওঁরা। বিয়েও করেন। কিন্তু এই চার বছরের একটা দিনও আর পাঁচটা মেয়ের মতো কাটেনি মেয়েটির। কারণ তিনি আইএস জঙ্গির ঘরণী।
সম্প্রতি লিয়োনোরার স্বামীকে গ্রেফতার করেছে সিরিয়ার সেনা। জার্মানির সংবাদ সংস্থাগুলি সে খবর ফলাও করে ছেপেছে। তাদের দাবি, ২৮ বছরের মার্টিন প্রভাবশালী আইএস নেতা। বিদেশিদের জঙ্গি মতাদর্শে প্রভাবিত করতে মগজধোলাই করত সে। যদিও লিয়োনোরার দাবি, আইএসের প্রযুক্তিবিদ হিসেবে কাজ করত মার্টিন। কম্পিউটার, মোবাইল সারানো, যন্ত্রপাতি বানানো— কাজ বলতে এ সবই।
সিরিয়ায় মার্কিন সমর্থিত সেনা জোটের আক্রমণে আইএস এখন কোণঠাসা। মার্টিনের মতো নেতারা একে একে ধরা পড়ছে। একমাত্র ইউফ্রেটিস নদীর ধারে দার এজর প্রদেশে মাত্র চার বর্গকিলোমিটার এলাকাই আইএসের শেষ খুঁটি।
বাঘুয়েজ়ের শরণার্থী শিবিরে দুই সন্তানকে বুকে আঁকড়ে বসেছিলেন লিয়োনোরা। কোলেরটির বয়স বড়জোর দু’সপ্তাহ। ১৯ বছরের তরুণী ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে স্বামী, সিরিয়ায় নতুন সংসার, জার্মানিতে ফেলে আসা জীবনের কথা বলছিলেন।
সিরিয়ায় পালিয়ে আসার আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন মার্টিনের তৃতীয় স্ত্রী লিয়োনোরা। তিন বৌকে নিয়ে সিরিয়ার রাকায় সংসার পেতেছিল মার্টিন। রাকা তখন আইএসের ঘাঁটি। লিয়োনোরার দাবি, জঙ্গি দলে ভূমিকা ছিল না তাঁর। সংসারের কাজ নিয়েই থাকতেন।
২০১৭ সালে মার্কিন সেনা ও সিরিয়া ডেমোক্র্যাটিক বাহিনী (এসডিএফ)-এর সাঁড়াশি আক্রমণে রাকা ছাড়তে বাধ্য হয় আইএস। একের পর এক এলাকায় তারা পিছু হটতে শুরু করে। লিয়োনোরা বললেন, ‘‘তখন প্রতি সপ্তাহে ডেরা বদলে ফেলতে হত। অল্প জিনিস আর বাচ্চাদের নিয়ে আমরাও দলের সঙ্গে যেতাম।’’ এক সময়ে প্রাণের ভয়ে স্ত্রী-সন্তানদের ফেলে পালাতে শুরু করে অনেক জঙ্গি। ধরাও পড়ে অনেকে।
এমন কয়েক হাজার বন্দি বিদেশি জঙ্গিদের ফিরিয়ে নিতে ইউরোপের দেশগুলির কাছে আবেদন জানিয়েছে সিরিয়া সরকার। কিন্তু এখনও সাড়া মেলেনি। বাচ্চা-বুড়ো নিয়ে পথে বসেছে পরিবারগুলি। অন্যদের মতোই এত দিনে ভুল বুঝতে পারছেন লিয়োনোরাও। বললেন, ‘‘খুব বড় ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি জার্মানিতে নিজের বাড়ি ফিরতে চাই। ফিরে পেতে চাই আগের জীবনটা।’’