সন্ধানে: ফুটবল দলের খোঁজে উদ্ধারকারীদের তৎপরতা। মঙ্গলবার উত্তর তাইল্যান্ডে।ছবি: এএফপি।
জোরালো টর্চের আলোটা ঘোরাফেরা করছিল। ডুবুরিদের গলা গুহার দেওয়ালে লেগে ছিটকে পড়ছিল, ‘‘কেউ আছো? ক’জন আছো তোমরা?’’
প্রত্যুত্তরে একটা ক্ষীণ কন্ঠ শোনা গেল, দূর থেকে— ‘‘১৩ জন।’’
ভিতরে জমাট অন্ধকার। কেটে গিয়েছে দশ দিনেরও বেশি। খাবার নেই, পানীয় জল নেই। হড়পা বান এসে গুহার ভিতরটা শুধু থই থই। বাইরে লাগাতার বৃষ্টি।
গত শনিবার তাইল্যান্ডের থাম লুয়াং ন্যাং নন গুহায় ঢুকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল স্থানীয় কিশোর ফুটবল দল ‘ওয়াইল্ড বোর’-এর ১২ জন সদস্য ও তাদের ২৫ বছর বয়সী কোচ। তিনি ছাড়া প্রত্যেকেরই বয়স ১১ থেকে ১৩-র মধ্যে। তাদের ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন পরিজনেরাও। কিন্তু হাল ছাড়েনি উদ্ধারকারী দল। প্রবল বিপর্যয় মাথায় করে জলমগ্ন গুহায় ঢুকে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন তাইল্যান্ড সেনার ডুবুরিরা। হাত লাগিয়েছিল ব্রিটিশ ডুবুরি এবং মার্কিন সেনার উদ্ধারকারী দল। পাথর কেটে রাস্তা তৈরি করে গুহার ভিতরে ঢোকার চেষ্টা চলছিল।
মঙ্গলবার গুহার ভিতরে ঢুকতে সক্ষম হয় ব্রিটিশ দলটি। সেখানেই খোঁজ মেলে নিখোঁজ ১৩ জনের। দেখা যায়, একটি বড় পাথরের উপর গুটিসুটি মেরে বসে তারা। প্রত্যেকেরই গায়ে লাল জার্সি। মুখে টর্চের আলো পড়তেই চোখ ঝলসে ওঠে। সেই দৃশ্য ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
অল্প কয়েকটা কথা বিনিময় হতে জানা যায়, তারা সকলে এমনিতে অক্ষত রয়েছে। তবে দীর্ঘ অনাহারে অসুস্থ। উদ্ধারকারী দলের গলা শুনতে পেয়েই তারা জিজ্ঞেস করে, ‘‘আমরা বেরোতে পারি?’’ উদ্ধারকারী দল জানায়, ‘‘আজ নয়। আমরা আজ মাত্র দু’জন রয়েছি। এখানে প্রচুর জল, তোমাদের সাঁতার কেটে বেরোতে হবে। আমরা আরও অনেককে নিয়ে ফিরে আসছি।’’ হাত তুলে ডুবুরিরা ওদের বলেন, ‘‘তোমরা খুব সাহসী।’’
গুহার আশপাশে ক্যামেরা ও অডিয়ো রেকর্ডার বসিয়ে দিয়ে যখন তাঁরা বেরিয়ে আসছেন, এক খুদে ফুটবলার বলে ওঠে, ‘‘আমি খুব খুশি।’’ প্রত্যুত্তরে ডুবুরিদের গলাতেও আবেগ ঝরে পড়ে— ‘‘আমরাও’’।
তবে খোঁজ মিললেও ফুটবলারদের ঘরে ফেরাতে আরও খানিকটা সময় লেগে যাবে বলে জানাচ্ছেন ওই ব্রিটিশ ডুবুরি দলের সদস্য বেন রেমেনান্টস। তিনি বলেন, বাচ্চাদের অবস্থা স্থিতিশীল হলেও সাঁতার কেটে বাইরে বেরোনোর পক্ষে তারা বেশ দুর্বল। দশ দিনেরও বেশি কোনও শক্ত খাবার পেটে পড়েনি। কেবল দেওয়াল থেকে চুঁইয়ে পড়া জলটুকু ছিল ভরসা। ফলে দাঁড়াবার শক্তি নেই তাদের। আপাতত তাদের কাছে খাবার, জল ও ওষুধপত্র-সহ চিকিৎসকদের দল পৌঁছেছে।
শুধু শারীরিক অবস্থাও একমাত্র প্রতিকূলতা নয়, জানাচ্ছেন বেন। তাইল্যান্ডের সব চেয়ে দীর্ঘতম গুহাগুলির একটি এটি। গোলকধাঁধাও বলা যায়। তাই নৌবাহিনীর এই ধরনের উদ্ধার চালানোর মতো প্রশিক্ষণ নেই। ফলে দড়ি বেয়ে বেয়ে ব্রিটিশ ডুবুরি দলকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ফুটবল দলের কাছে পৌঁছতে হবে।
বিশেষজ্ঞ দল জানাচ্ছে, ওই গুহা থেকে জল পেরিয়ে বেরোতে গেলে স্কুবা ডাইভিং জানা প্রয়োজন। আটকে পড়া কিশোরদের মধ্যে ক’জন তা জানে, এবং জানলেও এই শারীরিক অবস্থায় কতটা তা করা সম্ভব, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। অন্তত আড়াই কিলোমিটার স্কুবা ডাইভ করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষককে গুহার ভিতরে পাঠানোর কথাও ভাবা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই বড় বড় পাম্প ব্যবহার করে জল বার করারও চেষ্টা হচ্ছে। তবে বিধি বাম! আবহাওয়া দফতর সূত্রে আগামী দু’দিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ফলে গুহা থেকে বাইরে বেরোতে এখনও তিন-চার দিন সময় লেগে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তাঁরা।