Israel Palestine Conflict

আবার এক রাতে গাজ়ায় নিহত ৫০০

গাজ়ার পাশাপাশি জ্বলছে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কও। ৭ অক্টোবর গাজ়া স্ট্রিপে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ইজ়রায়েলি সেনার হাতে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:২০
Share:

যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজ়া। ছবি: রয়টার্স।

মিনিটে মিনিটে কেঁপে উঠছে মাটি। শুধু বিমানহানা নয়, মানুষ-সহ ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইজ়রায়েলি ট্যাঙ্ক থেকে ছোড়া গোলা। ইজ়রায়েল জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজ়ায় হামাসের ২৫০টি ঘাঁটি নিশানা করেছিল তারা। গাজ়ার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, ৫০০-রও বেশি সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে গত রাতে। এই নিয়ে নিহতের সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়েছে আজ। এর মধ্যে ৩ হাজারের বেশি শিশু।

Advertisement

গাজ়ার পাশাপাশি জ্বলছে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কও। ৭ অক্টোবর গাজ়া স্ট্রিপে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ইজ়রায়েলি সেনার হাতে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্যালেস্টাইনি স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, আজও জালাজ়োন শরণার্থী শিবিরে ‘দখলদারের (ইজ়রায়েলি সেনার) গুলিতে’ ১৭ বছরের এক কিশোর প্রাণ হারিয়েছে।

গাজ়ায় প্রতিটি দিনই এখন এক রকম। ক্ষণে ক্ষণে বোমার আওয়াজ। চারপাশে ধ্বংসস্তূপ। খাবার নেই, পানীয় জল নেই, চিকিৎসার উপায় নেই। শুধু মৃত্যুভয় নিয়ে কোনও মতে বেঁচে থাকার চেষ্টা। দক্ষিণ গাজ়া থেকে পালিয়ে এসেছেন ফয়সাল শাওয়া। একটি ব্রিটিশ দৈনিককে তিনি বলেন, ‘‘শুধু আকাশপথে হামলা নয়, রাতভর ট্যাঙ্ক থেকে গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। কখনও কখনও সমুদ্রের দিক থেকে ধেয়ে আসছে গোলা। প্রতিটা রাত যেন আগের রাতের থেকেও ভয়াবহ।’’ ফয়সাল বলেন, ‘‘প্রতি মিনিটে ওরা লোক মারছে। ঘরের ভিতর লোকজন রয়েছে, ওরা সম্পূর্ণ বাড়িটাই বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিচ্ছে।’’

Advertisement

ছবি: রয়টার্স।

ইজ়রায়েলের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন কাতারের একটি সংবাদমাধ্যমের গাজ়ার প্রতিনিধি ওয়ায়েল আল-দাহদুর স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও নাতি। নুসেরাতে যে অঞ্চলে থাকছিল ওয়ায়েলের পরিবার, সেখানে এসে পড়ে বোমা। ৫৩ বছর বয়সি সাংবাদিক যখন এই খবর পান, তখন গাজ়া শহর থেকে তিনি রিপোর্টিং করছিলেন। একটি ভিডিয়ো ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে। তাতে দেখা যাচ্ছে, আল-আকশা হাসপাতালে কাঁদতে কাঁদতে ওয়ায়েল এক-এক করে সকলের মৃতদেহ আগলে ধরছেন। ছেলের রক্তাক্ত মৃতদেহের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে ওয়ায়েল প্রশ্ন করেন, ‘‘ওরা আমাদের সন্তানদের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে?’’ তখনও ওয়ায়েলের গায়ে সাংবাদিকদের জন্য তৈরি বিশেষ সুরক্ষা বর্ম চাপানো। মৃত্যুর আগে ওয়ায়েলের কন্যার কাতর আবেদন ছিল, “আমাদের বাঁচতে দিন। আপনারা কি জানেন গাজ়ায় কী ঘটছে?” ওয়ায়েলের কন্যা খুলৌদ ও পুত্র মাহমুদের ৪৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো ছড়িয়েছে। তাতেই খুলৌদকে ওই কথা বলতে শোনা গিয়েছে।

ইজ়রায়েলি হামলার জেরে গাজ়ায় ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে অন্তত ১০ লক্ষ মানুষ। ওয়ায়েলও তাই। নিজের বাড়ি ছেড়ে পরিবার নিয়ে নুসেরাতে একটি শরণার্থী শিবিরে উঠেছিলেন। সেখানেও পরিত্রাণ পেল না তাঁর পরিবার।

গাজ়ার প্রায় ১২টি হাসপাতাল বিদ্যুৎ, ওষুধ, স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। বাকি যেগুলি এখনও ধুঁকতে ধুঁকতে চলছে, তাতে জনসমুদ্র। খান ইউনিসে হাসপাতালের বাইরে তাবু খাটানো হয়েছে। সেখানে মৃতদেহ স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। নিহতদের পরিবার ওই তাবু থেকে দেহ চিহ্নিত করে শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালে শয্যা আর ফাঁকা নেই। বারান্দায় শুইয়ে রাখা হচ্ছে জখমদের। অপারেশন থিয়েটারগুলিতে প্রায় সবসময়ই অস্ত্রোপচার চলছে। ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা। যুদ্ধের বলি তাঁদের পরিবারও।

গাজ়ায় ইজ়রায়েলের হামলাকে সমর্থন জানিয়ে চলেছে আমেরিকা-সহ পশ্চিম। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভেটো দিয়েছে রাশিয়া ও চিন। হামাসের একটি প্রতিনিধি দল আজ মস্কোয় গিয়েছে। ইরানের উপ-বিদেশ মন্ত্রী আলি বাঘিরি কানিও মস্কো সফরে গিয়েছেন। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ইজ়রায়েলের উপর সংঘর্ষ বিরতির জন্য চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছে মস্কো। বাহরাইন, মিশর, জর্ডন, কুয়েত, মরক্কো, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি একত্রিত ভাবে একটি বিবৃতি দিয়েছে আজ। তারা জানিয়েছে, আত্মরক্ষার নামে আইন ভাঙা যায় না। প্যালেস্টাইনিদের অধিকার অস্বীকার করাও যায় না। যে ভাবে গাজ়া স্ট্রিপের বাসিন্দাদের বাসস্থানচ্যুত করা হচ্ছে ও শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, তারও নিন্দে করেছে আরব দেশগুলি।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ান আজও পশ্চিমি শক্তিদের এক হাত নিয়ে বলেন, ‘‘মানবাধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক আইনের কী হল? পশ্চিম এ বারে কিছু দেখবে না,

কারণ এ ক্ষেত্রে তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ হবে না। কেন? কারণ, যে রক্ত ঝরছে, সেটা মুসলিমদের রক্ত।’’ ইজ়রায়েল সফর বাতিল করেছেন এর্ডোয়ান। জানিয়েছেন, গত মাসে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসভায় ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে করমর্দন করেছিলেন তিনি। তার জন্য এখন অনুশোচনা হচ্ছে।

ও দিকে, হামাসের হাতে এখনও বন্দি কমপক্ষে ২২৪ জন ইজ়রায়েলি। তাঁদের মুক্তির দাবিতে আজ একটি সমাবেশ হয় জেনিভায় রাষ্ট্রপুঞ্জের দফতরের সামনে। ২০০টি চেয়ার পাতা হয়। প্রতিটি চেয়ারে আটকানো হয়েছিল এক অপহৃতের ছবি। চেয়ারের মাঝে মাঝে রাখা ছিল কিছু প্র্যামও। তাতে লাগানো হয়েছিল অপহৃত শিশুর ছবি। হামাসের একটি শাখা গোষ্ঠী আজ দাবি করেছে, ইজ়রায়েলের হামলাতেই অপহৃতদের মধ্যে অন্তত ৫০ জন আর বেঁচে নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন