চলছে ইতিহাসের সবচেয়ে গরম দশক, সামনে কী 

কোটি কোটি মানুষের জীবনযাপন নির্ভর করে যার উপর, সেই জলের নীচের বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন হয়ে পড়ছে। গত ১২ মাসে গ্রিনল্যান্ডে বরফ গলেছে অন্তত ৩২ হাজার ৯০০ কোটি টন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মাদ্রিদ শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৭
Share:

মাদ্রিদে চলছে রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু সংক্রান্ত বৈঠক।

জলবায়ু চুক্তিটা হয়েছিল প্যারিসে, ২০১৫ সালে। এ বছর পুরুলিয়াকেও টক্কর দিয়েছে সেখানকার গরম। গোটা দক্ষিণ ফ্রাল্সে জারি করতে হয়েছিল লাল সতর্কতা। বাকি অংশে কমলা।

Advertisement

ওই চুক্তির নিয়মকানুন ঠিক করতে বিশ্বের দেশগুলি এখন আলোচনায় বসেছে স্পেনের শহর মাদ্রিদে। এ বছরই যে দেশে গরমে অতিষ্ট হয়ে জলে নেমে তলিয়ে গিয়েছেন ১৭ বছরের তরুণ থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধ। এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে জার্মানিতেও। তাপপ্রবাহে গৃহহীন ব্যক্তির মৃত্যু দেখেছে ইটালি। ইউরোপ শুধু নয়, গরমে হাঁসফাঁস করেছে অস্ট্রেলিয়া, জাপানও। তবু তো এল নিনো হয়নি এ বছর। আগে এমন তাপপ্রবাহ দেখা যেত শতকে এক বার। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামীতে অনেক ঘন ঘন দেখা দেবে এমন তাপপ্রবাহ।

কারণটা কারও অজানা নেই। গরম হচ্ছে আমাদের এই নীল-সবুজ গ্রহ। আরও ঠিক করে বললে, আমরাই গরম করে তুলছি আমাদের একমাত্র আশ্রয়টিকে। কতটা? তার খতিয়ান দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ওয়র্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও)’। তাদের রিপোর্ট বলছে, প্রাক্-শিল্পযুগের (১৮৫০-১৯০০) থেকে পৃথিবী এখন ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি গরম। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানাচ্ছে, আগের তিনটি দশকই ছিল তার আগেরটির থেকে গরম। ‘গ্রিনহাউস’ গ্যাস নিঃসরণ ক্রমশ বেড়ে চলায় পৃথিবীর ইতিহাসে বর্তমান দশকই হতে চলেছে সবচয়ে গরম। এবং সবচেয়ে গরম তিনটি বছরের তালিকায় ২০১৯ থাকছে এক নম্বরে।

Advertisement

গ্রিনহাউস গ্যাসের ৯০ শতাংশ তাপ শুষে নেয় সমুদ্র। রেকর্ড করে ফেলছে তার তাপমাত্রাও। দেড়শো বছর আগে যতটা ছিল, সাগরের জলের অম্লতা এখন তার চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। কোটি কোটি মানুষের জীবনযাপন নির্ভর করে যার উপর, সেই জলের নীচের বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন হয়ে পড়ছে। গত ১২ মাসে গ্রিনল্যান্ডে বরফ গলেছে অন্তত ৩২ হাজার ৯০০ কোটি টন। যার ফলে সমুদ্রতলের গড় উচ্চতাও রেকর্ড করেছে এ বছর।

বিপদটা শুধু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নয়। বর্তমানের কোটি কোটি মানুষের বিপদ ডেকে আনছে জলবায়ু পরিবর্তন, জলস্তর বেড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা। ডব্লিউএমও-র রিপোর্ট বলছে, ২০১৯-এর প্রথম ছ’মাসে এক কোটিরও বেশি মানুষকে ভিটেমাটি ছেড়ে দেশের অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে। তার মধ্যে ৭০ লক্ষকে সরতে হয়েছে ঝড়-বন্যা-খরার মতো কারণে। চলতি বছরের শেষে ঠাঁইনাড়া হওয়া মানুষের সংখ্যাটা ২.২ কোটি ছুঁতে পারে। বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল হওয়া সত্ত্বেও উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির টানে ছুটছে মানুষ। জঙ্গল কেটে সাফ করছে। পুড়িয়েই চলেছে কয়লা, পেট্রোল, ডিজেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি। কৃষি কমাচ্ছে জীববৈচিত্র্য।

এরই মধ্যে মাদ্রিদে এখন ২০১৫-র প্যারিস জলবায়ু চুক্তির নিয়ম-কানুন স্থির করার কাজ চলছে। শিল্প-যুগের তুলনায় এই গ্রহের তাপমাত্রার বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অনেকটা নীচে রাখার রাস্তা খুঁজছে বিশ্বের দেশগুলি। সকলে অবশ্য নয়। নিকারাগুয়া ও সিরিয়া ওই চুক্তিতে সই করেনি। আর সই করেও জলবায়ু পরিবর্তন রোখার আর্থিক দায় নিতে অস্বীকার করে আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন প্যারিস চুক্তি থেকে সরে যাওয়া প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। যদিও সে দেশের বড় কিছু সংস্থা জানিয়েছে, তারা পাশেই আছে প্যারিস চুক্তির। তবে আলোচনায় সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। কাজ এগোচ্ছে না সে ভাবে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন নারী-পুরুষ আজ মাদ্রিদের পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন