Protest in Nepal

‘আমার বন্ধুর মাথা লক্ষ্য করে গুলি করল পুলিশ’! নেপালে ছাত্রযুব বিক্ষোভের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯

সম্প্রতি নেপাল সরকার ফেসবুক, হোয়াট্‌সঅ্যাপ, এক্স-সহ ২৬টি সমাজমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে প্রতিবাদে নামেন ছাত্র-যুবরা। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হন নেপালের সংসদ ভবনের সামনে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৩৫
Share:

ছাত্র-যুবদের বিক্ষোভে উত্তাল নেপাল। ছবি: রয়টার্স।

শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এমনই অভিযোগ তুলছেন নেপালের ছাত্র-যুব বিক্ষোভকারীরা। সোমবার সকাল থেকে দফায় দফায় ছাত্র-যুবদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। আহত আরও অনেকে। কী ভাবে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হিংসার চেহারা নেয়, তা বর্ণনা করতে গিয়ে এক বিক্ষোভকারী সংবাদ সংস্থা এনআইএ-কে বলেন, ‘‘চোখের সামনেই বন্ধুকে পুলিশের গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখলাম। তাঁর মাথায় গুলি লাগে।’’

Advertisement

সম্প্রতি নেপাল সরকার ফেসবুক, হোয়াট্‌সঅ্যাপ, এক্স-সহ ২৬টি সমাজমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে প্রতিবাদে নামেন ছাত্র-যুবরা। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হন নেপালের পার্লামেন্ট ভবনের সামনে। অভিযোগ, পার্লামেন্ট ভবনের সামনে ব্যারিকেড টপকে এগোতে গেলেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বেলা গড়াতেই পরিস্থিতি স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরিয়ে যায়। ছাত্র-যুবদের একাংশ ব্যারিকেড ভেঙে নেপালের পার্লামেন্ট ভবনে ঢুক‌ে পড়েন। প্রতিবাদীদের ছত্রভঙ্গ করতে শূন্যে গুলি ছোড়ে পুলিশ। ছোড়া হয় রবার বুলেটও।

পুলিশ প্রশাসনের তরফে শূন্যে গুলি ছোড়ার কথা বললেও বিক্ষোভকারীদের দাবি, পুলিশ তাঁদের লক্ষ্য করেই গুলি ছুড়েছে! আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ‘‘আমাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পুলিশ এগিয়ে আসতেই সহিংসতার চেহারা নেয়।’’ এক বিক্ষোভকারীর কথায়, ‘‘আমরা যত এগিয়েছি, ততই পুলিশের সহিংসতা দেখতে পেলাম। পুলিশ জনগণের উপর গুলি চালাচ্ছে, যা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মূলনীতির পরিপন্থী। যাঁরা ক্ষমতায় বসে আছেন, তাঁরা আমাদের উপর এ ভাবে কিছু চাপিয়ে দিতে পারেন না।’’

Advertisement

সমাজমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপই শুধু বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে না বলেই মত অনেকের। কারণ, নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক দিন ধরেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল। দেশে আর্থিক বৈষম্য নিয়েও ক্ষোভ বাড়ছিল ছাত্র-যুবদের মধ্যে। বিক্ষোভকারীদের একাংশের মতে, সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তাঁরা। সেই কারণে সরকার তাঁদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করছে।

এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘‘পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল। কিন্তু গুলিটা আমার ঘেঁষে বেরিয়ে যাওয়ায় রক্ষা পাই। আমার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধুটি রক্ষা পাননি। তাঁর গায়ে লাগে।’’ পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে থাকা বিক্ষোভকারীদের কথায়, ‘‘এখনও গোলাবর্ষণ থামেনি। পার্লামেন্ট ভবনের ভিতরে গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।’’ তাঁদের দাবি, ‘‘পুলিশ হাঁটুর উপরে লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। এমন করার কি অনুমতি রয়েছে পুলিশের?’’ খাতায়-কলমে এই প্রতিবাদের নেতৃত্বে আছে নেপালের ‘জেন জ়ি’, অর্থাৎ তরুণ প্রজন্ম। সোমবারের বিক্ষোভেও সামনের সারিতে দেখা গিয়েছে স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের।

গত ২৮ অগস্ট নেপাল সরকার জানিয়েছিল, সমাজমাধ্যমগুলিকে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে সরকারের খাতায় নাম নথিভুক্ত করাতে হবে। ৩ অগস্ট সেই সময়সীমা শেষ হয়। অধিকাংশ সমাজমাধ্যমই নেপালের সরকারি নির্দেশ মানেনি। ৪ অগস্ট ফেসবুক, এক্স, হোয়াট্‌সঅ্যাপ-সহ ২৬টি সমাজমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। দেশের যুবসমাজের মধ্যে ক্ষোভের আঁচ পেয়ে আগেই নেপালের নানা অংশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করেছিল সে দেশের সরকার। সোমবার সেই সিদ্ধান্তের জেরে হিংসাত্মক চেহারা নেয় নেপাল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement