নেতাজির দাঁত রাখা রয়েছে জাপানে! ‘চিতাভষ্ম’-এর পাত্রেই রয়েছে সোনায় বাঁধানো দাঁতটি! সেটির ডিএনএ পরীক্ষা করলেই প্রমাণ হয়ে যাবে ১৯৪৫ সালের বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছিল কি না।
এমনই তথ্য তুলে ধরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ব্রিটেনের নেতাজি সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইট।
আশিস রায়ের তৈরি করা ওই ওয়েবসাইট নেতাজি মৃত্যুরহস্য সম্পর্কে একে একে সামনে আনছে বিভিন্ন তথ্য। নরেন্দ্র মোদী গত ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সংক্রান্ত যে ১০০টি ফাইল প্রকাশ করেছেন, তার মধ্যে থাকা নানা তথ্যও তুলে ধরা হচ্ছে ওয়েবসাইটটিতে। রবিবার সেই ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, জাপানের রেনকোজিতে নেতাজির যে ‘চিতাভষ্ম’ রাখা রয়েছে, তার মধ্যে নেতাজির একটি সোনা দিয়ে বাঁধানো দাঁতও রয়েছে। ওয়েবসাইটটির প্রতিষ্ঠাতা আশিস রায় নেতাজি মৃত্যুরহস্যের সমাধানের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগেই দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। আজাদ হিন্দ ফৌজে নেতাজির সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা কর্নেল হবিবুর রহমানের ছেলে নইমুর রহমানকে উদ্ধৃত করে এই দাঁতের অস্তিত্ব তুলে ধরেছেন আশিস রায়। ১৯৪৫ সালের বিমান দুর্ঘটনার সময়ও হবিবুর নেতাজির সঙ্গেই ছিলেন বলে জানা যায়। ১৯৭৮ সালে হবিবুর রহমান মারা যান। আশিস রায় পরে ইসলামাবাদে গিয়ে প্রয়াত হবিবুর রহমানের ছেলে নইমুরের সঙ্গে কথা বলেন। নইমুর আশিসবাবুকে জানান নেতাজির দাঁতটির কথা। হবিবুর রহমান নিজের ছেলেকে জানিয়েছিলেন, নেতাজির দেহ শেষকৃত্যের জন্য চুল্লিতে ঢুকিয়ে দেওয়ার আগে সোনা বাঁধানো দাঁতটি খুলে নেওয়া হয়। শেষকৃত্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাপানি আধিকারিকরা দাঁতটি হবিবুরের হাতে তুলে দেন। চিতাভষ্ম নিয়ে তাইপেই থেকে টোকিও যাওয়ার পথে ওই দাঁত হবিবুর রহমান চিতাভষ্মের পাত্রের মধ্যেই রেখে দেন।
নইমুরের কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়ার পর আশিস রায় ১৯৯৫ সালে তা ভারত সরকারকে এবং ভারতের একাধিক রাজনীতিককে জানান। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাও, প্রধান বিরোধী দলনেতা অটলবিহারী বাজপেয়ী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, জনতা দল সভাপতি এস আর বোম্মাই এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক চিত্ত বসুকে চিঠি লিখে আশিস রায় এই দাঁতের অস্তিত্বের কথা জানিয়েছিলেন। নরেন্দ্র মোদী নেতাজি সংক্রান্ত যে গোপন ফাইলগুলি প্রকাশ করেছেন, তাতেও আশিস রায়ের এই চিঠির উল্লেখ রয়েছে। আশিস রায় ১৯৯৫ সালের সেই চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘‘চিতাভষ্মের পাত্রটিকে স্ক্যান করানো হলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে নইমুর রহমানের দাবির সত্যতা। অক্ষত দাঁতটির অস্তিত্ব প্রমাণিত হলেই সফলভাবে ডিএনএ পরীক্ষা সম্ভব।’’
আশিস রায়ের এই চিঠির প্রেক্ষিতে ভারতের তরফ থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল বলে কিন্তু জানা যায়নি। খবরও এত দিন সে ভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। শুধু নরসিমা রাও সরকার এই তথ্য জানত তেমনও নয়। বিজেপি, জনতা দল, সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের শীর্ষ নেতৃত্বকেও এই তথ্য জানানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কেন এত দিন এই খবর চাপা রইল, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।