নরেন্দ্র মোদী।—ফাইল চিত্র।
যতটা গর্জাল, বর্ষাল কই! ঘরোয়া ভাবে এ প্রশ্ন উঠছে সরকারেরই অন্দরে। পাকিস্তানের প্রভাব কাটিয়ে কাবুলের উন্নয়ন ঘটাতে হবে, এক সময়ে এ দাবিতে বিস্তর গর্জেছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট বলছে, ‘বর্ষণ’ তার ধারে কাছেও হয়নি। তাই সরকারের একাংশ মনে করছে, ইসলামাবাদ যদি এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে, তবে তা নয়াদিল্লির জন্য খুব একটা সুখকর হবে না।
এটা ঘটনা যে কাবুল নিয়ে ইসলামাবাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পাঞ্জা কষছে নয়াদিল্লি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের প্রাচীন বাণিজ্যপথটিকে ফিরিয়ে আনা, কাবুলের মাধ্যমে ইরান এবং পূর্ব ইউরোপে পৌঁছে যাওয়ার প্রশ্নে অন্তত বহু বিবৃতি দিয়েছে সাউথ ব্লক। মাঝে পাকিস্তান যাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তার জন্য কাবুল সরকারের সঙ্গে দৌত্য এমনকী নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলেছে সাউথ ব্লক।
গত সোমবারই দিল্লিতে ১৮টি দেশের উপস্থিতিতে আফগানিস্তানের উন্নতিকল্পে ‘হার্ট অব এশিয়া’ সম্মেলন হয়ে গেল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী হাসান সারোস। সম্মেলনে কাবুলের উন্নয়ন নিয়ে প্রতিশ্রুতির বান ডাকা হয়েছে ভারতের পক্ষ থেকে। কিন্তু সরকারেরই অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট অনুযায়ী পরিস্থিতি যথেষ্ট সঙ্গীন।
প্রথমত, বিরাট সাড়া জাগিয়ে ঠিক দু’মাস আগে শুরু হয়েছিল ভারত-আফগানিস্তান আকাশপথে বাণিজ্য করিডর। পাকিস্তানের ওয়াগা সীমান্তকে এড়িয়ে সরাসরি পণ্য কাবুলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এটিকে এক মাইলফলক উদ্যোগ হিসাবেই বর্ণনা করেছিলেন মোদী এবং আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। কিন্তু দু’মাসের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়েছে এই প্রকল্প। বলা হচ্ছে পণ্যপরিবহণকারী বিমানের অপ্রতুলতার জন্য আপাতত বন্ধ রয়েছে আদানপ্রদান। প্রয়োজনীয় সহায়ক পরিকাঠমো তৈরির কাজ এখনও বাকি রয়েছে বলে ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছেন সরকারি নেতৃত্ব।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক সূত্রে একে নেহাতই ‘গোড়ার দিককার সমস্যা’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা শুধু এই বিমান করিডরটি অচল হয়ে থাকাই নয়। জানা গিয়েছে, আফগানিস্তানের প্রকল্পগুলির জন্য ভারত মোট ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থ সাহায্যের কথা ঘোষণা করলেও, এখনও পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও ছুঁতে পারেনি। প্রায় এক দশক আগে যে সব প্রকল্পগুলি চিহ্নিত হয়েছিল, সেগুলি সবে মাত্র সম্পূর্ণ হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে কাবুলের সংসদ ভবন নির্মাণ, জারাংজ-দেলারাম সড়ক, হেরাট বাঁধ তৈরির মতো কয়েকটি প্রকল্প।
ছাবাহার বন্দর ব্যবহারের প্রশ্নে আফগানিস্তান, ইরানের সঙ্গে যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তিটি হওয়ার কথা সেটিও বিশ বাঁও জলে। ইরান এখনও ওই চুক্তিতে দস্তখত করেনি। ছাবাহার বন্দর থেকে আফগানিস্তান সীমান্তের জাহেদান অঞ্চলে ভারতের রেললাইন গড়ার কাজ বকেয়া পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। ২০১৫ সালে উদ্বোধন হওয়া ভারত-আফগানিস্তান-পাকিস্তান-তুর্কমেনিস্তান গ্যাস পাইপ লাইন বাস্তবায়িত করার জন্য নয়াদিল্লি এবং কাবুলের কোনও যৌথ তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে না। সিকিভাগ কাজও তাই এগোয়নি।