‘যদি কিছু ঘটে, ছেলেকে তো আর দেখতে পাব না’

প্রথমটায় কিছু বুঝতে পারিনি। কে যেন বলল, কাছেই মসজিদে নাকি সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে।

Advertisement

শর্মিষ্ঠা বসু, হোটেলের কর্মী

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৯ ০২:২১
Share:

আমরা যেখানে থাকি, সেই লিনউডে হামলা হয়েছে। ছেলের স্কুলের সামনেও হামলা হয়েছে। ছবি: এপি।

তখন দুপুর ৩টে হবে। ক্রাইস্টচার্চ শহরে যে হোটেলে আমি হাউজ়হোল্ড অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ করি, সেখানেই ছিলাম। হঠাৎই খানিকটা দূর থেকে ফটফট শব্দ।

Advertisement

প্রথমটায় কিছু বুঝতে পারিনি। কে যেন বলল, কাছেই মসজিদে নাকি সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে। হোটেল থেকে মোটে মিনিট তিনেকের পথ। মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। কে কী করবে, কোথায় যাবে, ভেবে‌ পাচ্ছিল না।

জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখি, রাস্তায় লোকে ভয়ে ছোটাছুটি করছে। গুলির শব্দটা যেন এই দিকেই এগিয়ে আসছে! তখনই সরকারের থেকে জানানো হল, কেউ যেন রাস্তায় না বেরোয়। আমাদের চুপটি করে বসে থাকতে বলা হল।

Advertisement

আমি নদিয়ার বীরনগরের মেয়ে। শ্বশুরবাড়ি কলকাতায়। ভোটের সময়ে গন্ডগোল দেখেছি। কিন্তু এ জিনিস কখনও দেখিনি। আমার স্বামী কৌশিক বসু এই শহরেরই একটি রেস্তোরাঁর ম্যানেজার। ছেলে ক্রাইস্টচার্চ ইস্ট স্কুলে ক্লাস সিক্সে পড়ে। স্কুল ছুটির সময় হয়ে গিয়েছে। ওর বাবা গিয়েছে আনতে। বাড়ি থেকে বেরনো পর্যন্ত ফোনে কথা হয়েছিল। তার পর আর যোগাযোগ করতে পারছিলাম না।

শহরে সব বন্ধ। শুধু হুশ-হুশ করে পুলিশের গাড়ি ছুটে যাচ্ছে। গুলির শব্দও চলছে। খবর পেলাম, আমরা যেখানে থাকি, সেই লিনউডে হামলা হয়েছে। ছেলের স্কুলের সামনেও হামলা হয়েছে। ভয়ে বুক কাঁপছে! এক একটা মূহূর্ত যেন এক-এক ঘণ্টা। খালি ভাবছি, আমার যদি কিছু হয়ে যায় ছেলেটাকে আর দেখতে পাব না। ওকেই বা কে দেখবে?

ভয়ের চোটে দেশে আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে ফোন বা মেসেঞ্জারে যোগাযোগ শুরু করলাম। বাবা-মা আগেই গত হয়েছেন। নদিয়ায় থাকার মধ্যে এক মাত্র কৃষ্ণনগরে মাসতুতো দাদা অমিত শীল, ওকেও ফোন করলাম। কী জানি, ওদের সঙ্গে যদি আর কখনও কথা না হয়? তার আগেই আমায় যদি... মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখিনি কোনও দিন!

কত ক্ষণ এ ভাবে কেটেছে খেয়াল নেই। হঠাৎ দেখি ফোনটা বাজছে— কৌশিক! ক্রিনে ওর নামটা দেখে বুকে যেন বল এল। ফোন ধরছি, তখনও হাত কাঁপছে। কৌশিক জানাল, ওরা নিরাপদেই আছে। স্কুলের সামনে এক জায়গায় পুলিশ অভিভাবকদের ঘিরে রেখেছে। বাচ্চারাও নিরাপদে আছে। স্কুল থেকেই ওদের খাবার দেওয়া হয়েছে। অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই।

সন্ধে প্রায় ৬টা নাগাদ কৌশিক ফের ফোন করে জানাল, ছেলেকে স্কুল থেকে ছাড়ছে। তাকে বাড়িতে রেখে ও আসবে আমায় নিতে। যাক, তা-ও ভাল। আর ভয় নেই।

সন্ধে গড়িয়ে গিয়েছে। কৌশিকের সঙ্গে বাড়ি ফিরছি। তখনও দু’পাশে থমথম করছে ক্রাইস্টচার্চের রাস্তা।

অনুলিখন: সুদীপ ভট্টাচার্য

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন