International News

১৮ বছর পরে মেয়ে জানল ‘মা’ আসলে কে!

প্রথম চোখ খুলেই দেখেছিলেন মাকে। প্রথম মানুষের স্পর্শ পেয়েছিলেন মাকে ছুঁয়ে। টালমাটাল হাঁটায় যে দিন প্রথম পদস্খলন, সে দিনও এই মা’ই আবার দাঁড় করালেন সোজা করে। এ বার বড় হওয়া, হুটোপুটি, স্কুলপথে আইসক্রিম, উইকএন্ড ট্যুর, জন্মদিনের বার্বি— মেয়ে অ্যালেক্সিসের জগৎটা বেড়েই চলল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ ১৭:৪৪
Share:

প্রথম চোখ খুলেই দেখেছিলেন মাকে। প্রথম মানুষের স্পর্শ পেয়েছিলেন মাকে ছুঁয়ে। টালমাটাল হাঁটায় যে দিন প্রথম পদস্খলন, সে দিনও এই মা’ই আবার দাঁড় করালেন সোজা করে। এ বার বড় হওয়া, হুটোপুটি, স্কুলপথে আইসক্রিম, উইকএন্ড ট্যুর, জন্মদিনের বার্বি— মেয়ে অ্যালেক্সিসের জগৎটা বেড়েই চলল। মধ্যমণি তার মা, গ্লোরিয়া উইলিয়ামস। কিন্তু ১৮-র কোঠায় দাঁড়িয়ে সেই মেয়েকেই দেখতে হল মায়ের হাজতবাস। অপরাধ?

Advertisement

এখান থেকেই অ্যালেক্সিসকে একটু একটু করে জানতে হল ১৮ বছর আগের এক অতীতের কথা। শুনতে গল্পের মতো মনে হলেও আসলে যা কঠোর বাস্তব। বিশ্বাস করতে মন সায় না দিলেও এটাই যে ভয়ঙ্কর সত্য! মা আসলে তাঁর ‘মা’ নন, তাঁর অপহরণকারী! আচমকাই একটা ঝটকা। আচমকাই যেন বিস্বাদ হয়ে যায় আনন্দের দিনগুলো। তবু ভেঙে পড়েনি মেয়ে। জোর গলায় প্রতিবাদ ওঠে তাঁর জোরালো কণ্ঠে। ‘‘ছোট থেকে যা চেয়েছি মা দিয়েছে। মা কোনও অন্যায় করতে পারে না।’’

আরও পড়ুন: ৯ মাস ধরে ঋতুস্রাবের রক্ত দিয়ে আঁকলেন গর্ভস্থ ভ্রুণের ছবি

Advertisement

মা গ্লোরিয়ার সঙ্গে অ্যালেক্সিস

ঠিক কী হয়েছিল ১৮ বছর আগের সেই দিনটায়?

১৯৯৮-এর জুলাই। দক্ষিণ-পূর্ব আমেরিকার ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিল শহরের একটি হাসপাতাল। জন্ম হয়েছিল শানারা মবলি এবং ক্রেগ একিনের মেয়ে কামিয়া মবলে-র। কিন্তু আসল বাবা-মার কাছে খুব বেশি সময় কাটানোর সৌভাগ্য হয়নি ছোট্ট মেয়েটির। জ্যাকসনভিল ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের স্বাস্থ্যকর্মীর সাজে ঢুকেছিল এক অপহরণকারী। মা শানারা-র কোলে তখন সদ্যোজাত কামিয়া।

জ্যাকসনভিল ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টার।

শানারাকে ওই স্বাস্থ্যকর্মী বোঝান, কামিয়ার জ্বর হয়েছে, তার পরীক্ষানিরীক্ষা দরকার। এর পরেই মাত্র আট ঘণ্টা বয়সী কামিয়াকে নিয়ে উধাও হয়ে যায় ওই ছদ্মবেশী স্বাস্থ্যকর্মী। ওই মহিলাই আসলে গ্লোরিয়া উইলিয়ামস। আর সে দিনের নবজাতক কামিয়া মোবলে-ই এখন ১৮-র সদ্য যুবতী অ্যালেক্সিস মানিগো।

কোমিয়া চুরি যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছিল তদন্ত। গণমাধ্যমে সে সময় এই ঘটনা নিয়ে রীতিমতো তোলপাড়ও শুরু হয়েছিল। কিন্তু হাজার খোঁজাখুঁজির পরেও খোঁজ মেলেনি কামিয়ার। তদন্তকারী দলের তরফে জানানো হয়েছে, এই অপহরণের ঘটনাটি নিয়ে অন্তত আড়াই হাজার ‘কেস’ ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন তাঁরা। অবশেষে তার মধ্যে থেকে কয়েকটি ঘটনাকে বাছাই করা হয়। শানারা’র বয়ান অনুযায়ী গ্লোরিয়ার মুখের স্কেচও করানো হয় দক্ষ শিল্পীকে দিয়ে। সেই আঁকা ছবি নিয়েই এর পর পৌঁছনো হয় তদন্তের দ্বিতীয় ধাপে।

গ্লোরিয়া উইলিয়ামসের এই স্কেচটিই সাহায্য করেছিল পুলিশকে

গোপন সূত্রে খবর পাওয়া যায়, সাউথ ক্যারোলিনার ওয়াল্টারবরোর গ্লোরিয়া উইলিয়ামসের মুখের আদলের সঙ্গে মিল রয়েছে স্কেচটির। এর পরেই শুরু হয় খোঁজখবর। গ্লোরিয়া উইলিয়ামসই যে সে দিনের সেই ছদ্মবেশী স্বাস্থ্যকর্মী এবং অ্যালেক্সিস মনিগো-ই যে সেই সদ্যোজাত সে সম্বন্ধে নিশ্চিত হন তদন্তকারীরা। এর পরেই অ্যালেক্সিস ওরফে কামিয়ার ডিএনএ টেস্ট করা হয়। পরীক্ষার ফলাফলও জানান দেয়, শানারা আর ক্রেগের হারিয়ে যাওয়া সেই মেয়েই বর্তমানের অ্যালেক্সিস। গ্লোরিয়ার আরও দুই ছেলেমেয়ের সঙ্গেই এই ১৮ বছর ধরে বেড়ে উঠেছে অ্যালেক্সিস।

অ্যালেক্সিস মনিগো

এর পরেই আদালতের বিচারে ৫১ বছরের গ্লোরিয়া উইলিয়ামসের জেল হয়। শুক্রবার সাউথ ক্যারোলিনায় তাঁর নিজের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে উইলিয়ামসকে। কিন্তু আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী অ্যালেক্সিস যেহেতু প্রাপ্তবয়স্ক তাই কোন পরিবারের সঙ্গে সে থাকবে তার সিদ্ধান্ত নেবে সে নিজেই।

সাউথ ক্যারোলিনায় এই বাড়ি থেকেই শুক্রবার গ্রেফতার করা হয় গ্লোরিয়াকে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন