গভর্নর থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জে মার্কিন দূত। উত্থানের গল্পটায় ‘পারি না’ বলে কোনও শব্দ নেই। অন্তত তাঁর আত্মজীবনী তেমনটাই বলে। ‘কান্ট ইজ নট অ্যান অপশন: মাই আমেরিকান স্টোরি’— চার বছর আগে বইটা লিখেছিলেন সাউথ ক্যালোরাইনার দু’বারের গভর্নর নিকি হ্যালি। ট্রাম্পের ক্যাবিনেটে প্রথম ভারতীয়-বংশোদ্ভূত এবং প্রথম মহিলা-মুখ। ৪৪ বছর বয়সি নিকি এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জে মার্কিন দূতের দায়িত্বভার সামলাবেন।
নির্বাচন পর্বে তাঁকে তীব্র আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। প্রাইমারিগুলোর সময় সমর্থন করছিলেন রিপাবলিকান অন্য দুই প্রার্থী ফ্লোরিডার গভর্নর মার্কো রুবিও এবং টেক্সাসের সেনেটর টেড ক্রুজকে। মুসলিম অভিবাসীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষণা শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন নিকি। বলেছিলেন, এমন প্রস্তাব একেবারেই ‘অ-আমেরিকান।’ কিন্তু আজ সে সব ইতিহাস। নির্বাচনের একেবারে শেষ পর্বে ছবিটাও বদলে যায়। নিকি জানান, ভোটটা ট্রাম্পকেই দেবেন তিনি। আর প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে নিকি সম্পর্কে ট্রাম্পের মত, ‘‘দক্ষ মধ্যস্থ। উনি আরও এমন অনেক মধ্যস্থতায় সহায়ক হয়ে উঠবেন। বিশ্বমঞ্চে বড় নেত্রী হিসেবে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি।’’
২০১১-এ সাউথ ক্যারোলাইনার গভর্নর থেকে ২০১৬-এ রাষ্ট্রপুঞ্জে মার্কিন দূত। নিকির এই রাজনৈতিক সাফল্যে অভিভূত ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকরা। খুশিতে মেতেছে নিকির বাবা-মায়ের জন্মস্থান পঞ্জাব। নিকির এক আত্মীয়া কনওয়ালজিত সিংহ রানধাওয়া বলছেন, ‘‘পঞ্জাব ও ভারতের জন্য এটা একটা বড় সাফল্য।’’ ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে সাধুবাদ জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জও।
জন্ম সাউথ ক্যারোলাইনার ব্যামবার্গে। নাম রাখা হয়েছিল নিমরাতা রানধাওয়া। ১৯৯৬ সালে বিয়ে মাইকেল হ্যালির সঙ্গে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকরদের অনেকেই এখনও তাঁকে নিমরাতা নামেই ডাকেন। এক আত্মীয়া বলছিলেন, চার বছর বয়সে ভারতে এক বার এসেছিলেন নিকি। পঞ্জাবি বলতে পারতেন না। এর পরে ফের ভারতে আসা ২০১৪ সালে। অফিসের কাজেই। তখন বলেছিলেন, ‘‘আজকের দিনটা খুবই ব্যক্তিগত ও আবেগের দিন।’’ ধরা গলায় নিকির মুখে শোনা গিয়েছিল নিজের দেশের কথা, ‘‘পঞ্জাব দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। আমার মাতৃভূমি। ৪০ বছর পরে ফের এখানে এসে আমি গর্বিত।’’
জয়ের পরে আমেরিকায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম গভর্নর ববি জিন্দলের সঙ্গে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে নিকি ব্যতিক্রমী। তাঁকে বলা হয় ‘অভিবাসীদের কন্যা’। প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে শুধু ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের একটি অংশ রিপাবলিকান পার্টির কাছাকাছি চলে এল তাই নয়, ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে জোরদার করতেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। রিপাবলিকান নেতা সম্পত শিবাঙ্গীর কথায়, ‘‘এটা একটা মাস্টারস্ট্রোক। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারত এক জন বন্ধুকে পেল। নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের জন্য এবং অন্য বিষয়ে কথা বলতে এটা খুব জরুরি ছিল। ওঁর বিষয়ে একটা ভাল ব্যাপার হল, নিজের শিকড় বা ঐতিহ্য কিন্তু নিকি কখনও ভোলেননি।’’
কোনও দিনই পরিকল্পনা করে কিছু করেননি। নিকি নিজে তাই বলেন, ‘‘এর পরে কী, জানি না। কারণ দরজাগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়েই খুলে যায়।’’