২৩টি আসন কেড়ে নিল লেবার পার্টি

ম্যাজিক সংখ্যা নেই, জোটের পথে টেরেসা

সকালে মেডেনহেডে জয়ের পরে মে অবশ্য বলেছিলেন, ‘‘এই মুহূর্তে দেশে সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন স্থিতিশীলতা। আমার দলই তা নিশ্চিত করবে।’’ তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখ চুন হতে শুরু করে তাঁর। দলীয় সূত্রের খবর, কনজারভেটিভ এমপিদের মধ্যেও মে-কে দোষারোপ করা শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ০৩:১৮
Share:

অনিশ্চিত: ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে স্বামী ফিলিপের সঙ্গে কনজারভেটিভ নেত্রী টেরেসা মে। ছবি: এএফপি।

৩২৬-এর শিকে ছিঁড়ল না কোনও দলের ভাগ্যেই।

Advertisement

৩১৮টি আসন পেয়ে টেরেসা মে-র কনজারভেটিভ পার্টি বৃহত্তম দল হিসেবে এগিয়ে রইল ঠিকই, তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না। ফলে ত্রিশঙ্কু ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যে কোনও দলের ৩২৬টি আসন দরকার। আটটি আসনের ঘাটতি পূরণ করতে শেষমেশ উত্তর আয়ারল্যান্ডের দল ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির সমর্থন জোগাড় করেন মে। তারা পেয়েছে দশটি আসন। আয়ারল্যান্ডের দলটিকে সঙ্গে নিয়েই সরকার গঠন করার কথা ঘোষণা করেছেন কনজারভেটিভ নেত্রী।

গত কয়েক মাসে কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থন যে ভাবে কমেছে তাতে এই ফল খুব একটা অপ্রত্যাশিত ছিল না। ত্রিশঙ্কু পার্লামেন্ট গঠনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরেই মে-র পদত্যাগ চেয়েছেন লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। উত্তর ইসলিংটনের কেন্দ্র থেকে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পরে তিনি বলেছেন, ‘‘দেশের মানুষের প্রকৃত প্রতিনিধি যাঁরা, সরকারের গঠনের জন্য এ বার তাঁদের রাস্তা ছেড়ে দিন মে।’’ তাঁর মতে, কে ভোটে জিতেছেন তা ফলাফলেই ‘স্পষ্ট’। বাইরে থেকে কোনও সমর্থন ছাড়া সংখ্যালঘু সরকার গড়ার কথাও বলেছেন করবিন। লেবার নেতার কথায়, ‘‘আমরাও ব্রিটেনের তরফে বেক্সিট আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে রাজি।’’ রাজনৈতিক জটিলতা না কাটলে গ্রীষ্মের পরে ফের নতুন করে ভোটের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও টেরেসা মে-ই বা কত দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।

Advertisement

সকালে মেডেনহেডে জয়ের পরে মে অবশ্য বলেছিলেন, ‘‘এই মুহূর্তে দেশে সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন স্থিতিশীলতা। আমার দলই তা নিশ্চিত করবে।’’ তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখ চুন হতে শুরু করে তাঁর। দলীয় সূত্রের খবর, কনজারভেটিভ এমপিদের মধ্যেও মে-কে দোষারোপ করা শুরু হয়ে গিয়েছে। তাঁর দলের এক এমপি আনা সোব্রি বলেই ফেলেন, ‘‘মে এখন খুব বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছেন। কনজারভেটিভ পার্টির জন্যও খুব খারাপ সময়।’’ একাংশ আবার বলছেন, ‘‘মে তো এ বার সরে গেলেই পারেন।’’

আরও পড়ুন:সাংহাই গোষ্ঠীতে চিনই দাদা, তবু লাভ ভারতের

কনজারভেটিভ দলের এই ব্যাপক বিপর্যয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে ব্রেক্সিটের ভবিষ্যৎ। ব্রেক্সিট নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দর কষাকষির আগে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠাতা নিয়ে নিজের হাত শক্ত করতে চেয়েছিলেন মে। সে কারণেই এপ্রিলে তড়িঘড়ি ভোট এগিয়ে আনার কথা ঘোষণা করেন তিনি। নিজের সিদ্ধান্ত যে এ ভাবে ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে, নিঃসন্দেহে তা ভাবতে পারেননি মে। ফল প্রকাশের পরে দেখা গিয়েছে, জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে কনজারভেটিভের হাত থেকে ২৩টি আসন কেড়ে নিয়েছে বিরোধী দল লেবার। কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ৩১৮টি আসন। অর্থাৎ হিসেব অনুযায়ী পার্লামেন্টে ১২টি আসন হারিয়েছেন মে। ২৯টি অতিরিক্ত আসন ঝুলিতে ভরে লেবারের দখলে এসেছে ২৬১টি আসন। তা বাদে লিবারাল ডেমোক্র্যাট পেয়েছে ১২টি, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি ৩৫টি এবং ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি পেয়েছে ১০টি আসন।

কনজারভেটিভের ভোট-অঙ্কে ব্যাপক ধস নামায় নিজের দলের ভিতরেও ক্ষমতা ছাড়ার জন্য চাপের মুখে পড়তে হয়েছে মে-কে। যদিও প্রথম থেকেই সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন তিনি। সকাল সাড়ে বারোটা নাগাদ ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বেরিয়ে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করে সরকার গড়ার অনুমতি নেন। পরে বলেন, ‘‘আগামী ১০ দিনের মধ্যে সরকারের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক্সিট আলোচনার পথে হাঁটতে চলেছে ব্রিটেন। এর ফলে সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকবে আমাদের দেশ।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সকলে একসঙ্গে ব্রেক্সিটের প্রতিশ্রুতি পূরণ করব এবং আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এমন এক দেশ গঠন করব যেখানে কোনও মানুষ, কোনও সম্প্রদায় পিছিয়ে থাকবে না।’’ তাঁর বক্তব্য, একমাত্র কনজারভেটিভ পার্টিরই সরকার গড়ার ‘বৈধতা’ রয়েছে। ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্টের (ডিইউপি) সমর্থনে এক ‘সুরক্ষিত ব্রিটেনের’ আশ্বাস দিয়েছেন মে। বলেছেন, ‘‘বহু বছর ধরে আমাদের দুই দলের সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল। আশা করি ভবিষ্যতে একসঙ্গে ব্রিটেনের উন্নতি করবে পারব আমরা।’’ কনজারভেটিভ ও ডিইউপির মোট ৩২৯ জন এমপি থাকবেন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে।

বেক্সিট নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় আজ দাম কমে গিয়েছে পাউন্ডের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন