গৃহযুদ্ধে ক্লান্ত কলম্বিয়ায় শান্তির নোবেল

চুক্তি ভেস্তে গিয়েছে দিন পাঁচেক আগেই। গণভোটে বেঁকে বসেছেন কলম্বিয়ার সিংহভাগ নাগরিক। প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস তবু নাছোড়বান্দা। দেশে টানা ৫২ বছরের গৃহযুদ্ধে ইতি টানতে মরিয়া তিনি। আপাতত লাগাতার বৈঠকে আর ‘শান্তি মহড়ায়’ তার উপায় খুঁজছেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

অসলো শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০২
Share:

প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস। শুক্রবার। ছবি: রয়টার্স।

চুক্তি ভেস্তে গিয়েছে দিন পাঁচেক আগেই। গণভোটে বেঁকে বসেছেন কলম্বিয়ার সিংহভাগ নাগরিক। প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস তবু নাছোড়বান্দা। দেশে টানা ৫২ বছরের গৃহযুদ্ধে ইতি টানতে মরিয়া তিনি। আপাতত লাগাতার বৈঠকে আর ‘শান্তি মহড়ায়’ তার উপায় খুঁজছেন। আজ সান্তোসের সেই ইচ্ছেটাকেই কুর্নিশ জানাল নরওয়ের নোবেল কমিটি। শান্তিতে নোবেল পেলেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট।

Advertisement

আর সেই সঙ্গেই উঠে গেল এক ঝাঁক প্রশ্ন। যে শান্তিচুক্তিতে জনতারই সায় নেই, তার ‘বিফল’ কারিগর সান্তোসকে নোবেল দেওয়া কি কলম্বিয়াকে অপমান করা নয়? নোবেল কমিটির অবশ্য দাবি, এই সম্মান গোটা দেশেরই।

বাস্তব যদিও অন্য কথা বলছে। সরকার চাইলেও দেশের বামপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘দ্য রেভোলিউশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলম্বিয়া’ অর্থাৎ ফার্কের সঙ্গে এখনই রফায় রাজি নন কলম্বিয়ার মানুষ। ২ অক্টোবরের গণভোটে অন্তত তেমনটাই ইঙ্গিত। কলম্বিয়ার ৫০.০২ শতাংশ নাগরিক ভোট দিয়েছেন শান্তিচুক্তির বিপক্ষে। তাই এ মাস পর্যন্ত দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি থাকলেও, অশান্তির মেঘ কিন্তু সরছে না। যদিও নোবেল কমিটির বিশ্বাস, এই পুরস্কার নিশ্চিত ভাবেই কলম্বিয়ার শান্তি প্রক্রিয়াকে আরও পোক্ত করে তুলবে। ভিতটা তো তৈরি হয়েই গিয়েছে।

Advertisement

ফার্ক গেরিলা গোষ্ঠীর জন্ম ১৯৬৪-তে। একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অনড় ছিল দু’পক্ষই। মোড় ঘোরে ২০০৮-এ। দেওয়ালে পিঠ ঠেকতেই সমঝোতায় রাজি হয় বিদ্রোহীরা। মধ্যস্থতাকারী দেশ কিউবার রাজধানী হাভানায় শুরু হয় শান্তিপর্ব। সময়টা ২০১২। তখন সান্তোস-ই প্রেসিডেন্ট। টানা চার বছর চলে শান্তি-বৈঠক। তত দিনে অবশ্য বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘমেয়াদি এই গৃহযুদ্ধে মারা গিয়েছেন আড়াই লক্ষেরও বেশি। ঘরছাড়া হয়েছেন প্রায় ৭০ লক্ষ।

২০১৪-য় দ্বিতীয় বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হন সান্তোস। ফের শুরু হয় শান্তিপ্রক্রিয়া। তার পর চলতি বছরের অগস্টে যুদ্ধবিরতি এবং সেপ্টেম্বরের শেষে ঘটা করে চুক্তি সই করে দু’পক্ষ। ফের ছন্দ কাটে অক্টোবরের গণভোটে। আপাতত খারিজ শান্তিচুক্তি।

তা হলে উপায়? সান্তোসের মতো আশা জিইয়ে রাখতে চাইছেন ফার্কের শীর্ষনেতা টিমোলিওন হিমেনেজও। সূত্রের খবর, এ বারের মনোনয়ন তালিকায় তাঁরও নাম ছিল। কিন্তু টিমোলিওনকেও কেন পুরস্কৃত করা হল না— মন্তব্য করেনি নোবেল কমিটি। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সান্তোসের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে কমিটির মুখপাত্র বলেন, ‘‘কলম্বিয়ায় শান্তি ফেরানোর চেষ্টা আগেও হয়েছে। কিন্তু এতখানি পূর্ণাঙ্গ উদ্যোগ এ বারই প্রথম।’’ যুদ্ধে হতাহত দেশবাসীকেই আজ পুরস্কারটি উৎসর্গ করেন সান্তোস। প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ফার্ক নেতাও।

এ বছর শান্তিতে নোবেলের জন্য রেকর্ড সংখ্যক মনোনয়ন জমা পড়েছিল। মোট ৩৭৬ প্রতিযোগীর মধ্যে নাম ছিল ২২৮ জন ব্যক্তি এবং ১৪৮টি সংগঠনের। তালিকায় নাম ছিল জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল, সিরিয়ার ‘হোয়াইট হেলমেটস’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, পোপ ফ্রান্সিসেরও। শেষমেশ যদিও সম্মান আর এ বছরের পুরস্কারমূল্য (৮০ লক্ষ সুইস ক্রোনা বা প্রায় ৬.২ কোটি টাকা) পেলেন সান্তোসই।

আর কলম্বিয়া! নোবেল কমিটির দাবি, ‘‘এ বার শান্তি চাইবেন কলম্বিয়ার জনতাও। চুক্তির ধরন নিয়ে ওঁদের আপত্তি রয়েছে। শান্তিতে নয়।’’ কিন্তু দেশে নোবেল আর শান্তি আসা যে এক কথা নয়, এত দিনে তা হাড়েহাড়ে টের পেয়েছে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন। অসলো শান্তিচুক্তি নোবেল (১৯৯৪) এনে দিয়েছিল প্যালেস্তাইনি নেতা ইয়াসের আরাফত, ইজরায়েলের সদ্যপ্রয়াত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট শিমোন পেরেজ ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইতঝাক রবিনকে। কিন্তু শান্তি ফেরেনি দু’দেশে।

কলম্বিয়ার ভবিষ্যৎ কী? উত্তর খুঁজছেন সান্তোস নিজেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন