প্রয়াত পেরেজ, সুতো কেটে গেল ইতিহাসের

৯৩ বছর বয়সে মস্তিষ্কে স্ট্রোকের ফলে মারা গিয়েছেন এক শান্তির নোবেলজয়ী। আর তার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আর এক শান্তির নোবেলজয়ী বলছেন, ‘‘ইজরায়েলের নির্যাসটা ফুটে বেরোত তাঁর মধ্যেই। কিছু মানুষ থাকেন, যাঁরা ইতিহাসের ধারা বদলে দেন। শুধু কাজ দিয়ে নয়, তাঁরা আমাদের নৈতিক কল্পনাকেও বিস্তৃত করেন।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৭
Share:

শিমোন পেরেজ

৯৩ বছর বয়সে মস্তিষ্কে স্ট্রোকের ফলে মারা গিয়েছেন এক শান্তির নোবেলজয়ী। আর তার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আর এক শান্তির নোবেলজয়ী বলছেন, ‘‘ইজরায়েলের নির্যাসটা ফুটে বেরোত তাঁর মধ্যেই। কিছু মানুষ থাকেন, যাঁরা ইতিহাসের ধারা বদলে দেন। শুধু কাজ দিয়ে নয়, তাঁরা আমাদের নৈতিক কল্পনাকেও বিস্তৃত করেন।’’

Advertisement

আজ তেল আভিভে ইজরায়েলের সদ্যপ্রয়াত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট শিমোন পেরেজের জীবনটাকে এ ভাবেই ধরতে চাইলেন বারাক ওবামা।

তার কারণ হয়তো এই, নিছক ‘প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট’ বললে পেরেজ সম্পর্কে কিছুই বলা হয় না। ইজরায়েলের জন্মমুহূর্তের সঙ্গে আজকের পৃথিবীর সর্বশেষ যোগসূত্র ছিলেন তিনিই। ‘ইজরায়েলের পিতা’ যাঁকে বলা হয়, সেই ডেভিড বেন গুরিয়নের শিষ্য পেরেজ এক দিকে প্রায় ভস্ম থেকে গড়ে তুলেছিলেন দেশের সামরিক বাহিনীকে। তাঁর আমলেই ইজরায়েলের পরমাণু
অস্ত্রাগারের জন্ম।

Advertisement

আবার সেই তিনিই ইয়াসের আরাফতের প্যালেস্তাইনের সঙ্গে অসলো শান্তিচুক্তির অন্যতম রূপকার। ১৯৯৩ সালে ওয়াশিংটনে সেই চুক্তি সইয়ের পরে প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন ও ইজরায়েল স্বীকৃতি দেয় পরস্পরকে। পরের বছর আরাফতের সঙ্গেই যৌথ ভাবে তাঁর নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া। আজ পেরেজ সম্পর্কে প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলছেন, ‘‘সাহসীদের শান্তি স্থাপনের অন্যতম অংশীদার।’’ এমনকী হামাসের তরফে বিবৃতিতেও বলা হয়েছে, ‘তাঁর মৃত্যু ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের অবসান।’

আর শুধু প্যালেস্তাইন কেন, প্রতিবেশী জর্ডনের সঙ্গেও শান্তির পথে হেঁটেছেন পেরেজ। তাঁর পরিবারের একটা বড় অংশকেই শেষ করে দিয়েছিল নাৎসিরা। ১৯২৩ সালে পোল্যান্ডে জন্মানো পেরেজ নিজের বইয়ে বারবার ‘নতুন পশ্চিম এশিয়া’ গড়ার স্বপ্নের কথা লিখেছেন। যেখানে সম্পর্ক এগোবে শান্তিপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে। সেই কথা তুলেই সমালোচকদের একাংশ ‘অবাস্তব’ ভাবনা-চিন্তার জন্য কটাক্ষ করেছেন তাঁকে। কিন্তু সম্মানও পেয়েছেন একাধারে। অর্থ, বিদেশ, প্রতিরক্ষা— সব ক’টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক সামলেছেন। তিন গুণ মুদ্রাস্ফীতির ফাঁস থেকে যেমন উদ্ধার করেছেন দেশকে, তেমন লেবানন থেকে সেনাও সরিয়েছেন। অথচ তিনিই ভোটে জিতে কখনও পূর্ণ মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। স্রেফ কাজ চালানোর জন্যই দু’বার স্বল্প সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে বসানো হয়েছে তাঁকে। প্রবীণতম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে একটা বিশ্বরেকর্ডও আছে পেরেজের। ২০১৪-য় প্রেসিডেন্ট পদে মেয়াদ শেষের সময়ে তাঁর বয়স ছিল ৯১।

পেরেজের শেষকৃত্যের আয়োজনে বিশেষ কমিটি গঠন করেছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বহু রাষ্ট্রনেতা। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন জানিয়েছেন, তিনি শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন