দশ বছর বয়স থেকে লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন নয়পল

শোকবার্তায় সলমন রুশদি লিখেছেন, ‘‘জীবন, রাজনীতি, সাহিত্য— সব কিছু নিয়েই সারা জীবন মতবিরোধ হত আমাদের। আজ মনে হচ্ছে, অগ্রজকে হারালাম।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৩৫
Share:

আধার ও আঁধার, এই দুইয়ের বুনোটে গড়ে উঠত তাঁর উপন্যাস। লিখতেন উপনিবেশ-উত্তর সেই স্থান-কালের কথা, যা অন্ধকারময়। আপাত কঠিন এই বিষয়বস্তুর মায়াজাল কিন্তু এক লহমায় ছিঁড়ে ফেলতে পারত তাঁর টানটান গদ্যশৈলী। ৮৬ বছরের জন্মদিনের এক সপ্তাহ আগে লন্ডনের বাড়িতে মারা গেলেন সেই নোবেলজয়ী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক বিদ্যাধর সুরজপ্রসাদ নয়পল। শোকবার্তায় সলমন রুশদি লিখেছেন, ‘‘জীবন, রাজনীতি, সাহিত্য— সব কিছু নিয়েই সারা জীবন মতবিরোধ হত আমাদের। আজ মনে হচ্ছে, অগ্রজকে হারালাম।’’

Advertisement

মতের মিল না-হওয়া বড় দাদা বা ‘খিটখিটে বুড়ো’, এ ভাবেই ‘ভিদিয়া’কে চিনত সাহিত্য দুনিয়া। মানুষ হিসেবে অসম্ভব ‘ঝামেলাবাজ’ ছিলেন, বলবেন তাঁর ঘনিষ্ঠ যে কেউ-ই। কিন্তু সকলে এ কথাও এক বাক্যে মেনে নেবেন যে, তাঁর ধারালো লেখনীর ধারেকাছে আসতে পেরেছিলেন ইংরেজি ভাষার ভারতীয় বংশোদ্ভূত খুব কম লেখকই। ১৯৭১-এ বুকার, ১৯৮৯-তে নাইটহুড এবং ২০০১-এ সাহিত্যে নোবেল সেই ঔৎকর্ষকেই কুর্নিশ মাত্র!

জন্ম ত্রিনিদাদে। সেই কোন কালে কফিখেতের শ্রমিক হিসেবে সে দেশে এসেছিল তাঁর মা-বাবার পরিবার। আত্মীয়স্বজনে ঠাসা দিদিমার বাড়িতে বেড়ে ওঠা বিদ্যাধরের। সেই শৈশব একদম নাপসন্দ ছিল খুদে বিদ্যাধরের। এবং অপছন্দের পৃথিবী থেকেই উত্তরণের দিশা খোঁজার চেষ্টা করতেন কলমের ডগায়। এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, দশ বছর বয়স থেকে লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। আর অনুপ্রেরণা খুঁজতেন সাংবাদিক হিসেবে বিশেষ নাম করতে না-পারা বাবার জীবন থেকে।

Advertisement

স্কলারশিপ পেয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার সুযোগ কিশোর বিদ্যাধরের সেই স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপ। অক্সফোর্ডে পড়ার সময়েই আলাপ হয়েছিল একই বর্ষের ছাত্রী প্যাট্রিশিয়া অ্যান হালে-র সঙ্গে। এই প্যাট্রিশিয়াই সেই কলেজ জীবন থেকেই অর্থে-সামর্থ্যে পাশে থেকেছেন নয়পলের। ১৯৫৩ সালে সেখানকার ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক হন নয়পল।

লেখালেখি শুরু করেছিলেন কমেডি দিয়ে। কিন্তু সে সব লেখা কারও বিশেষ মনে ধরেনি। নয়পলের নিজেরও না। কলেজে পড়ার সময়ে কয়েক মাস গভীর মানসিক অবসাদে ভুগেছিলেন। সেই অন্ধকারও কাটিয়ে ওঠেন প্যাট্রিশিয়ার সাহচর্যে। ১৯৫৫ সালে, বাড়ির ঘোর অমতে বিয়ে করেন তাঁকে। ১৯৯৬ সালে প্যাট্রিশিয়ার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত ছিলেন একসঙ্গে। দু’মাস পরেই অবশ্য বিয়ে করেছিলেন পাক সাংবাদিক নাদিরা খান্নুমকে। দত্তক নেন নাদিরার আগের পক্ষের মেয়েকেও।

আরও পড়ুন: শ্রীবিদ্যাধর সুরজপ্রসাদ নয়পল (১৯৩২-২০১৮)

নয়পালের মৃত্যুর পরে এক বিবৃতিতে নাদিরা বলেছেন, ‘‘যে ক্ষেত্রে পা রেখেছেন, সেখানেই অসামান্য কৃতিত্ব লাভ করেছেন। অসামান্য সৃষ্টির দলিল তাঁর জীবন। ভালবেসেছেন জীবনকে। মারাও গেলেন তাঁদেরই মধ্যে, যাঁদের ভালবাসতেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন