ট্রাম্পের তোপের ফল

গুয়ামে হানার হুমকি, ফুঁসছে কিমের দেশ

মার্কিন বিদেশসচিব রেক্স টিলারসন দেশবাসীকে যখন বলছেন, ‘আপনারা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যান,’ তখন উত্তর কোরিয়ার পিপলস আর্মি এক বিবৃতিতে জানাচ্ছে, ‘‘আমেরিকা দিবাস্বপ্ন দেখছে। ওদের স্বর্গীয় রাজত্বে যেন কখনওই কারও হাত পড়বে না!’’

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

গুয়াম ও নিউ জার্সি শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৭ ০৩:১৮
Share:

কিম জং উন।

ভয়ঙ্কর হুমকি এসেছে কিম জং উনের দেশ থেকে! শীঘ্রই মাঝারি থেকে দীর্ঘ দূরত্বের রকেট ধেয়ে আসতে পারে মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ গুয়ামে। কিমের হুমকির মুখে অবশ্য তারা বিচলিত নয় বলেই দাবি করেছে মার্কিন প্রশাসন। গুয়াম দ্বীপের জনতাকে প্রশাসনের আশ্বাস, ‘ভয়ের কিছু নেই। হাল্কা মেজাজে থাকুন।’

Advertisement

উত্তর কোরিয়ার পরমাণু প্রকল্প নিয়ে গত কালই হুঁশিয়ারি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিউ জার্সিতে ছুটি কাটাতে গিয়ে সেখান থেকে ট্রাম্পের আস্ফালন, ‘‘আমেরিকাকে হুমকি দেওয়া এ বার বন্ধ করুক উত্তর কোরিয়া। না হলে তাদের উপরে এমন আগুন ও ক্রোধ বর্ষিত হবে, এমন শক্তি দেখানো হবে যা সারা পৃথিবী আগে কখনও দেখেনি।’’ যদিও এই বক্তব্য নিয়ে সন্দিহান প্রবীণ সেনেটর জন ম্যাকেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মনে হয় না, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনই কিছু করবেন!’’ বস্তুত ট্রাম্পের এ ধরনের ‘গলাবাজি’ দেশের মানুষও যে ভাল চোখে দেখছে না, রিপাবলিকানদের একাংশ তা ভালই বুঝছেন।

আরও পড়ুন: গাড়ি নিয়ে জঙ্গি-হামলা প্যারিসে, আহত ৬ সেনা

Advertisement

মার্কিন সংবাদমাধ্যমেও তা প্রতিফলিত হচ্ছে। সেখানে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের সঙ্গে ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের বক্তব্যের তুলনা টানা হচ্ছে। ঘটনাচক্রে বিতর্কটা শুরুও হয়েছে ৯ অগস্ট। ১৯৪৫-এর যে দিন জাপানের নাগাসাকি শহরে পরমাণু বোমা বর্ষণের পরে এমনই উদ্ধত স্বর শোনা গিয়েছিল ট্রুম্যানের গলায়। মার্কিন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ‘উত্তর কোরিয়ার উপরে কী ধরনের আঘাত করা হবে বা আদৌ পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার হবে কি না, তা নিয়ে কিছুই বলেননি ট্রাম্প। কিন্তু সেই সময়ের ট্রুম্যানের সঙ্গে ট্রাম্পের ‘ঔদ্ধত্যের’ আশ্চর্য রকমের মিল পাওয়া যাচ্ছে— এটাই চিন্তার।’


মার্কিন বিমান বি ১বি ল্যান্সার। ছবি: এএফপি।

বিশ্লেষকদের মতে, এমন ‘হুঙ্কার’ কিম জং উনের মুখ থেকে শুনতে অভ্যস্ত বিশ্বের অনেকেই। পিয়ংইয়ং আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষার পরে আমেরিকা যখন দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে মিলিত সামরিক মহড়া চালায়, তা যথেষ্ট চটিয়েছিল কিম প্রশাসনকে। সে দেশের সংবাদপত্রে কড়া প্রতিক্রিয়াও ছাপা হয় মার্কিন প্রশাসনের উদ্দেশে। কিন্তু ট্রাম্পের মুখে এত কড়া শব্দে চমকে গিয়েছেন অনেকেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েন আরও ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছবে।

ট্রাম্পের বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পিয়ংইয়ং জানিয়ে দেয়, গুয়ামে হামলা চালানোর কথা ভাবছে তারা। পশ্চিম প্রশান্তমহাসাগরীয় এই দ্বীপে ১ লক্ষ ৬২ হাজারের মতো বাসিন্দা। ছবির মতো সুন্দর দ্বীপটিতে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু গুয়ামের গুরুত্ব অন্য জায়গায়। ছ’হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে এখানে। রয়েছে অ্যান্ডারসেন সেনাবিমান ঘাঁটি এবং নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটিও। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক কালে কোরীয় উপদ্বীপে শক্তি প্রদর্শনে অ্যান্ডারসেন বিমানঘাঁটি থেকেই উড়ে যায় বোমারু বিমান। তাই বেছে বেছে গুয়ামকেই লক্ষ্য করতে চাইছে উত্তর কোরিয়া।

উত্তর কোরিয়ার উপরে কিছু দিন আগেই নয়া নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা। রাষ্ট্রপুঞ্জও আর্থিক নিষেধে সিলমোহর দিয়েছে। সব মিলে বেশ কোণঠাসা কিমের দেশ। মার্কিন বিদেশসচিব রেক্স টিলারসন দেশবাসীকে যখন বলছেন, ‘আপনারা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যান,’ তখন উত্তর কোরিয়ার পিপলস আর্মি এক বিবৃতিতে জানাচ্ছে, ‘‘আমেরিকা দিবাস্বপ্ন দেখছে। ওদের স্বর্গীয় রাজত্বে যেন কখনওই কারও হাত পড়বে না!’’

মঙ্গলবার অবশ্য মার্কিন এক পত্রিকা দেশের গোয়েন্দা সূত্র উদ্ধৃত করে বলেছিল, ‘‘আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে আঘাত করার মতো ক্ষেপণাস্ত্র থেকে পরমাণু অস্ত্র ছোড়ার কাজ আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া।’’ তবে এক বিশেষ প্রযুক্তির (যার দ্বারা ক্ষেপণাস্ত্র থেকে সফল ভাবে পরমাণু অস্ত্র ছোড়া সম্ভব) অনুপস্থিতি উত্তর কোরিয়াকে এখনও পূর্ণ পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করার একমাত্র বাধা, তা নিয়ে সন্দেহ নেই বিশেষজ্ঞদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন