আবার নতুন জুজু কিমের, ফুঁসছেন ট্রাম্প

হোয়াসং-১৫-এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের খবর পেয়ে হোয়াইট হাউসের সাংবাদিকদের ট্রাম্প শুধু বলেছেন, ‘‘আমরা বিষয়টা বুঝে নেব।’’

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

সোল শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:০২
Share:

ট্রাম্প ও কিম জং। ছবি: রয়টার্স ও সংগৃহীত।

আন্দাজ করা হচ্ছিল গত কাল থেকেই। জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া তেমন ইঙ্গিতও দিয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিকে ফের বুড়ো আঙুল দেখালেন তাঁরই ‘রকেট ম্যান!’ মঙ্গলবার ভোররাতে নতুন একটি আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষা করেন তিনি। কিম জং উনের দেশ উত্তর কোরিয়ার এ বারের আইসিবিএমটি ধারে এবং ভারে আগেরটির তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতাশালী বলে দাবি করা হচ্ছে। সেখানকার সংবাদমাধ্যম বলছে, নয়া আইসিবিএমে আরও বিশাল এবং ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু অস্ত্র বসানো রয়েছে যেটি আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে আঘাত করতে সক্ষম।

Advertisement

বুধবার দেশের সরকারি সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোর তিনটে নাগাদ শাসক কিম জং উনের নির্দেশে হোয়াসং-১৫ নামে ওই আইসিবিএম ছোড়া হয়েছে দেশের পশ্চিমাংশে সেইন নি থেকে। যেটি আকাশে পাড়ি দিয়েছে ৪ হাজার ৪৭৫ কিলোমিটার দূরত্ব, ৫৩ মিনিট বাতাসে ভেসে জাপানের উপকূলবর্তী জলে ভেঙে পড়ে সেটি। ওই অঞ্চলের কাছাকাছি জাপানের ‘এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন।’ এর আগে পিয়ংইয়ংয়ের সংগ্রহে এত উচ্চতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ছিল না। তাই তাদের মতে এটিই সব চেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন আইসিবিএম।

হোয়াসং-১৫-এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের খবর পেয়ে হোয়াইট হাউসের সাংবাদিকদের ট্রাম্প শুধু বলেছেন, ‘‘আমরা বিষয়টা বুঝে নেব।’’ পরে টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘‘উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পরে আমাদের সরকার এবং সেনাবাহিনীকে আরও বেশি করে মজবুত করতে হবে। ডেমোক্র্যাটরা যেন এখন অ্যামনেস্টি আর অভিবাসন নিয়ে তহবিলের কথা না ভাবেন।’’ ট্রাম্পের সঙ্গে রুজভেল্ট রুমে ছিলেন মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব জেমস ম্যাটিসও। তিনি বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা থেকে স্পষ্ট তারা বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে আঘাত করতে পারে। এক কথায়, ভয় দেখানোর ধারাবাহিক প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে ওরা। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বিশ্বশান্তি নষ্ট করার ভয়।’’

Advertisement

ইউনিয়ন অব কনসার্নড সায়েন্টিস্টস-এর ডেভিড রাইট বলেছেন, ‘‘এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র ওয়াশিংটন পৌঁছনোর পক্ষে যথেষ্ট। শুধু ওয়াশিংটন কেন, আমেরিকার যে কোনও অংশে হানা দিতে পারে নয়া আইসিবিএম।’’

কিমের বাড়বাড়ন্তে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে উত্তর কোরিয়ার ‘মিত্র’ দেশ চিন। কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা বাড়ায় এমন সব সক্রিয়তা বন্ধ করতে বলেছে বেজিং। পাশাপাশি তারা বলেছে, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধ মেনে চলা উচিত উত্তর কোরিয়ার। উষ্মা জানিয়েছে রাশিয়াও। উত্তর কোরিয়ার নিন্দা করে ক্রেমলিন বলেছে, এটা প্ররোচনামূলক কাজ। তারাও মনে করছে ‘‘এতে আরও উত্তেজনা বাড়বে।’’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প এখন বড় সঙ্কটের মুখে। কূটনীতি এ ভাবে ক্রমাগত ব্যর্থ হলে তাঁকে হয়তো সামরিক সক্রিয়তা দেখানোর পথে হাঁটতে হবে। এক দিকে তিনি এই ভেবে চুপ করে বসেও থাকতে
পারেন যে, উত্তর কোরিয়ার আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে পরমাণু অস্ত্র ধেয়ে আসবে আমেরিকার দিকে। নয়তো ট্রাম্প নিজেই সেই চেষ্টা নস্যাৎ করতে সামরিক সক্রিয়তা বাড়িয়ে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ এবং এশিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন সেনার জীবন বিপন্ন করতে পারেন। কিন্তু এত দিন পর্যন্ত এ ভাবনা দূরেই রাখা হয়েছিল। এখন ‘রকেট ম্যান’কে ঠেকাতে আর একটা বিশ্বযুদ্ধ কি আসন্ন, সে দিকেই চোখ সবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন