এনএসজি অনিশ্চিত, কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রক দেশ হয়ে গেল ভারত

পুরোটা না পারলেও, অনেকটা পারলেন মোদী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সপ্তম বৈঠকের শেষে বুঝিয়ে দিলেন, আরও কাছাকাছি এসেছে ভারত-আমেরিকা। যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে নিজের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বলে সম্বোধন করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ১৫:১৭
Share:

ওভাল অফিসে বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী ও বারাক ওবামা। ছবি: পিটিআই।

পুরোটা না পারলেও, অনেকটা পারলেন মোদী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সপ্তম বৈঠকের শেষে বুঝিয়ে দিলেন, আরও কাছাকাছি এসেছে ভারত-আমেরিকা। যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে নিজের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বলে সম্বোধন করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে সমর্থন করার জন্য ওবামাকে ধন্যবাদও জানালেন। ওবামাও বুঝিয়ে দিলেন, ভারতকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে বদ্ধপরিকর আমেরিকা।

Advertisement

ওভাল অফিস অর্থাৎ হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিজস্ব অফিসে বারাক ওবামা এবং নরেন্দ্র মোদীর এই বৈঠক হয়। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বিডেনও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রপতির এই বৈঠক শুরু হওয়ার আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, ভারত মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম-এর (এমটিসিআর) সদস্য হচ্ছে। তাই অত্যন্ত ‘ফিল-গুড’ পরিস্থিতিতেই মোদী-ওবামার বৈঠক শুরু হয়। ভারতকে নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপ বা এনএসজি-র সদস্যপদ পাইয়ে দেওয়ার বিষয়ে আমেরিকা কী ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে, তা নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়। এনএসজি-র সব সদস্য দেশকে চিঠি লিখে মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরি যে ভারতের বিরোধিতা না করার আবেদন জানিয়েছেন, ওবামা তা মোদীকে জানান। তবে চিন যে ভাবে এখনও ভারতের অন্তর্ভুক্তি আটকাতে সচেষ্ট, তাতে এনএসজি-র আসন্ন বৈঠকে ভারতের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব এনএসজি-তে পাশ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গিয়েছে। এমটিসিআর-এ ভারতের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হওয়া অবশ্য নিঃসন্দেহে বড় বিষয়। এর ফলে সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি, মার্কিন ড্রোন এবং আরও নানা অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র কেনার রাস্তা যেমন ভারতের সামনে খুলে যাবে, তেমনই নিজেদের উন্নত মানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ভারত অন্যান্য দেশকে বিক্রিও করতে পারবে।

মোদী-ওবামার এ দিনের বৈঠকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্যারিস চুক্তি অনুসারে ভারত কী ভাবে গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন কমাবে, সে নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আলোচনা করেছেন। বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে ভারত-মার্কিন পরমাণু সমঝোতা নিয়েও। ভারতে আরও ৬টি অসামরিক পরমাণু কেন্দ্র তৈরির কাজ এক বছরের মধ্যে শেষ করা হবে বলে স্থির হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

চিনকে চাপে রাখতে ভারত, জাপানের সঙ্গে নৌমহড়ায় নামছে আমেরিকা

বর্তমান আন্তর্জাতিক সমীকরণের প্রেক্ষিতে মোদী এবং ওবামা বৈঠকে বসবেন, আর চিন, পাকিস্তানকে নিয়ে আলোচনা হবে না, তা প্রায় অসম্ভব। আলোচনা যে হয়েছে, তা যৌথ সাংবাদিক সম্মলনের সময় প্রেসিডেন্ট ওবামা নিজেই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অসামরিক পরমাণু সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করেছি, আমরা আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা করেছি, আমরা সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক সঙ্গে কাজ করার বিষয়েও কথা বলেছি।’’ ওয়াকিবহাল মহল বলছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, তা মূলত চিন এবং পাকিস্তানকে কেন্দ্র করেই। দক্ষিণ চিন সাগর তথা পুরো ভারত মহাসাগরে চিনের আগ্রাসন রুখতে ভারত-আমেরিকার নৌসেনা পারস্পরিক সহযোগিতা কতটা বাড়াতে পারে, কথা হয়েছে তা নিয়ে। আমেরিকা দক্ষিণ চিন সাগরে ভারতের নৌসেনাকে যৌথ টহলদারিতে চেয়েছে। আর ভারত পাকিস্তানের উপর চাপ আরও বাড়ানোর কথা বলেছে। চিনের সমর্থন নিয়ে পাকিস্তান যে ভাবে ভারতে নাশকতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে, সে বিষয়ে আমেরিকাকে আরও বেশি করে পাশে চেয়েছেন মোদী।

এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে হোয়াইট হাউজের ক্যাবিনেট রুমে মোদী-ওবামা এক সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সারেন। মার্কিন কংগ্রেসে মোদীর ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। এই আমন্ত্রণের জন্য মোদী মার্কিন কংগ্রেসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামা মোদীর সঙ্গে এই শেষ বার বৈঠকে বসছেন বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু তা নয়, আরও একটি বৈঠক হতে চলেছে এই দু’জনের মধ্যে। ওবামার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জি-২০ শীর্ষ বৈঠক হবে। সেখানেও মোদী-ওবামার দেখা হবে বলে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন