সমকামী ছিল কি মতিন, ধন্দ প্রাক্তন স্ত্রীর

মতিন নিজেই হয়তো সমকামী ছিল। কিন্তু পাছে লোকে কিছু বলে, সেই ভয়ে কাউকে কোনও দিন তা জানাতে পারেনি। আজ এমনটাই দাবি করেছেন তার প্রাক্তন স্ত্রী সিতোরা ইউসুফি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

অরল্যান্ডো শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ০৯:১০
Share:

নিহতদের স্মৃতিতে। মঙ্গলবার ফ্লোরিডায়। ছবি: রয়টার্স।

মতিন নিজেই হয়তো সমকামী ছিল। কিন্তু পাছে লোকে কিছু বলে, সেই ভয়ে কাউকে কোনও দিন তা জানাতে পারেনি। আজ এমনটাই দাবি করেছেন তার প্রাক্তন স্ত্রী সিতোরা ইউসুফি।

Advertisement

অবশ্য শুধু ইউসুফি নন, মতিন যে সমকামী ছিল সে বিষয়ে অনেকেই বেশ নিশ্চিত। যেমন, কেভিন ওয়েস্ট। বছরখানেক আগে তাঁর সঙ্গে মতিনের আলাপ হয় সমকামীদের একটি ডেটিং সাইটে। তিন মাস আগে তাঁর সঙ্গে ফের যোগাযোগ করে মতিন। জানায়, খুব তাড়াতাড়ি অরল্যান্ডো আসবে সে। কেভিন যেন দেখা করে। কথা মতো কয়েক মাস আগে পালস নাইটক্লাবে দু’জনের দেখাও হয়।

তাই সে দিন রাতে পার্কিং লটে মুখটা এক ঝলক দেখেই চিনে ফেলেছিলেন কেভিন। কিন্তু তখনও বুঝতে পারেননি, একটু পরেই তাঁর বন্ধু ভিতরে কী ঘটাতে চলেছে।

Advertisement

কেভিনের মতো একই কথা জানিয়েছেন কর্ড সিডনো। তিনি বলেছেন, ‘‘ওই ডেটিং সাইটে নিজের ছবি দিয়ে রেখেছিল মতিন। তাই নাইটক্লাবে দেখে ওকে সহজেই চিনতে পেরেছি।’’ সাধারণত পালসে এসে মতিন তার পছন্দের পানীয় নিয়ে একটা কোণেই বসে থাকত। তবে মাঝে মাঝে অতিরিক্ত মদ্যপান করার ফলে চিৎকার চেঁচামেচিও করত বলে আজ অনেকেই জানিয়েছেন।

এ সব কথা ইউসুফি জানতেন না। বিয়ের আগে তাঁকে মতিন জানিয়েছিল যে নাইটক্লাবে হামেশাই তার যাতায়াত আছে। তবে সেগুলি যে সমকামীদের নাইটক্লাব তা মতিন জানায়নি। ইউসুফির সন্দেহ, আসলে লজ্জা, সামাজিক ভয়— এ সবের কারণেই নিজের যৌনতা নিয়ে কোনও দিন মুখ খুলতে পারেনি মতিন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে একটা রাগ ছিল।

ছোটবেলা থেকেই যে মতিনের ব্যবহারে অসঙ্গতি ছিল, তার স্কুলের বন্ধুরাও তা জানিয়েছেন। ২০০১ সাল, সেপ্টেম্বর মাস। মাত্র আধ ঘণ্টার ব্যবধানে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল যমজ বহুতল ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’। সে সময় স্কুলেই টিভিতে সেই দ়ৃশ্য দেখছিল মতিন ও তার বন্ধুরা। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে তা দেখে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে মতিন।

মতিনের ছোটবেলার এক বন্ধু রবার্ট। এক বাসেই ফিরত দু’জনে। রবার্টের কথায়, ‘‘মুখে প্লেনের আওয়াজ করে বাসময় দৌড়ে বেড়াত মতিন। যেন নিজেই একটা প্লেন। আর কোনও বাড়িতে গিয়ে ধাক্কা মারছে ও!’’ লাদেনকে নিজের কাকা বলেও সে সময় পরিচয় দেয় মতিন।

তবে মতিনের অন্য কয়েক জন বন্ধুর আবার উল্টো মত। যেমন উইন্সট্যানলি। তাঁর কথায়, ‘‘নিজের ধর্ম সম্পর্কে সে আমাকে অনেক কথা বুঝিয়েছে। তবে কখনওই মনে হয়নি ও কট্টরবাদী।’’ কিন্তু স্কুলে বা বাসে যে মতিনকে প্রায়শই হেনস্থা করা হতো, তা অনেকের কথাতেই স্পষ্ট। বন্ধুরা মতিনকে হামেশাই খেপাত। পাশে বসতে দিত না। ছোটবেলার এই ঘটনাগুলো কোনও ভাবে শিশু মনে প্রভাব বিস্তার করেনি তো, সে প্রশ্ন আজ মনোবিদেরা তুলেছেন।

এই হামলার নিন্দা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। গত রাতে ওই নাইটক্লাব থেকে কিছু দূরে জড়ো হন অনেকে। কারও চোখে জল। কেউ নিশ্চুপ। সে রাতের স্মৃতিটা যে ভোলা যাচ্ছে না কিছুতেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন