Padma Bridge

Padma Bridge: আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতুর, আবেগে রাত জাগল বাংলাদেশ!

পদ্মা সেতু শুধু কলকাতা, ঢাকার দূরত্ব কমাবে না। এর ফলে বঙ্গোপসাগরের তীরের মংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব একশো কিলোমিটার কমে যাবে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

ঢাকা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২২ ০৫:৩৫
Share:

পদ্মার সেতু উদ্বোধনের আগে সাজো সাজো রব। শুক্রবার ঢাকায়। নিজস্ব চিত্র।

‘পদ্মার ঢেউ রে/ মোর শূন্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা, যা রে’, লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।

Advertisement

শুক্রবার শেষ বিকেলে ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির কাঁচে ঢাকা সিঁড়িতে ছড়ানো লাল গোলাপের পাপড়ি যখন শুকিয়ে আসছিল, ছুটির দিনের ভিড়টা সরে যাচ্ছিল ঢাকার বিজয় সরণিতে। ঢাকার এই সড়কের এক দিকে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ, বঙ্গবন্ধুর নামাঙ্কিত সামরিক জাদুঘর, নভো থিয়েটার। উল্টো দিকে এখন ঢাউস আকারের একের পর এক হোর্ডিংয়ে শুধুই পদ্মা সেতুর ছবি। শনিবার সকালে শেখ হাসিনা এই পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। পদ্মার ঢেউয়ের বাধা কাটিয়ে, বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত ছুঁচ্ছে সেই সেতু। মস্ত মাপের সব হোর্ডিংয়ে সেই সেতুর ছবির এক দিকে শেখ মুজিবের মুখ। অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মাঝে বার্তা, ‘তুমি স্বপ্ন দেখ, স্বপ্ন দেখাও বিশ্ব জয়ের’।

নিছক নদীর উপরে তৈরি সেতু। সে তো ভূ-ভারতে কতই রয়েছে। পদ্মা নদীর উপরে তৈরি সেতু সে হিসেবে ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু একটা সেতু যে একটা গোটা দেশের মানুষের আবেগকে এ ভাবে তুঙ্গে নিয়ে যেতে পারে, তা ঢাকায় না এলে বোঝা যায় না।শনিবার সকালে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় শুক্রবার যেন বিনিদ্র রজনী কাটাতে চলেছে বাংলাদেশ।

Advertisement

২০১২ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জাতীয় সংসদে পদ্মা সেতু নির্মাণকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। শনিবার সকালে তিনি যে সেতুর উদ্বোধন করতে চলেছেন, তাঁকে বাংলাদেশের অনেকে বিদেশি ঋণ, আর্থিক সাহায্য দয়ার উপরে নির্ভরতা থেকে মুক্তি হিসেবেই দেখছে। কারণ এই সেতু তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের নিজের অর্থে। খরস্রোতা পদ্মা এত দিন বাংলাদেশের দুই অংশের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করেছিল। মুক্তি মিলতে চলেছে তার থেকেও। পদ্মা সেতু একই সঙ্গে তাই একটি গোটা জাতির ভাবাবেগ। উন্নয়নের প্রতীক। সাধারণ মানুষের মধ্যে, পিছিয়ে পড়া এলাকায় উন্নয়নের সুফলকে ছড়িয়ে দেওয়ার বার্তাও।

শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। তার পরে অন্যপ্রান্তে মাদারিপুরে শিবচরে বিশাল জনসভায় বক্তৃতা করবেন। সে জনসভায় এত মানুষের ভিড় হবে, যা নতুন ইতিহাস তৈরি করবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ কর্তারা। আগামী বছর, ২০২৩-এ বাংলাদেশে নির্বাচন। পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার সঙ্গে নির্বাচনের জয়ের দূরত্বও অনেকটাই কমিয়ে দেবে বলে আওয়ামি লিগ নেতৃত্ব আশা করছেন। হাসিনা বাংলাদেশকে ‘মুজিবের বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছেন। আগামী বছর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর মতাদর্শের সঙ্গেও লড়তে হবে বিরোধী দল বিএনপি-কে।

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এখন অসুস্থ। শুক্রবার বিকেলে শেখ হাসিনার সরকার যখন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, খালেদা জিয়া তখন প্রায় দু’সপ্তাহ হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ি ফিরলেন। তাঁর হৃদযন্ত্রে সমস্যা ধরা পড়েছে। বিএনপি নেতারা খালেদা-পুত্র তারেক রহমানকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। কিন্তু দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড পাওয়া তারেক লন্ডন থেকে সহসা দেশে ফিরছেন না। সেতু উদ্বোধনের দু’দিন আগে বৃহস্পতিবার আওয়ামি লিগের প্রতিষ্ঠা দিবসে তারেককে নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাসিনা বলেছেন, “তিনি তো বিদেশে। যে রাজনীতিকের দেশে ফেরারই সাহস নেই, সে নেতৃত্ব দেবে কী ভাবে?”

কলকাতা থেকে বাসে ঢাকায় আসতে হলে এখন বাস পদ্মা পার হয় স্টিমারে চেপে। অনেকটা সময় লেগে যায়। পদ্মা সেতু চালু হলে বাস একেবারে সড়ক পথেই সরাসরি ঢাকায় পৌঁছবে। কলকাতা থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে। এই সেতু উদ্বোধনের ঠিক আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বৃহস্পতিবারই শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তাঁকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই শেখ হাসিনা ভারত সফরে যেতে পারেন।

পদ্মা সেতু শুধু কলকাতা, ঢাকার দূরত্ব কমাবে না। এর ফলে বঙ্গোপসাগরের তীরের মংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব একশো কিলোমিটার কমে যাবে। এই দুই বন্দর ভারতকে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ফলে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির সঙ্গে ভারতের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ সুগম হবে। দুই দেশই আশা করছে, শেখ হাসিনার সফরের আগেই ভারত-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির খুঁটিনাটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে। পদ্মা সেতু দু’দেশের বাণিজ্যেও নতুন সেতুবন্ধন করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন