মেয়ে ও জামাই-সহ শরিফের নামে চার্জ

কূটনীতিকদের একাংশের দাবি, গোটা ঘটনার শুরু ২০১৩ সালে ভোটের সময়। জনসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নওয়াজ শরিফ, তিনি ক্ষমতায় এলে কিছু এলাকায় সেনার ক্ষমতা কমিয়ে সাধারণ প্রশাসনের হাতে তুলে দেবেন। স্বাভাবিক ভাবেই, এ হেন বার্তায় ক্ষুব্ধ হয়েছিল সেনাবাহিনী।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২৯
Share:

দোষী: আদালতের পথে মরিয়ম। বৃহস্পতিবার। ছবি: রয়টার্স।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রী পদ গিয়েছিল আগেই। এ বার নওয়াজ শরিফ এবং তাঁর মেয়ে-জামাইয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলায় চার্জ গঠন করল পাকিস্তানের দুর্নীতি-দমন আদালত।

Advertisement

পানামার একটি ল’ফার্মের ফাঁস করা তথ্যে দাবি করা হয়েছিল, একটি অস্ত্র কারখানার যাবতীয় কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করেন শরিফ ও তাঁর তিন ছেলেমেয়ে। এবং সেই কারখানার অর্থেই পাক সরকারকে সম্পূর্ণ লুকিয়ে গিয়ে লন্ডনে একটি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন তাঁরা। এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। হস্তক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। জুলাই মাসে কোর্টের নির্দেশে দফতর হাতছাড়া হয় তিন বারের প্রধানমন্ত্রী শরিফের। কী ভাবে অত টাকা পেল শরিফ-পরিবার, জানতে চায় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তাদের জবাবে সন্তুষ্ট হয়নি আদালত। বলা হয়েছিল, ‘‘সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন শরিফরা।’’ পরে শীর্ষ আদালতের নির্দেশেই শরিফের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করে দুর্নীতি-দমন আদালত।

বৃহস্পতিবার আদালতের গঠন করা চার্জে শরিফ, কন্যা মরিয়ম ও জামাই মহম্মদ সফদরের নামও আছে। সম্প্রতি পাক রাজনীতিতে ভালই প্রভাব বিস্তার করেছেন শরিফ-তনয়া মরিয়ম নওয়াজ শরিফও। পানামা নথিতে শরিফের দুই ছেলে হাসান ও হুসেনের নাম থাকলেও, তাঁদের নামে চার্জ গঠন করা হয়নি।

Advertisement

তিন জনেই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিবৃতি দিয়ে তাঁরা বলেন, ‘‘আমরা দোষী নই। আমাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন, অর্থহীন, প্রমাণ তো নেই-ই, গুরুত্বহীনও বটে। অসম্পূর্ণ ও বিতর্কিত কিছু তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই চার্জ গঠন করা হয়েছে। বিচারের নামে এই ভণ্ডামি ইতিহাসে লেখা থাকবে। পুনর্বিবেচনার আর্জি এখনও খতিয়ে দেখেনি সুপ্রিম কোর্ট, এর মধ্যেই আদালতের উত্তরের অপেক্ষা না করে চার্জ গঠন করা হল কী ভাবে!’’

কূটনীতিকদের একাংশের দাবি, গোটা ঘটনার শুরু ২০১৩ সালে ভোটের সময়। জনসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নওয়াজ শরিফ, তিনি ক্ষমতায় এলে কিছু এলাকায় সেনার ক্ষমতা কমিয়ে সাধারণ প্রশাসনের হাতে তুলে দেবেন। স্বাভাবিক ভাবেই, এ হেন বার্তায় ক্ষুব্ধ হয়েছিল সেনাবাহিনী। ফলে সুপ্রিম কোর্টের নজরে পড়ার বহু আগে থেকেই শরিফকে এক হাত নিতে শুরু করে সেনা। এমনকী শরিফ ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে এই আইনি পদক্ষেপকেও অনেকে সেনাবাহিনীর মোক্ষম চাল হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক মহলের একাংশ যখন আদালতের নির্দেশকে দুর্নীতি দমনে ‘জোরদার পদক্ষেপ’ বলে মনে করছে, শরিফের সমর্থকরা একে স্রেফ ‘বাড়াবাড়ি’ হিসেবে দেখছেন। তাঁদের দাবি, সেনাবাহিনীর হয়ে আসলে রাজনীতির খেলাতে মেতেছে কোর্টও। স্বাভাবিক ভাবেই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে বাহিনী।

এই মুহূর্তে লন্ডনে রয়েছেন শরিফ। তার হয়ে আইনজীবী জাফির খানের উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয়। মরিয়ম ও সফদর অবশ্য আদালতে ছিলেন। এই মাসের গোড়ায় পাকিস্তানে ফিরতেই ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে সফদরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আপাতত তিনি জামিনে মুক্ত রয়েছেন। মরিয়ম আজ বলেন, ‘‘কোর্টের পদক্ষেপে আমাদের যথেষ্টই আপত্তি রয়েছে। যদিও আদালতে হাজির থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গ্রেফতারিকে ভয় পাই না আমরা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘একসঙ্গে নির্যাতন ও অবিচার চলতে পারে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এটাই প্রথম মামলা, যেখানে শুনানি হওয়ার আগেই রায় ঘোষণা হয়ে গেল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন