সাবিন মাহমুদ।
অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমানের পর সাবিন মাহমুদ। গত রাতে করাচির রাস্তায় জনপ্রিয় এই পাক মানবাধিকারকর্মীকে শেষ করে দিল অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকবাজের গুলি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় একুশে বইমেলার ঠিক বাইরে দুষ্কৃতী-হামলায় খুন হন লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়। ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে কলম ধরে জঙ্গিদের থেকে হুমকি পেয়েছিলেন তিনি। অভি়জিৎ-হত্যার এক মাস পরে ঢাকার রাজপথ থেকে উদ্ধার হয় ক্ষত-বিক্ষত ওয়াশিকুর রহমানের দেহ। বছর সাতাশের ওয়াশিকুর অভিজিতের মতোই বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাধারার পক্ষে সওয়াল করে ব্লগ চালাতেন। অভিজিৎ আর ওয়াশিকুরের সঙ্গে মাহমুদের মিল এখানেই— ওঁদের মতো ইনিও সাধারণ মানুষের কথা বলতেন। বালুচিস্তানে মানবাধিকারের অপব্যবহার নিয়ে কাজ করতেন বছর চল্লিশের এই মহিলা। যোগ দিতেন মানবাধিকার নিয়ে বিভিন্ন আলোচনাসভাতেও।
পুলিশ জানিয়েছে, বালুচিস্তানের ‘নিখোঁজ’ মানুষদের নিয়ে একটি আলোচনাসভায় যোগ দিয়ে মায়ের সঙ্গে বা়ড়ি ফিরছিলেন মাহমুদ। আচমকাই মোটরসাইকেলে করে আসা অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা চালকের আসনে থাকা মাহমুদকে পর পর পাঁচ বার গুলি করে। গুলি লাগে তাঁর কাঁধে, বুকে ও পেটে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানিয়ে দেন। গুলি লাগে মাহমুদের মায়েরও। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, আপাতত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আত্মীয়রা। ছবি: রয়টার্স।
‘দ্য সেকেন্ড ফ্লোর’ নামে একটি মুক্ত মঞ্চ চালাতেন মাহমুদ। মূলত বালুচিস্তানে মানবাধিকারের অপব্যবহার এবং নাগরিক অধিকার নিয়ে আলোচনা হতো এই মঞ্চে। সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে বালুচিস্তানের বেশ কয়েক জন সাধারণ মানুষকে অপহরণ করা হয়। এবং অপহরণের বহু দিন বাদে তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মাহমুদ এবং তাঁরই চিন্তাধারায় বিশ্বাসী এমন কয়েক জনের অভিযোগ, পাক সরকার এবং পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এই সমস্ত অপহরণের মূলে। আর ঠিক এই বিষয় নিয়েই সক্রিয় ভাবে কাজ করতেন মাহমুদ এবং আর এক মানবাধিকার কর্মী মামা কাদির। যে আলোচনাসভা থেকে গত রাতে বাড়ি ফিরছিলেন মাহমুদ, সেখানে উপস্থিত ছিলেন কাদিরও। বন্ধুর মৃত্যুতে মর্মাহত কাদিরের কথায়, ‘‘সবাই জানে ওঁকে কে খুন করেছে এবং কেন।’’
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণেই এই হত্যা। পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ঘটনার নিন্দা করেছেন। ঘটনার যাতে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হয়, তার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।