হিন্দু-বিরোধী মন্তব্য করে পদ খোয়ালেন পাক মন্ত্রী

সরকারি হিসেবে, পাকিস্তানে এখন প্রায় ৭৫ লক্ষ হিন্দুর বাস। বেসরকারি মতে যদিও সংখ্যাটি ৯০ লক্ষের বেশি। তাঁদের সিংহভাগই থাকেন সিন্ধু প্রদেশে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লাহৌর শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০২:৪৪
Share:

পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার দশ দিন পরে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এক জমায়েতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাক মন্ত্রী ফৈয়াজ়ুল হাসান চৌহান বেশ কিছু ‘হিন্দু-বিরোধী’ মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। ছবি: রয়টার্স।

পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিয়ে অপমানসূচক এবং উস্কানিমূলক মন্তব্যের দায়ে পদ খোয়ালেন পিটিআই নেতা তথা পঞ্জাব প্রদেশের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী ফৈয়াজ়ুল হাসান চৌহান। পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, এর ব্যাখ্যা চেয়ে ফৈয়াজ়ুলকে আজ নিজের অফিসে ডেকে পাঠান পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী সর্দার উসমান বুজ়দার। এবং সেখানেই তাঁকে ইস্তফা দিতে বলা হয়। একাংশের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে নিজের দলেও তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে হইচই শুরু হওয়ায় শেষমেশ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ফৈয়াজ়ুল।

Advertisement

পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার দশ দিন পরে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এক জমায়েতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফৈয়াজ়ুল বেশ কিছু ‘হিন্দু-বিরোধী’ মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ। ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা তাঁর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন। দলের নেতার এই মন্তব্য নিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সরাসরি মুখ না খুললেও, গত কালই তাঁর বিশেষ সহযোগী নইমুল হক বলেছিলেন, ‘‘সরকার এই ধরনের নির্বুদ্ধিতা সহ্য করবে না।’’ পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও টুইট করেছিলেন তিনি। টুইটারে হকের সঙ্গে গলা মেলান পাক মানবাধিকার মন্ত্রী শিরিন মাজ়ারি এবং অর্থমন্ত্রী আসাদ উমরও। উমর আজও বলেন, ‘‘আমাদের জাতীয় পতাকায় শুধু সবুজ রঙ নয়, সাদাও রয়েছে। এই সাদা রংটা সংখ্যালঘুদের কথা মাথায় রেখে। হিন্দুদের ছাড়া আমরা অসম্পূর্ণ।’’

ফৈয়াজ়ুলকে এ ভাবে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন কাশ্মীরের দুই নেতা, পিডিপি-র মেহবুবা মুফতি এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লা। মেহবুবা টুইট করেন, ‘‘খুবই আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন ওই পাক মন্ত্রী। তাই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে তো কেউ যত সাম্প্রদায়িক কথা বলবে, যত মুসলিম-বিদ্বেষ দেখাবে, ততই সে প্রশংসা কুড়োবে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও টুইট করেন, ‘‘হিন্দু-বিরোধী মন্তব্য করার জন্য পাক মন্ত্রীকে ইস্তফা দিতে হল। কিন্তু ভারতে এক রাজ্যপাল কাশ্মীরিদের বয়কটের ডাক দিলে তাঁকে কেউ ভর্ৎসনাও করে না। আমরা সব সময়ে নিজেদের পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করি। কিন্তু এই বিষয়টিও ভাবা দরকার।’’

Advertisement

সরকারি হিসেবে, পাকিস্তানে এখন প্রায় ৭৫ লক্ষ হিন্দুর বাস। বেসরকারি মতে যদিও সংখ্যাটি ৯০ লক্ষের বেশি। তাঁদের সিংহভাগই থাকেন সিন্ধু প্রদেশে। মন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন এই পাক-হিন্দুদের অনেকেই। কয়েক দিন ধরে ফৈয়াজ়ুলের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে থাকেন বিরোধীরাও। তাঁকে সরানোর দাবিতে #স্যাকফৈয়াজ়চৌহান নামে বেশ কিছু পোস্টও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। চাপের মুখে আজ ইস্তফা দেওয়ার ঠিক আগে নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন ফৈয়াজ়ুল। যদিও তাঁর দাবি, তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধেই মুখ খুলেছিলেন। পাকিস্তানের হিন্দু সম্প্রদায়কে কটাক্ষ করাটা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘আমার কোনও কথায় পাক-হিন্দুরা আহত হয়ে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’’

তবে সূত্রের খবর, এর আগেও একাধিক বার সংখ্যালঘুদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেছিলেন ফৈয়াজ়ুল। তাঁকে সংযত হওয়ার নির্দেশও দিয়েছিল দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন