সার্কে কোণঠাসা পাকিস্তান এখন নতুন বন্ধুর খোঁজে। চিন, ইরান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে বৃহত্তর সার্ক গড়ার চেষ্টায় নেমেছে তারা।
ইসলামাবাদে নভেম্বরের সার্ক বৈঠক ভারত বয়কট করায় এবং সেই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ, ভুটান, আফগানিস্তানের মতো দেশগুলিও সমর্থন করায় বিশ্বের সামনে একেবারে বেইজ্জত হতে হয়েছে পাকিস্তানকে। ইসলামাবাদ সন্ত্রাসে মদত দিচ্ছে— সার্কের বাকি দেশগুলি সরাসরি এই অভিযোগ আনায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একঘরে হয়ে পড়েছে ইসলামাবাদ। ভারত এখন অন্যান্য মঞ্চকে ব্যবহার করে পাকিস্তান বাদে সার্কের বাকি সদস্য ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সব দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে তৎপর। এই পরিস্থিতিতেই নতুন বন্ধু খুঁজে মঞ্চ তৈরির চেষ্টায় নেমেছে নওয়াজ শরিফের দেশ। পাকিস্তানের একটি প্রথম সারির দৈনিক এ খবর জানিয়েছে।
পাকিস্তানের এমপিদের একটি দল গত সপ্তাহ থেকে আমেরিকায়। তাঁরাই বৃহত্তর সার্কের এই প্রস্তাবের কথা সামনে এনেছেন। পাক দলটির সদস্য মুশাহিদ হোসেন সইদ দাবি করেছেন, ‘‘বৃহত্তর দক্ষিণ এশিয়ার সমীকরণ এখন সামনে চলে আসছে। সেখানে চিন, ইরান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলিকেও রাখা দরকার।’’
পাক প্রতিনিধিদের যুক্তি, দক্ষিণ এশিয়ার সার্ককে বৃহত্তর ও বাস্তব রূপ দিতে সঙ্গে চাই মধ্য এশিয়া, চিন ও ইরানকেও। চিন–পাকিস্তান আর্থিক করিডর একটি প্রধান বাণিজ্য করিডর, যা দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়াকে জুড়বে। এ ছাড়া, গদর বন্দরকে শুধু চিনই নয়, মধ্য এশিয়ার দেশগুলিও ব্যবহার করতে পারবে। তাই দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলি এ দিকে নজর দেবে বলেই পাকিস্তানের আশা। পাকিস্তানের ধারণা, তাদের প্রস্তাবে চিন আগ্রহী হবে। কেননা, আঞ্চলিক ক্ষেত্রে বাড়তে থাকা ভারতের প্রভাব বেজিংয়ের কাছে চিন্তার কারণ। যদিও ওই করিডর থেকে ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা বা নেপাল এ নিয়ে আদৌ কতটা আগ্রহ দেখাবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তা ছাড়া ভারতের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়— এমন পথে আফগানিস্তান যাবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
পাক সংবাদপত্রটির মতে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে এই বাণিজ্য করিডর নিয়ে যাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই আপত্তি জানিয়েছে নয়াদিল্লি। সার্কের আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান ভারতের ঘনিষ্ঠ। ভুটান মেনে নিচ্ছে নয়াদিল্লির কথা। নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মলদ্বীপের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ভাল হলেও তারাও ভারতের সঙ্গে সংঘাতে যেতে রাজি নয়। তাই পাক কূটনীতিকরা সরাসরিই বলছেন, সার্কের বর্তমান কাঠামোয় ভারতের প্রভাব আটকানো সম্ভব নয়। সে জন্যই বৃহত্তর আঞ্চলিক সমীকরণের কথা ভাবতে হচ্ছে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলিকে বৃহত্তর সার্কে আনার চেষ্টা করতে গিয়ে আফগানিস্তানের উদাহরণ সামনে আনছে পাকিস্তান। কারণ দক্ষিণ এশিয়া নয়, আফগানিস্তান হল মধ্য এশিয়ার একটি দেশ।