International News

হাফিজের সভায় প্যালেস্তিনীয় রাষ্ট্রদূত, অস্বস্তিতে নয়াদিল্লি

শুক্রবার পাকিস্তানের রাওয়লাপিন্ডিতে একটি সভার আয়োজন করেছিল হাফিজের দিফা-ই-পাকিস্তান কাউন্সিল। সেখানেই দেখা গেল পাকিস্তানে নিযুক্ত প্যালেস্তিনীয় রাষ্ট্রদূত আবু আলিকে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৪:৩১
Share:

রাওয়ালপিন্ডিতে হাফিজ সইদের জনসভায় তাঁরই সঙ্গে পাকিস্তানে নিযুক্ত প্যালেস্তিনীয় রাষ্ট্রদূত (বাঁ দিকে)। ছবি সৌজন্য: নাভিদ অঞ্জুমের টুইটার অ্যাকাউন্ট।

ক’দিন আগেই যে দেশটার পক্ষে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে জেরুসালেম ইস্যুতে ভোট দিয়েছে ভারত, সেই প্যালেস্তাইনের রাষ্ট্রদূতকেই দেখা গেল মুম্বই হামলার মাস্টারমাইন্ড হাফিজ সইদের মঞ্চে। শুক্রবার পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে একটি সভার আয়োজন করেছিল হাফিজের দিফা-ই-পাকিস্তান কাউন্সিল। সেখানেই দেখা গেল পাকিস্তানে নিযুক্ত প্যালেস্তিনীয় রাষ্ট্রদূত আবু আলিকে। এবং মঞ্চে তিনি বসেছিলেন জামাত প্রধান হাফিজ সইদের পাশেই।

Advertisement

সেই ছবি ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নয়াদিল্লি। কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রকের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, “বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। নয়াদিল্লিতে প্যালেস্তাইনের রাষ্ট্রদূতের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হবে।”

প্রতিক্রিয়া যেমনই হোক, এই ঘটনা নয়াদিল্লির পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তি এবং বিড়ম্বনার কারণও যে হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। কারণ জেরুজালেম ইস্যুতে ভারত রাষ্ট্রপুঞ্জে ভোট দিয়েছে নিজের ‘স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার’ আমেরিকা এবং ক্রমশ আরও ভাল ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ হয়ে ওঠা ইজরায়েলেকে চটিয়ে ফেলার ঝুঁকি নিয়েই।

Advertisement

আরও পড়ুন: স্টোভ থেকে আগুন নিউ ইয়র্কের আবাসনে, মৃত ১২

এ মাসের গোড়ায় জেরুসালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী বলে স্বীকৃতি দিয়ে বিবৃতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঝড় ওঠে বিশ্ব জুড়ে। যে শহরকে ঘিরে ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বিরোধ, ট্রাম্পের বিবৃতিতে তা আবার উঠে আসে সামনে। বিষয়টি রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটি পর্যন্ত গড়ায়। প্রায় একঘরে হয় আমেরিকা, ইজরায়েল। ১২৭টি দেশ আমেরিকা আর ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। এর মধ্যে ভারতও ছিল। মোদী সরকারের মধ্যেও অনেকে কিন্তু ভারতের এই ভোটদানের পক্ষে ছিলেন না। অনেকেরই মত, ভারত ভোটদানে বিরত থাকালেই ভাল করত।

হাফিজ সইদ। এপি-র ফাইল চিত্র।

প্যালেস্তাইনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই সুসম্পর্ক ছিল ভারতের। কিন্তু বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই ভারত আর ইজরায়েলের সম্পর্কের উন্নতি হতে থাকে। দু’দেশের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও কূটনৈতিক চুক্তিও হয়েছে। ক’মাস আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইজরায়েল সফর এবং সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহুর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সখ্য এই সম্পর্ককে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছিল। সেই নেতানইয়াহু সরকার কিন্তু ভারতের এই ভোটদানে বেশ অসন্তুষ্টই হয়েছে। বিপক্ষে ভোটদানের প্রতিবাদও নথিভুক্ত করেছে ইজরায়েল।

আরও পড়ুন: মুশারফই মায়ের খুনি, দাবি বেনজির-পুত্রের

ইজরায়েলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অগ্রগতি অবশ্য একেবারেই ভাল ভাবে নেয়নি প্যালেস্তাইন। কিন্তু ভারত সরকার ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়েও, প্যালেস্তাইনের সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখতে চেয়েছে। এ বছরের শুরুতেই প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ভারত সফরে এসেছিলেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্যালেস্তাইনের রামাল্লায় মোদীর যাওয়ার কথা রয়েছে। যদি যান, এটাই হবে প্যালেস্তাইনে তাঁর প্রথম সফর। যখন নয়াদিল্লি ও রামাল্লার মধ্যে মোদীর সফর নিয়ে আলোচনা চলছে, ঠিক সেই সময়েই হাফিজ সইদের সভায় প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতি দু’দেশের সম্পর্কের মধ্যে একটা টানাপড়েন তৈরি করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শুক্রবার হাফিজের যে সভায় গিয়েছিলেন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রদূত, সেটি ছিল ট্রাম্পের জেরুসালেম ঘোষণার প্রতিবাদেই। কিন্তু ইস্যু যাই হোক, যে হাফিজ সইদ ২৬/১১-র মুম্বই হামলার মাস্টারমাইন্ড, যে ভারতের বিরুদ্ধে লাগাতার বিষোদ্গার করে চলেছে, ভারতকে অশান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেই হাফিজের সভায় হাজির হয়ে কী বার্তা দিতে চাইলেন আবু আলি? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। শুধু তাই নয়, শুক্রবারের ওই সভা থেকে কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধেও আওয়াজ উঠেছে।

এমনিতেই মোদী সরকারের একটা অংশ ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইন- এই ‘দু নৌকা’ ছেড়ে, শুধু ইজরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্কেই জোর দেওয়ার পক্ষপাতি। প্যালেস্তিনীয় রাষ্ট্রদূতের ঘটনা সেই দাবিকে আরও জোরাল করবে সন্দেহ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন