International News

সন্ত হলেন মাদার টেরিজা, আবেগে ভাসল ভ্যাটিকান থেকে কলকাতা

ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে রবিবার মাদার টেরিজাকে সন্ত হিসাবে স্বীকৃতি দিলেন পোপ ফ্রান্সিস। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্যাটিকানে আসা হাজার হাজার মানুষ সেন্ট পিটার্সের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৬:৪৪
Share:

সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে মাদারের ছবি।

ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে রবিবার মাদার টেরিজাকে সন্ত হিসাবে স্বীকৃতি দিলেন পোপ ফ্রান্সিস। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্যাটিকানে আসা হাজার হাজার মানুষ সেন্ট পিটার্সের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী ছিলেন। ৫ সেপ্টেম্বর মাদারের ১৯তম মৃত্যুদিন। তার ঠিক আগের দিন রোমে ‘বিয়েটিফিকেশন’ অনুষ্ঠানে মাদারকে ‘সন্ত’ ভূষিত করলেন পোপ ফ্রান্সিস। আগেই শান্তির জন্য নোবেল পেয়েছিলেন, ভারত সরকার তাঁকে ভারতরত্ন দিয়েছিল, এ দিন সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করা হল মাদারকে।

Advertisement

গত ডিসেম্বরে ভ্যাটিকানের তরফে জানানো হয়েছিল, সন্ত হওয়ার প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করেছেন মাদার টেরিজা। ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌দু’টি ঘটনাকে অলৌকিক বলে স্বীকৃতি দেয় ভ্যাটিকান এবং সর্বশেষে পোপ। সন্ত হওয়ার শর্ত হিসেবে প্রথম ঘটনা ঘটে ১৯৯৮ সালে। পশ্চিমবঙ্গের এক আদিবাসী মহিলা মণিকা বেসরার পেটের টিউমার সেরেছিল মাদার টেরিজার নামে প্রার্থনা করে। অন্যটি ঘটে ২০০৮ সালে।

আনন্দ ও আবেগের এই মুহূর্তটাকে ফ্রেমবন্দি করেছে কলকাতাও। শহরের মাদার হাউজে প্রার্থনা হয়। সন্তায়ন অনুষ্ঠান দেখতে হাজির হয়েছিলেন অনেকেই। ব্যবস্থা করা হয় জায়ান্ট স্ক্রিনের।

Advertisement


সেন্ট পিটার্সে হাজির হয়েছেন অগণিত মানুষ। ছবি: এপি।

মাদারের সন্ত হওয়ার অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে আগেই রোমে পৌঁছে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন অনুষ্ঠান শুরুর আগে পায়ে হেঁটে রোম থেকে ভ্যাটিকান পৌঁছন তিনি। সঙ্গে ছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন-সহ আরও অনেকে। রোম থেকে ভ্যাটিকানের যাত্রাপথে তাঁকে গাইতে শোনা গেল ‘আগুনের পরশমণি’, ‘মঙ্গল দীপ জ্বেলে’ গানগুলি। তাঁর সঙ্গে সুর মেলালেন বাকিরাও।

এ ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে হাজির ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল।

মাদার টেরিজার জন্মস্থান স্কোপেতেও অগণিত মানুষ তাঁর সন্ত হওয়ার আনন্দে মাতেন।


সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে পোপ ফ্রান্সিস।ছবি: রয়টার্স।

জন্মসূত্রে আলবেনীয় বাবা নিকোলা এবং মা দ্রানা বোজাজিউর পাঁচ সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ গন্জা অ্যাগ্নেসের জন্ম ২৬ অগস্ট ১৯১০। ১৯২৮-এর সেপ্টেম্বরে রাথফার্নহাম মঠের উদ্দেশে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে যাত্রা করেন। সেখানে তাঁর নাম হয় সিস্টার টেরিজা। ওই বছর ডিসেম্বরে জাহাজে চেপে রওনা হন ভারতের লোরেটো আশ্রমের দিকে। ১৯২৯-এর ৬ জানুয়ারি কলকাতায় পৌঁছন। সেখান থেকে দার্জিলিং। ১৯৩১-এর ২৫ মে বিশেষ উপাসনার অনুষ্ঠানে সিস্টার টেরিজা প্রথম সন্ন্যাসব্রত নেন। এর পর এন্টালির লোরেটো কনভেন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। সেখানে সেন্ট মেরিজ স্কুলে ভূগোল এবং ধর্ম বিষয়ে পড়াতে থাকেন। কড়া এবং দয়ালু প্রকৃতির সিস্টার টেরিজা শিক্ষক হিসেবে ছাত্রীদের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯৪৪ সালে সেন্ট মেরিজের অধ্যক্ষা হন।


মিশনারিজ অব চ্যারিটি, কলকাতা। ছবি: রয়টার্স।

১৯৪৬। ট্রেনে দার্জিলিং যাওয়ার পথে অন্য আহ্বান শুনতে পেলেন। সব কিছু ছেড়ে দরিদ্র, আর্ত, নিপীড়িত, অনাথদের পাশে থেকে যিশুর সেবা করার ডাক। তাতে সাড়া দিয়ে ১৯৪৮ সালে লোরেটো সঙ্ঘের কালো গাউন ছেড়ে নীল পাড় সাদা শাড়ি পরলেন। ১৯৫০-এর ৭ অক্টোবর তৈরি হল মিশনারিজ অব চ্যারিটি। তার পর এক লম্বা যাত্রাপথ। মাদারের উদ্যোগে একে একে তৈরি হল ‘নির্মল হৃদয়’, ‘শিশু ভবন’, ‘প্রেমদান’, ‘দয়াদান’, কুষ্ঠরোগীর আশ্রম। সাহায্যের জন্য ছুটে গিয়েছেন এক দেশ থেকে অন্য দেশ। তারই স্বীকৃতিতে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান ১৯৭৯ সালে।


উত্তর ২৪ পরগনার মাইকেল নগরে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

আরও পড়ুন: ভ্যাটিকানে মাদার টেরিজার সন্তায়নের ছবি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন