Afghanistan

Afghanistan Crisis: গনিকে কোনও দিন ক্ষমা করতে পারব না

Advertisement

বেহিসাতা আয়ুবি

কাবুল শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২১ ০৬:২৩
Share:

ফাইল চিত্র।

কুড়ি বছর আগের কথা। তখন আমার বয়স মেরেকেটে পাঁচ। ছোট প্যান্ট পরে রাস্তায় বেরিয়েছিলাম বলে এক তালিবের হাতে মার খেতে হয়েছিল। শৈশবের সেই স্মৃতি আজও আমায় তাড়া করে বেড়ায়। বিদেশি বাহিনী এসে যখন দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছিল, আতঙ্কের দিনগুলো ভুলতে বসেছিলাম। তালিবান যে কোনও দিন ফের গোটা দেশের দখল নিয়ে বসবে, দুঃস্বপ্নেও কোনও দিন কামনা করিনি।

Advertisement

অথচ সেই দুঃস্বপ্নই আজ আমাদের মতো সাধারণ আফগান নাগরিকের কাছে ঘোর বাস্তব। মাত্র দেড় সপ্তাহে গোটা দেশের পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে। আর আমার প্রিয় কাবুল শহর যেন মাত্র কয়েক দিনেই ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। মনে হচ্ছে ভয়ের কোনও ছবি দেখছি। রাস্তাঘাট, দোকান-বাজার সব শুনশান। মেয়েদের তো আগেও পোশাকের জন্য সমালোচনা শুনতে হত। এখন তাঁরা হিজাব আর বোরখা ছাড়া বেরনোর কথা ভাবতেই পারছেন না। ছেলেরা বিদেশি পোশাক পরলেও তাঁদের মারধর করা হচ্ছে। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে গান শোনাও বারণ। শহরের প্রতিটি নাগরিক যেন দেশ ছেড়ে পালাতে চান এখন।

আমাদের মতো মহিলা সাংবাদিকেরা তো একা বাড়ির বাইরে পা রাখারই সাহস পাচ্ছেন না। কী ভাবে এত দ্রুত ওরা আমাদের রাজধানীর দখল নিল, ভেবে এখনও অবাক হচ্ছি। তবে দেশের মানুষের একাংশের ধারণা, এটা কোনও দুর্ঘটনা নয়। পুরোটাই আগে থেকে পরিকল্পনা করা। কে তাতে মদত দিল, আমাদের কাছে তা এখনও তেমন পরিষ্কার নয়। একটা কথা বলতে পারি, আশরফ গনি আমাদের সঙ্গে যা করলেন, কোনও দিন ক্ষমা করতে পারব না ওঁকে।

Advertisement

তবে আগাম পরিকল্পনা ছাড়া গোটা দেশের দখল নেওয়া তালিবানের পক্ষেও সহজ ছিল না। ওরা আমাদের মাতৃভূমিকে জোর করে দখল করে নিয়েছে। আমরা সাধারণ আফগানরা কখনও তালিবানকে নিজেদের লোক বলে মনেই করি না। ওদের আমরা শুধু ঘৃণা করি। আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম এখন কোনও খবর দেখাতে বা ছাপতে ভয় পাচ্ছে। টিভি চ্যানেলে শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। গান-বাজনা, সিনেমা সব এক ধাক্কায় বন্ধ।

কুড়ি বছর ধরে একটু একটু করে পাল্টে যাওয়া আফগানিস্তান আবার পিছনে ফিরে গিয়েছে। দেশের মেয়েদের অধিকারের জন্য লড়ব বলে সাংবাদিক হয়েছিলাম। মানবতার স্বার্থে লড়ব বলে সাংবাদিক হয়েছিলাম। আফগান মেয়েদের কণ্ঠস্বর হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সব চেষ্টা জলে চলে যাচ্ছে। কিছু দিন আগে হেরাটে এক সাংবাদিকের তুতো ভাইকে তালিবান গুলি করে মেরেছে। বছর কয়েক আগে উত্তরের এক প্রদেশে দখল নেওয়ার পরে এক মহিলা সাংবাদিকের বাবাকে তালিবান খুন করছিল। শুধুমাত্র মেয়েটি সাংবাদিকতা করেন বলেই খুন হতে হয় তাঁর বাবাকে। তাই আমিও পরিবারের কথা ভেবে আর দেশে থাকতে চাইছি না। আত্মীয়দের কথা ভেবে ভেবে রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে এই বয়সেই। প্রবল মানসিক অবসাদে ভুগছি। নেটো আর আমেরিকান বাহিনীর সঙ্গে কারা এত দিন কাজ করেছেন, তাঁদের খুঁজে বেড়াচ্ছে তালিবান।

আপাতত আমেরিকা, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো কোনও দেশে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। জানি না কবে অনুমতি পাব। পেলেও বা বিমানবন্দর পর্যন্ত কী করে পৌঁছব জানি না।

(লেখক কাবুলে কর্মরত সাংবাদিক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন