নরেন্দ্র মোদী এবং ইমরান খান।ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানে ইমরান সরকারের এক সপ্তাহ গড়ানোর আগেই তৈরি হল বিতর্ক। নয়া বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির এক মন্তব্য নিয়ে ভারতে আলোড়ন তৈরি হতেই কার্যত একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেল পাক বিদেশ মন্ত্রক! ওই মন্তব্য নিয়ে বিতর্কের দায় চাপাল ভারতের সংবাদমাধ্যমের উপরে।
গত ১৮ অগস্ট ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর মোদী সে দিনই তাঁকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। বক্তব্য ছিল, উপমহাদেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে ইতিবাচক এবং অর্থবহ যোগাযোগ তৈরি করতে এবং প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইমরান ভোটে জেতার পরে দুই নেতার মধ্যে ফোনে গোটা অঞ্চলকে সন্ত্রাসবাদমুক্ত করে শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা নিয়ে যে কথা হয়েছিল, তারও উল্লেখ করা হয় ওই চিঠিতে।
পাকিস্তানে নয়া সরকার আসার পর দিল্লির তরফ থেকে ধারাবাহিক ভাবে যে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া হচ্ছে, তার সঙ্গে এই চিঠি সঙ্গতিপূর্ণ বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা। কিন্তু বিষয়টি ঘেঁটে যায় পাক বিদেশমন্ত্রীর প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে। পারভেজ মুশারফেরও বিদেশমন্ত্রী ছিলেন এই কুরেশি। মুম্বই হামলার দিন দৌত্য উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন নয়াদিল্লিতে। নয়া জমানায় বিদেশমন্ত্রী হয়ে প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে বোমা ফাটান কুরেশি। দাবি করেন, ইমরানকে চিঠি লিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন!
পাক দৈনিকের মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর স্বাভাবিক ভাবেই প্রবল আলোড়ন তৈরি হয় ভারতে। মোদী সরকার পাক প্রসঙ্গে জল মাপছে ঠিকই, কিন্তু সরাসরি চিঠি লিখে নিজেদের অবস্থান এবং ঠেকে পাওয়া শিক্ষাকে অগ্রাহ্য করে ইমরানের সঙ্গে ‘আলোচনা’ শুরু করে দিচ্ছে— এমন খবরে চূড়ান্ত বিস্ময় তৈরি হয় কূটনৈতিক ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে।
কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বিদেশ মন্ত্রক জানায়, মোদী গত ১৮ অগস্ট ইমরানকে চিঠি লিখেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাতে আলোচনার আমন্ত্রণ জানানোর কোনও কথা ছিল না। কিন্তু যে নাটকীয় চাপানউতোরের জেরে বিদেশ মন্ত্রককে আজ এই চিঠি সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করতে হল, তাতে মিশে রইল বেশ খানিকটা তিক্ততার সুর।
এ নিয়ে কূটনৈতিক আলোড়নের পর তড়িঘড়ি একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ করেছে পাক বিদেশ মন্ত্রক। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একাংশ অযথা বিতর্ক তৈরি করছে। উভয়ের দেশের স্বার্থেই সমস্ত বকেয়া বিষয় নিয়ে অবাধ আলোচনার দিকে ইসলামাবাদ তাকিয়ে রয়েছে। পাক বিদেশমন্ত্রী আদৌ বলেননি, মোদী আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। পাক বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, কুরেশি বলেছিলেন, ইতিবাচক যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য আলোচনাই একমাত্র পথ।