আগামী শুক্রবার নেপাল সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রতিবেশী প্রশ্নে কোণঠাসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষত মেরামতির লক্ষ্যে আগামী শুক্রবার নেপাল সফরে যাচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু কাঠমান্ডুর মন জয়ের প্রশ্নে তাঁর সামনে বিস্তর বাধা। কূটনীতির জগতের লোকজন বলছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক মতপার্থক্য ক্রমেই বাড়ছে। চিনের প্রভাব থেকে নেপালকে মুক্ত করার চেষ্টাতেও সাফল্য পাওয়ার আশা কম। তিক্ততা কাটিয়ে কতটুকু বরফ শেষ পর্যন্ত গলাতে পারেন মোদী, প্রশ্ন সেটাই।
সকাল দেখে নাকি গোটা দিনের আঁচ পাওয়া যায়। মোদী সফরের আগে যে আঁচ পাওয়া যাচ্ছে তাতে খুব একটা প্রসন্নতার কারণ নেই সাউথ ব্লকের। দু’দেশের মধ্যে যতই বৈরিতা থাকুক, রাষ্ট্রনেতাদের সফরের মুখে অন্তত কটু বাক্যবিনিময় হয় না। সেই রেওয়াজ কিন্তু ভঙ্গ হল মোদীর নেপাল সফরের আগে। গত সপ্তাহেই দু’টি ক্ষেত্রে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলি কড়া সমালোচনা করেন ভারতের। গত সোমবার বুদ্ধপূর্ণিমার দিন ভারতীয় বৌদ্ধদের এক অনুষ্ঠানে মোদী দাবি করেন, গৌতম বুদ্ধর জন্ম ভারতেই। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই কড়া স্বরে কে পি ওলি বলেন, ‘‘কিছু দেশ রয়েছে যারা গুজব ছড়াতে ব্যস্ত যে নেপালের লুম্বিনীতে বুদ্ধ জন্ম নেননি।’’ তিক্ততা বেড়েছে আরও একটি কারণে। নেপালের প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন মোদীর সফরসূচিতে লুম্বিনী থাকুক। মোদী রাজি হননি।
নেপালকে আকাশপথের অধিকার দেওয়া নিয়েও সম্প্রতি ভারতের ভূমিকার প্রকাশ্য সমালোচনা করেছেন ওলি। চিনা সহযোগিতায় তিনটি নতুন বিমানবন্দর তৈরি করতে চলেছে কাঠমান্ডু। এর দু’টি ভারতীয় সীমান্তের কাছে। কিন্তু নেপাল এয়ারলাইন্সকে ভারতীয় আকাশপথে একটি নির্দিষ্ট রুট-এর বেশি দিতে রাজি হচ্ছে না নয়াদিল্লি।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মোদীর নেপাল সফরের ঠিক পরেই চিনে যাচ্ছেন ওলি। সঙ্গে থাকছে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার লম্বা ফর্দ, যা ভারতের মুখ ভার করার পক্ষে যথেষ্ট। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ওই তালিকার অন্তত দু’টি প্রকল্প বন্ধ করতে কাঠমান্ডুর উপর চাপ দেবে সাউথ ব্লক। ওলিকে বোঝানো হবে যে এগুলির সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। এর একটি হল চিনের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে লুম্বিনী পর্যন্ত সম্প্রসারণ। দ্বিতীয়টি হল, চিনা উদ্যোগে ৯০০ মেগাওয়াট বোধি গন্ডকী জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু করা। ভারত চাইছে এই প্রকল্পে নিজেরাই সামিল হতে।
তবে এই মুহূর্তে বিদেশ মন্ত্রকের খুব বড় আশাবাদী কর্তাও ভাবছেন না, মোদীর কথা শুনে বাধ্য ছেলের মত কাঠমান্ডু বেজিংয়ের সঙ্গে সর্বাত্মক যোগাযোগে ক্ষান্ত দেবে। বরং এ কথাও শোনা যাচ্ছে যে, মোদী প্রথমেই কাঠমান্ডু না গিয়ে তরাই অঞ্চলের (রামায়ণে বর্ণিত) জনকপুরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে কিছুটা ভুল বার্তা গিয়েছে সে দেশে। এই তরাই অঞ্চলের বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়েই নেপালে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রফতানি বনু্ধ করেছিল ভারত— এমনটাই মনে করেন অনেক নেপালি। মোদীর জনকপুর যাত্রায় নেপালে ভারত-বিরোধী মনোভাব বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন কূটনীতির লোকজন।