প্রতীকী ছবি।
ছোট ছোট কয়েকটা নোটবুক। যার পাতায় পাতায় সিআইএ অফিসারদের আসল নাম-ঠিকানা আর ফোন নম্বর! হাতে লেখা। নোটবুকের মালিক নিজেও গুপ্তচর ছিলেন। সেই চাকরিটা ছেড়েছেন ১১ বছর আগে। অথচ তার পরেও অবৈধ ভাবে এমন বহু গোপনীয় তথ্য নিজের কাছে রেখে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল বছর তিপান্নর চিনা বংশোদ্ভূত জেরি চুন শিং লি-কে। চিনে একাধিক সিআইএ-র চর খুন হওয়ার সঙ্গে এই গ্রেফতারির যোগ রয়েছে বলে ধারণা মার্কিন গোয়েন্দাদের।
১৯৯৪ থেকে ২০০৭— পাক্কা ১৩ বছর সিআইএ-র হয়ে কাজ করেছেন লি। তার পর চাকরি ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে হংকংয়ে চলে যান। সোমবার নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে নামামাত্রই তাঁকে আটক করা হয়। হংকং থেকে এর আগেও দু’বার আমেরিকায় এসেছিলেন লি। প্রথম বার সস্ত্রীক ২০১২-য়। মার্কিন বিচার বিভাগের দাবি, সেই সময়েই এফবিআই গোয়েন্দারা লি-র হোটেলে তল্লাশি চালিয়ে বিস্ফোরক ওই সব নোটবুক হাতে পান। আমেরিকায় এলে মূলত হাওয়াই আর ভার্জিনিয়ায় থাকতেন লি। ২০১৩-তেও এসেছিলেন। একা। সে বার পার পেয়ে গেলেও, এ বার গ্রেফতার হলেন গোড়াতেই। আগের দু’বার কী ভাবে লি পালিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট করেননি গোয়েন্দারা। এ বার জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্য নিজের কাছে বেআইনিভাবে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিচার বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত জেলও হতে পারে প্রাক্তন এই সিআইএ কর্তার।
মঙ্গলবার ব্রুকলিনের কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয় লি-কে। সময় মতো আইনজীবী পৌঁছননি বলে, এখনও তাঁর পক্ষে কোনও আর্জি জমা পড়েনি। তবে লি-র আমেরিকায় বারবার ফিরে আসার বিষয়টি ভাবাচ্ছে এফবিআই-কে। ২০১০ থেকে দু’বছরের মধ্যে চিনে অন্তত ২০ জন সিআইএ চরকে হয় খুন করা হয়েছে, না হয় জেলে ভরা হয়েছে। তার পর থেকেই সে দেশে কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থার নেটওয়ার্ক।
অথচ এই নেটওয়ার্ক এক দিনে গড়ে ওঠেনি। সিআইএ সূত্রের খবর, কমিউনিস্ট সরকারের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার কারণে চিনে চর তৈরি করাই বেশ কঠিন। সে দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বিভাগের কর্তা ও কর্মীদের একাংশকে চর বানাতে প্রচুর সময় ও অর্থব্যয় করতে হয়েছিল বলে দাবি গোয়েন্দাদের। আর রাতারাতি সেই সব সূত্র লোপাট হওয়াকে তাই মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগে সাম্প্রতিক কালের সব চেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় বলে মনে করা হয়। ২০১২-য় এর তদন্তে নামে এফবিআই। তবে গোটা ব্যাপারটার পিছনে কোনও ডবল-এজেন্টের হাত আছে, নাকি বেজিংয়ের হ্যাকিং— এখনও ধন্দে গোয়েন্দারা। সে ক্ষেত্রে লি-র গ্রেফতারি একটা বড় সূত্র বলে আশা প্রশাসনের।
তবে ২০১৩-য় শেষ বার আমেরিকা ছাড়ার আগে লি-কে অন্তত পাঁচ দফা জেরা করেছিল এফবিআই। এক বারও তিনি ওই সব নোটবুক রাখার কথা স্বীকার করেননি। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত মার্কিন সেনাবাহিনীতেও চাকরি করেছেন লি। পরে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে যোগ দেন গুপ্তচর সংস্থায়। সেখানে এক দশকেরও বেশি চাকরিতে নানাবিধ গোপনীয় দায়িত্ব সামলেছেন লি। তাই এই জাতীয় বিস্ফোরক নোটবুক তাঁর কাছে আরও থাকতে পারে বলেও অনুমান গোয়েন্দাদের।