মধ্যবর্তী নির্বাচন

আজ পরীক্ষা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের, চাপে রিপাবলিকানরা, অস্বস্তি ডেমোক্র্যাটদেরও

রাত ফুরোলেই ভোট। এর মধ্যে বিস্তর মোড়-বদল হয়েছে দু’টি ক্ষেত্রেই। কূটনীতিকদেরই একাংশ তবু মানছেন, এখনও সমান তাৎপর্যপূর্ণ ক্যারাভান ও ক্যাভানভ। মেক্সিকো থেকে আসা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মার্কিন নিরাপত্তাবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ার অভিযোগ উঠেছিল।

Advertisement

প্রমথেশ চট্টোপাধ্যায়

সল্টলেক সিটি (উটা) শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৮ ০১:২৭
Share:

ক্যারাভান আর ক্যাভানভ। এই দু’টো বিষয় যে মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিশেষ ভূমিকা নিতে চলেছে, প্রচারেই সেটা বলে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসি়ডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

Advertisement

ক্যারাভান মানে, সম্প্রতি মধ্য আমেরিকা থেকে মেক্সিকোয় আছড়ে পড়া শরণার্থীদের ঢেউ। যে ঢেউ মার্কিন সীমান্তেও পৌঁছেছে। আর ক্যাভানভ হলেন ব্রেট ক্যাভানভ। যৌন কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানোর পরেও যাঁকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।

রাত ফুরোলেই ভোট। এর মধ্যে বিস্তর মোড়-বদল হয়েছে দু’টি ক্ষেত্রেই। কূটনীতিকদেরই একাংশ তবু মানছেন, এখনও সমান তাৎপর্যপূর্ণ ক্যারাভান ও ক্যাভানভ। মেক্সিকো থেকে আসা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মার্কিন নিরাপত্তাবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ার অভিযোগ উঠেছিল। প্রেসিডেন্ট পাল্টা তোপ দেগেছিলেন— ‘‘ওদের গুলি করে মারা উচিত।’’ কিন্তু ভোট বড় বালাই। যে কারণে দিন দুয়েকের মধ্যে সুর নামিয়ে ট্রাম্পকে বলতে হল, দেশে সুশাসন বজায় রাখতে উচ্ছৃঙ্খল শরণার্থীদের গ্রেফতার করলেই হবে। তবে ডেমোক্র্যাটরা আদতে আমেরিকার সীমান্ত তুলে দিতে চাইছে বলে কালও অভিযোগ শানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট । এ সবে তাঁর দলের কতটা লাভ হবে, সেটা অস্পষ্টই।

Advertisement

এ দিকে, এফবিআই-এর ক্লিনচিট এবং সেনেটে রিপাবলিকানদের ভোটে ক্যাভানভ ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছে গিয়েছেন। ঠিক যেমন চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। বিচারপতি নিয়োগের সাংবিধানিক অধিকার সেনেটের হাতে এবং সেখানে এখনও পর্যন্ত ট্রাম্পের দলেরই পাল্লা ভারী। সমীকরণটা কালও এক থাকবে তো? দেশ জুড়ে #মিটু-র আবহে প্রশ্নটা উঠছে রিপাবলিকান দলেরই অন্দরে। ট্রাম্প কিন্তু চেষ্টায় ত্রুটি রাখছেন না। সম্প্রতি ক্যাভানভের বিরুদ্ধে অন্য এক অভিযোগকারিণী যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে নিয়েছেন। ভোটের ঠিক মুখে তাঁকে দিয়ে ওই অভিযোগ করাল কারা, ডেমোক্র্যাটদের নিশানা করেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন ট্রাম্প।

আরও পড়ুন: মার্কিন ভোটে ভারতীয়রাও

কাল সেনেটের ১০০টি আসনের মধ্যে ভোট হবে ৩৫টি আসনে। আর হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসে ভোট সব ক’টি অর্থাৎ ৪৩৫টি আসনেই। হাউসের দখল নিতে হলে বিরোধী পক্ষকে অন্তত ২৩টি আসনে জিততেই হবে। ৩০ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বরের মধ্যে হওয়া বেশ কয়েকটি জনমত সমীক্ষা বলছে, ২২৫টি আসনে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে চলেছে ডেমোক্র্যাট দল। তবে সমীক্ষকরা এখনও ১৩টি আসন যে কারও পক্ষে যেতে পারে বলে মনে করছেন। তাই ট্রাম্পকে চাপে ফেলার মতো ‘নীল ঝড়’ উঠবেই, নিশ্চিত করতে পারছেন না অতি বড় ডেমোক্র্যাট-সমর্থকও।

মার্কিন রাজনীতির ইতিহাস বলছে, মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রায়শই শাসক দলের বিরুদ্ধে যায়। এ বারও তেমন হলে চলতি মেয়াদের বাকি দু’বছর কিন্তু ট্রাম্পের পক্ষে কঠিন হতে চলেছে বলেই মত কূটনীতিকদের। আজ ট্রাম্পের মন্ত্রণাদাতারা বৈঠক করে বুঝিয়েছেন, কংগ্রেস বা সেনেটে রিপাবলিকানরা হারলে তাঁর বিভিন্ন নীতির ভবিষ্যৎ কী হতে পারে।

বাড়তে থাকা বন্দুকবাজের দৌরাত্ম্য বা ভোটের ঠিক মুখে ডেমোক্র্যাটদের ঠিকানায় পার্সেল বোমা পাঠানোর ঘটনায় রিপাবলিকানরা যথেষ্ট চাপের মুখেই বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমে কাজ করা সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি খুনের তদন্তে ট্রাম্পের ‘গা-ছাড়া মনোভাব’ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারপার্সন রোনা ম্যাকড্যানিয়েল দেশের ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন’কেই তুরুপের তাস হিসেবে দেখাতে চাইছেন। তাঁর কথায়, ‘‘গত দু’বছরে দেশে কী হয়েছে, সে দিকে তাকিয়েই কাল লাইনে দাঁড়াবেন নাগরিকরা। ওঁরাই বলছেন, এখন হাতে অর্থ এসেছে। চাকরি ফিরেছে।’’

দু’দলের সামনে এখন একটাই সমস্যা। যাঁদের জন্য এত প্রচার, এক অস্ত্র শান দেওয়া, সেই ভোটাররা কাল বুথে পৌঁছবেন তো? কিন্তু ২০১৪-র মধ্যবর্তী নির্বাচনে যে মাত্র ৩৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন