International News

আক্রমণাত্মক পথে ট্রাম্প, মরিয়া হয়ে সমঝোতার রাস্তা খুঁজছে উদ্বিগ্ন চিন

চিনের কমিউনিস্ট পার্টি বুঝতে পারছে না, হাসা উচিত, নাকি কাঁদা উচিত। আমেরিকার চিন বিশেষজ্ঞরা আড়ালে-আবডালে এখন এমনই বলছেন। চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম বা কমিউনিস্ট পার্টির ট্যাবলয়েডে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা সমৃদ্ধ প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে না, এমন দিন আজকাল কমই আসে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ১৯:০৭
Share:

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি চাপ ক্রমশ বাড়াচ্ছে চিনের উপর। —ফাইল চিত্র।

চিনের কমিউনিস্ট পার্টি বুঝতে পারছে না, হাসা উচিত, নাকি কাঁদা উচিত। আমেরিকার চিন বিশেষজ্ঞরা আড়ালে-আবডালে এখন এমনই বলছেন।

Advertisement

চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম বা কমিউনিস্ট পার্টির ট্যাবলয়েডে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা সমৃদ্ধ প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে না, এমন দিন আজকাল কমই আসে। ট্রাম্প জমানায় কী ভাবে আমেরিকায় ‘গণতন্ত্রের হত্যা’ শুরু হয়েছে, প্রায় রোজই নিজেদের সংবাদপত্রের কোনও না কোনও প্রতিবেদনে এ কথা প্রমাণ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে চিন।

কিন্তু প্রবীণতম তথা সবচেয়ে অভিজ্ঞ চিনা কূটনীতিক ইয়াং জিয়েচির সাম্প্রতিকতম আমেরিকা সফরের বিবরণ সামনে এলে মনে হচ্ছে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে মিত্রতা ছাড়া অন্য কোনও রকমের সম্পর্কের কথা ভাবতেই পারে না বেজিং।

Advertisement

সোমবার আমেরিকা গিয়েছিলেন ইয়াং জিয়েচি। দু’দিনের সফর। একগুচ্ছ কর্মসূচি ছিল। চিন-আমেরিকা কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি এবং বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে জিয়েচির একাধিক বৈঠক হয়েছে বলে খবর। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গেও দেখা করেছেন জিয়েচি। চিনা কূটনীতিকের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দীর্ঘ বৈঠক করেননি। কিন্তু বৈঠকের জন্য যে সংক্ষিপ্ত সময় বরাদ্দ হয়েছিল, তার মধ্যেই বেজিং-এর তরফ থেকে সুসম্পর্কের বার্তা দিয়ে এসেছেন ইয়াং জিয়েচি।

আমেরিকার স্বার্থে আঘাত লাগতে পারে এমন কোনও ইস্যুতে বিন্দুমাত্র সমঝোতার রাস্তায় হাঁটতে চান না ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই একরোখা নীতিই চিনের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। —ফাইল চিত্র।

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলতেন, একবিংশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক হল আমেরিকা-চিন সম্পর্ক। মার্কিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপেক্ষাকৃত উদারবাদী ওবামার সেই মন্তব্যের তাৎপর্য চিন বোঝেনি। কট্টরবাদী ট্রাম্প এবং তাঁর সমপরিমাণ কট্টরবাদী ক্যাবিনেট ওয়াশিংটন ডিসির দখল নেওয়ার পর আঁচটা টের পাচ্ছে বেজিং। নির্বাচনী প্রচারেই চিন সম্পর্কে নিজের কড়া অবস্থানের কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। জয়ের পর তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলে চিনের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দেন তিনি। ট্রাম্পের বিদেশ সচিব রেক্স টিলারসন আরও এক ধাপ এগিয়ে ইঙ্গিত দেন, দক্ষিণ চিন সাগরের জলসীমা নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে, প্রয়োজন হলে আমেরিকা তার সামরিক সমাধানও খুঁজতে পারে।

এমন নয় যে ট্রাম্প এবং তাঁর ক্যাবিনেটের অন্য সদস্যদের গরম গরম মন্তব্য চুপচাপ হজম করে গিয়েছে চিন। ওয়াশিংটনের প্রতিটি আস্ফালনে পাল্টা আস্ফালন করেছে বেজিং। তাইওয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে আমেরিকা ‘এক চিন’ নীতিকে অগ্রাহ্য করলে ফল ভাল হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিং-এর ‘সার্বভৌমত্ব’কে অস্বীকার করার চেষ্টা আগুন নিয়ে খেলার সামিল হবে, এমন মন্তব্যও করা হয়েছে বেজিং-এর তরফে। কিন্তু কড়া কড়া মন্তব্যে স্নায়ুর লড়াই চালানোর পাশাপাশি অন্য পথে আমেরিকার সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টাও যে চিন চালিয়ে যাচ্ছে, ইয়াং জিয়েচির সাম্প্রতিক আমেরিকা সফর তারই প্রমাণ। বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন: কানসাসের ঘটনা নিন্দনীয়, অবশেষে মুখ খুললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট

আমেরিকার সঙ্গে চিনের বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। দু’দেশের স্বার্থ জড়িত রয়েছে এতে। দু’দেশই এই বাণিজ্য থেকে লাভবান হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্যিক সম্পর্কটা রয়েছে বলেই চিন-মার্কিন সম্পর্কে স্থিতিশীলতাটা এখনও রয়েছে। ওই আদানপ্রদান না থাকলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হত। কিন্তু সেই পরিস্থিতিটাও ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চিন ও আমেরিকার মধ্যে এত দিন যে আদাপ্রদান ছিল, এখন অনেক ক্ষেত্রেই তা সঙ্ঘাতের পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। তাই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার নতুন নতুন পন্থা খুঁজতে হচ্ছে এই দুই দেশকে। সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনার মঞ্চে চিন-আমেরিকা কাছাকাছি আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু বেজিং মনে করছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্থিতিশীলতা ধরে রাখার জন্য ওইটুকু সম্পর্ক যথেষ্ট নয়। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র প্রাক্তন চিন বিশেষজ্ঞ তথা বর্তমানে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার জনসনের কথায়, ‘‘জয়বায়ু পরিবর্তন ছাড়াও অন্য কোনও একটা বিষয় চিন খুঁজে বার করতে চাইছে, যাতে সম্পর্কটাকে ধরে রাখার মতো আঠা রয়েছে।’’

কিন্তু চিনের তরফে এই ব্যগ্রতা কেন? আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদেরা বলছেন, চিন বড় শক্তি হয়ে উঠলেও, আমেরিকা হয়ে উঠতে এখনও অনেকটা দেরি আছে। এত দিন আমেরিকায় যে সব সরকার এসেছে, চিনের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে কূটনৈতিক রীতিনীতিকে তারা অনেক বেশি সম্মান দেখিয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খুল্লমখুল্লা। আমেরিকার স্বার্থে আঘাত লাগতে পারে এমন প্রশ্নে পৃথিবীর কোনও শক্তির সঙ্গে আপসে যেতে প্রস্তুত নন ট্রাম্প। তার জন্য যে কোনও পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে প্রস্তুত তিনি। প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর ক্যাবিনেট বার বার সেই বার্তাই দিচ্ছে। এ কথা বুঝতে পেরেই এখন ভারসাম্য খোঁজার চেষ্টায় চিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন