মায়ামিতে প্রচারে জেব। ছবি: রয়টার্স।
হোয়াইট হাউজ ‘দখল’ নিতে এমন যুদ্ধ বোধহয় আগে কখনও দেখেনি আমেরিকা। যেখানে দু’পক্ষের যুযুধান দুই সেনানীর এক জন পূর্বতন ফার্স্ট লেডি তো অন্য জনের বংশেই রয়েছেন দু’জন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি— হিলারি ক্লিন্টন এবং জেব বুশ। ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছতে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রথম জন যখন জনতার সামনে আনলেন তাঁর মায়ের জীবন যুদ্ধের গল্প, তখন দ্বিতীয় জন কি না ঝেড়ে ফেলতে চাইলেন তাঁর পদবীটাই। তবে হিলারির মতো ইনিও মাতৃবন্দনা করেই শুরু করলেন আনুষ্ঠানিক প্রচার।
ডেমোক্র্যাটিক হিলারির উইকএন্ডে প্রচার শুরুর ৪৮ ঘণ্টা পরে প্রথম নির্বাচনী প্রচার শুরু করলেন জেব। মায়ামির সেই সভায় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ওবামা প্রশাসনের মুণ্ডপাত করলেও প্রায় এড়িয়েই গেলেন সিনিয়র দুই বুশ-কে। জেবের বিখ্যাত পারিবারিক পদবীটি অদৃশ্য তাঁর নির্বাচনী লোগো এবং ওয়েবসাইটেও। যাঁর বাবা জর্জ বুশ দু’বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং এক বারের প্রেসিডেন্ট, যাঁর দাদা জর্জ বুশ জুনিয়র দু’বারের প্রেসিডেন্ট, নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারিবারিক সেই ট্র্যাডিশনই তো হতে পারত জেবের সবচেয়ে বড় ইউএসপি। পদবী ভুলতে তাহলে জেবের এই মরিয়া চেষ্টা কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে এর কারণ মূলত দু’টি। হিলারি ক্লিন্টন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে পরিবারতন্ত্রকে তুলে ধরেছিল রিপাবলিকানরা। কিন্তু রিপাবলিকানদের তরফে জেব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় সেই অস্ত্রই ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসার প্রবল সম্ভাবনা। এই কারণে জেবের মনোনয়ন পাওয়ার বিরোধিতা করেছিল তাঁর দলেরই একাংশ। দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে বড় কারণটি হল ইরাক যুদ্ধ। দাদা জুনিয়র বুশের আমলে সেই যুদ্ধকে একেবারেই ভালো ভাবে নেয়নি আম মার্কিনিরা। যার ফলে ক্ষমতা হারাতে হয় রিপাবলিকানদের। আর তাই ‘বুশ’ তকমা ঝেড়ে জেবের ‘আমি তোমাদেরই লোক’ হওয়ার মরিয়া চেষ্টা।
মায়ামির প্রচারের একেবারে শেষ দিকে অবশ্য তাঁদের পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা বলেছেন জেব। তাঁর কথায়, “আমি সেই লোক যে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে এক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দেখেছি, এবং হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে দ্বিতীয় প্রেসিডেন্টকে।” আর এর পরেই আনেন তাঁর মায়ের কথা। বলেন, “আর এ বার আমি সেই ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় করাব, যিনি এই দুই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়েছেন।” উপস্থিত শ্রোতাদের অনুরোধ করেন প্রাক্তন ফার্স্ট লেডিকে অভিবাদন জানাতে।
তবে জেব যতই পদবীর বোঝা ঘাড় থেকে নামাতে সচেষ্ট হন, সাধারণ মার্কিনিরা যে অত সহজে তা ভুলতে দেবে না, তা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে বারেবারেই। নির্বাচনী প্রচারে তাঁকে একাধিক বার প্রশ্ন করা হচ্ছে, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ইরাক যুদ্ধ সমর্থন করতেন কি না। নির্বাচন এখনও প্রায় এক বছর বাকি। এই সময়ের মধ্যে পদবী-মাহাত্ম্য কাটিয়ে জনতার মধ্যে প্রভাব বিস্তার করাই বড় চ্যালেঞ্জ জন এলিস জেব বুশের কাছে।