খাল কেটে তালিবান এনে ঠিক হল কি, প্রশ্ন গনিকে

আপাতত গনির উদ্যোগ ঘিরে আফগানিস্তানে একাংশের মনে প্রশ্ন, তালিবান জঙ্গিদের শহরের যত্রতত্র ঢুকতে দেওয়া উচিত হল কি? সন্দিহান এই অংশটির মতে, সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তালিবান প্রবেশ ঘটিয়ে গনি ‘বড়সড় ভুল’ করেছেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কাবুল শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৮ ০৩:১৫
Share:

পথচলতি এক বাসিন্দাকে জড়িয়ে ধরল সে। তার পরে জিজ্ঞেস করল, ‘‘ভাই, বাহরিস্তানটা কোন দিকে? শুনেছি ওখানে ভাল আইসক্রিম পাওয়া যায়!’’ কাবুলের পশ্চিম দিকে এই জায়গাটি সম্পর্কে যে প্রশ্নটা করছিল, তাকে দেখে একটু থমকালেও স্থানীয় বাসিন্দারা জানেন, ইদের উৎসবে ওরাও শহরে এসেছে। তাই প্রশ্নকর্তা তালিবান জঙ্গি হলেও আলাপচারিতায় ছেদ পড়েনি। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই ঘটনা নিয়ে রীতিমতো আলোচনা হচ্ছে।

Advertisement

আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির ঘোষণা করা যুদ্ধবিরতিতে সাড়া দিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী তালিবান। যার সুবাদে কাবুলের রাস্তার মোড়ে মোড়ে উৎসবের মধ্যে চলছে নিজস্বী তোলা, আলিঙ্গন, গানবাজনা, খাওয়াদওয়া। ইদ উপলক্ষে সপ্তাহান্তে বিভিন্ন জায়গায় সেনা এবং তালিবান জঙ্গিদের ঘিরে ধরেছে নানা বয়সের শিশু। ছিলেন অনেক সাধারণ মানুষও। জঙ্গিদের অস্ত্র হাতে নিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন উৎসাহী লোকজন। কেউ আবার বুঝিয়েছেন, সাময়িক এই যুদ্ধবিরতিকে চিরস্থায়ী শান্তির পথে নিয়ে যাওয়ার কথা।

দেশের অন্দরে তো বটেই, গনির এই সাহসী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠী। আজ প্রবীণ এক কূটনীতিক বলেছেন, ‘‘গনি মার্কিন প্রশাসনের পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছেন। তা ছাড়া জঙ্গি নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি যে কার্যকরী হয়েছে, সেটা বোঝাতে মরিয়া আমেরিকাও। তাই তালিবানের সঙ্গে আলোচনা সময়ের অপেক্ষা।’’ তবে পাকিস্তান তালিবান কম্যান্ডারদের আশ্রয় দিচ্ছে বলে বহু দিন ধরে অভিযোগ করেছে আমেরিকা। সে দিকেও যাতে মীমাংসার পথে এগোনো যায়, সে ব্যাপারে পাকিস্তানের সক্রিয়তা দেখতে চায় ওয়াশিংটন।

Advertisement

কিন্তু আপাতত গনির উদ্যোগ ঘিরে আফগানিস্তানে একাংশের মনে প্রশ্ন, তালিবান জঙ্গিদের শহরের যত্রতত্র ঢুকতে দেওয়া উচিত হল কি? সন্দিহান এই অংশটির মতে, সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তালিবান প্রবেশ ঘটিয়ে গনি ‘বড়সড় ভুল’ করেছেন।

জাতীয় নিরাপত্তা গোষ্ঠীর প্রাক্তন প্রধান আমারুল্লা সালেহ বলছেন, ‘‘তালিবান যদি যুদ্ধবিরতি ভেঙে কিছু করে বসে, আমাদের কিন্তু সামলানোর মতো পরিকাঠামো নেই।’’ পার্লামেন্টেও গনি-বিরোধীরা বলছেন, ‘‘এত বড় একটা পদক্ষেপ করার আগে প্রেসিডেন্ট কোনও নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেননি। তালিবান এই চুক্তি থেকে সরে গেলে উনি কারও সমর্থন পাবেন না।’’

বহু জায়গাতেই আবার দেখা গিয়েছে তালিবানের সঙ্গে জোট বেঁধে আফগানিস্তান বা পাকিস্তানে শক্তি বাড়াচ্ছে আইএস। শনি-রবি পরপর বিস্ফোরণের পরে তালিবান গতিবিধি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা হয় আফগান শহরে। তবে জঙ্গিরা নিজেদের পতাকা হাতে ঘুরে বেড়িয়েছে স্বচ্ছন্দে, কথা বলেছে আম জনতার সঙ্গে। গনি চান, আগামী ২০ জুন পর্যন্ত এই বিরতি চলুক। আফগান তালিবান মুখপাত্র জাবিহুল্লা মুজাহিদ অবশ্য রবিবার বলেছে, ‘‘এখনও পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তিন দিনের চুক্তি শেষ হচ্ছে আজ। সোমবার থেকে অভিযান চলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন