হতাহতদের অধিকাংশই আইনজীবী ও সাংবাদিক। বিস্ফোরণের পর রক্তাক্ত সহকর্মীর স্ট্রেচার নিয়ে ছুটছেন এক আইনজীবী ও এক সাংবাদিক। ছবি: এএফপি।
পাকিস্তানের কোয়েটায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬৩। জখম অন্তত ৯২। ভয়ঙ্কর আত্মঘাতী হামলার অভিঘাতে দিশাহারা বালুচিস্তানের প্রশাসন। কোয়েটার অন্যান্য হাসপাতালেও হামলা হতে পারে বলে মনে করছে প্রাদেশিক সরকার। তাই সব হাসপাতালে জরুরি অবস্থা জারি করে দেওয়া হয়েছে। এই বিস্ফোরণের পিছনে ভারতের হাত রয়েছে বলে দাবি করেছেন বালুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সানাউল্লাহ জেহরি।
সোমবার সকালে প্রথমে হামলা হয় বালুচিস্তান বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বিলাল আনোয়ার কাসির উপর। কোয়েটা আদালতে যাওয়ার পথে অজ্ঞাত পরিচয় আততায়ীর গুলিতে খুন হন তিনি। কোয়েটা তথা বালুচিস্তানে আইনজীবী হত্যার ঘটনা নতুন নয়। গত ৩ অগস্টও এক আইনজীবী খুন হয়েছিলেন। বিলাল আনোয়ার কাসির মতো প্রভাবশালী আইনজীবীর খুনের খবর ছড়াতেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় কোয়েটায়। আইনজীবীরা এবং শুভানুধ্যায়ীরা বিলালের দেহ নিয়ে কোয়েটা সিভিল হাসপাতালে পৌঁছন। অনেক সাংবাদিকও ছিলেন ঘটনাস্থলে। বিলাল আনোয়ার কাসির দেহ নিয়ে তাঁরা হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে ঢুকতেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটায় এক আত্মঘাতী জঙ্গি। বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৩-তে পৌঁছে গিয়েছে। জখম ৯২ জন। অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, হতাহতদের মধ্যে অনেকেই আইনজীবী এবং সাংবাদিক।
রক্তাক্ত বিস্ফোরণস্থল। ছবি: এএফপি।
কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী বালুচিস্তানে এই হামলার দায় নেয়নি। তবে বালুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সানাউল্লাহ জাহেরি কোনও রকম তদন্তের তোয়াক্কা না করেই বলে দিয়েছেন, ‘‘এই বিস্ফোরণ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ ঘটিয়েছে।’’ বিস্ফোরণের প্রাথমিক তদন্তটুকুও হওয়ার আগেই যে ভাবে জাহেরি ভারতের দিকে আঙুল তুলেছেন, তা নিয়ে পাক সাংবাদমাধ্যমেও তাঁর প্রতি মৃদু কটাক্ষ দেখা গিয়েছে। বালুচিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি অবশ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থায় খামতির কথা মেনে নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভারতের বিরুদ্ধে পরমাণু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি, নিয়ন্ত্রণ রেখা মুছে দেওয়ার ডাক
বালুচিস্তানে এই আত্মঘাতী বিস্ফোরণের জেরে পাকিস্তানের অন্যত্রও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সিন্ধ প্রদেশেও হাই অ্যালার্ট জারি করেছে পুলিশ। পরবর্তী হামলার লক্ষ্য করাচি হতে পারে বলে পাক গোয়েন্দাদের আশঙ্কা। পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ কঠোর ভাষায় এই আত্মঘাতী হানার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘বহু আত্মত্যাগের মূল্যে বালুচিস্তানে শান্তি ফেরানো সম্ভব হয়েছে। সেখানে ফের অশান্তি ছড়ানোর কোনও চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।’’ গত ১৫ বছর ধরেই বালুচিস্তানে নিশানা-খুন এবং জঙ্গি হামলার পরম্পরা চলছে। দেড় দশকে প্রায় দেড় হাজারের কাছাকাছি মানুষকে নিশানা-খুন বা টার্গেট কিলিং-এর শিকার হতে হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘু শিয়া এবং হাজারা সম্প্রদায়ের মানুষের উপর হামলা হয়েছে। স্থানীয় বালোচ উপজাতি বালুচিস্তানের স্বাধীনতার দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে পাক সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে। তপ্ত বালুচিস্তানে গত দু’মাস ধরে আইনজীবীরা হামলার শিকার হচ্ছিলেন। সোমবারের বিস্ফোরণে এক সঙ্গে প্রাণ চলে গেল অনেক আইনজীবীর।