জার্মানিতেও আলিঙ্গনের পথে রাহুল

প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতেই অনুষ্ঠানের মডারেটর তুললেন সংসদে মোদীকে আলিঙ্গনের প্রসঙ্গ। ধরতাইটা পুরো দস্তুর কাজে লাগালেন রাহুল। জানালেন, তিনি যখন মোদীকে আলিঙ্গন করেন, তিনি সেটা ভাল ভাবে নেননি। এমনকি কংগ্রেসেরও কেউ কেউ বিষয়টি পছন্দ করেননি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৩০
Share:

সপ্রতিভ: রাহুল গাঁধী তাঁর বক্তৃতায় আলিঙ্গন রাজনীতির প্রসঙ্গ তুলতেই সভায় উপস্থিত এক অনাবাসী ভারতীয় দীপক কপূরের প্রশ্ন— ‘আমি কি আপনাকে আলিঙ্গন করতে পারি?’ রাহুলের উত্তর— ‘অবশ্যই! চলে আসুন।’ বুধবার হামবুর্গের বুকেরিয়াস সামার স্কুলে। —নিজস্ব চিত্র।

কোনও রাখঢাক নয়। চার দিনের বিদেশ সফরে গোড়া থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ শুরু করলেন রাহুল গাঁধী। মোদী কী ভাবে হিংসার রাজত্ব কায়েম করেছেন, দেশের অর্থনীতিকে ধাক্কা দিয়েছেন, প্রস্তুতি ছাড়াই জিএসটি চালু করে ও নোটবন্দির মাধ্যমে নগদের জোগান কমিয়ে ঘা দিয়েছেন কর্মসংস্থানে— রাহুল আজ এখানে এক সভায় সবিস্তার তা তুলে ধরলেন।

Advertisement

রাহুল সবচেয়ে বেশি জোর দিলেন, ঘৃণার রাজনীতি মোকাবিলার উপরে। বুকেরিয়াস সামার স্কুলের কাম্পনাগেল থিয়েটারে অনাবাসী ভারতীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সামনে মোহনদাস গাঁধীর অহিংস নীতিকে হিংসা মোকাবিলার একমাত্র পথ হিসেবে তুলে ধরলেন কংগ্রেস সভাপতি। আর্থিক ভাবে শুধু নয়, কী ভাবে মোদী জমানায় খাদ্য ও কাজের নিশ্চয়তা, এমনকি, দলিতদের সুরক্ষার আইনকে লঘু করা হয়েছে, সরাসরি আক্রান্ত হচ্ছেন পিছিয়ে পড়া মানুষজন— তার ছবি তুলে ধরেন রাহুল। সেই সঙ্গে বোঝান কংগ্রেস অহিংসা ও ভালবাসার পথে, মানুষ কী বলছেন সেই কথা শোনার মাধ্যমে দেশের রাজনীতি ও শাসনতন্ত্রের ভাষ্যটাই বদলে দিতে চায়। এবং সেই কাজটা শুরুও হয়ে গিয়েছে।

প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতেই অনুষ্ঠানের মডারেটর তুললেন সংসদে মোদীকে আলিঙ্গনের প্রসঙ্গ। ধরতাইটা পুরো দস্তুর কাজে লাগালেন রাহুল। জানালেন, তিনি যখন মোদীকে আলিঙ্গন করেন, তিনি সেটা ভাল ভাবে নেননি। এমনকি কংগ্রেসেরও কেউ কেউ বিষয়টি পছন্দ করেননি। রাহুলের কথায় ‘‘নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, হিংসায় আমি নিজে অনেক কষ্ট পেয়েছি। ঠাকুরমার পরে ১৯৯১-এ বাবাকে হারিয়েছি সন্ত্রাসবাদীদের হাতে। কিন্তু ২০০৯-এ সেই সন্ত্রাসবাদীর দেহ শ্রীলঙ্কায় পড়ে রয়েছে (ছবিতে) দেখার পরে আমি কিন্তু খুশি হতে পারিনি।’’

Advertisement

রাহুলের এই বক্তব্যের মধ্যেই দীপক কপূর নামে এক ভারতীয়ের প্রস্তাব, ‘‘আলিঙ্গনের কথা বলছেন! আমি কি আপনাকে আলিঙ্গন করতে পারি?’’ রাহুল লুফে নেন প্রস্তাব। বলেন, ‘‘অবশ্যই! চলে আসুন।’’ মোদীকে রাহুলের এবং পাক সেনাপ্রধানকে নভজ্যোৎ সিংহ সিধুর পরে তৈরি হল আলিঙ্গনের আর একটি মুহূর্ত। প্রচুর ক্যামেরার ঝলকানিতে ধরা পড়ল রাহুলের আলিঙ্গন রাজনীতির আর একটি ছবি।

আগামিকাল বার্লিনে সভা আছে রাহুলের। কথা হবে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে। এর পরে যাবেন ব্রিটেনে। সেখানে ইন্ডিয়ান ওভারসিজ কংগ্রেসের প্রকাশ্য সভায় বক্তব্য রাখবেন তিনি।

আজ হামবুর্গ রওনা দেওয়ার পরে পথেই রাহুল আজ কেরল নিয়ে টুইট করেছিলেন। হামবুর্গে পৌঁছে জার্মানির বিদেশ প্রতিমন্ত্রী নিলস আনেনের সঙ্গে বৈঠকেও উঠে আসে কেরলের বন্যার প্রসঙ্গ। কেরলের পরিস্থিতিকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা না-করার জন্য নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। বিপর্যস্ত রাজ্যটির জন্য উদার হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি। এরই পাল্টা শাসক শিবির থেকে কটাক্ষ আসছিল, কেরলে এমন বিপর্যয়ের মধ্যে বিরোধী দলনেতা বিদেশ চললেন! এই কটাক্ষ উড়িয়ে রাহুল আজ বুঝিয়ে দিলেন, আগে থেকে স্থির করা সফরসূচিতে বদল ঘটাতে রাজি নন তিনি। তবে বিদেশে গিয়েও কেরলের মানুষের দুর্গতির কথাই রয়েছে তাঁর ভাবনায়। কংগ্রেসের তরফেও রাহুল-নিলস বৈঠক সম্পর্কে টুইট করে জানানো হয়, ভারতীয় ও জার্মানির রাজনীতি নিয়ে কথা হয়েছে দু’জনের। আলোচনা হয়েছে কেরলের ভয়াবহ বন্যা, জিএসটি এবং কর্মসংস্থান নিয়েও।

বেশ কিছু দিন ধরেই ধারাবাহিক ভাবে বিদেশে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন রাহুল। নিশানা করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। উদ্দেশ্য দু’টি। এক, আন্তর্জাতিক স্তরে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো। কারণ দুই, প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিদেশ সফরে গিয়ে দেশীয় রাজনীতি নিয়ে বলতে বিরোধীদের আক্রমণ করতে ছাড়েন না। এ তারই পাল্টা। গত বছর সেপ্টেম্বরে বার্কলেতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মুখোমুখি হয়েছিলেন রাহুল। চলতি বছর মার্চে যান সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায়। বাহরাইনেও গিয়েছেন সে দেশের রাজার আমন্ত্রণে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন