বা়ড়ছে তিক্ততা। তুঙ্গে টানাপড়েনও। ব্রেক্সিট রায়ের পরের দিনই ব্রিটেনের উপরে চাপ বাড়িয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলল, জোট যখন ছেড়েই যাবে, তখন তাড়াতাড়ি যাও। যদিও ইইউ ছাড়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় ব্রিটেনের অন্দরেই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। দাবি উঠেছে, আবার গণভোট হোক।
আজ কার্যত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কোর্টেই বল ঠেলেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জ্যঁ ক্লঁদ জুনকার। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা নিজেরাই যখন ইইউ ছাড়তে চাইছেন, তখন দ্রুত সেই প্রক্রিয়া শেষ হোক।’’ ক্যামেরন বলেছিলেন, অক্টোবর পর্যন্ত তিনিই থাকবেন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে। তার পর দল যাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করবে, তিনিই লিসবন চুক্তির ৫০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করবেন। কিন্তু ক্যামেরনের ইস্তফা পর্যন্ত বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে নারাজ ইউরোপীয় কাউন্সিল। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন শুলজ-ও বলেন, ‘‘শুধু ব্রিটেনের রাজনৈতিক অন্তঃকলহের কারণে গোটা একটা মহাদেশ অথর্ব হয়ে পড়বে, এটা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর।’’ ব্রিটেনের জোট ছাড়ার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার জন্য লিসবন চুক্তিতে কোনও বিশেষ সুযোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
এক দিকে ‘অভিমানী’ ইইউ, অন্য দিকে ব্রিটেনের অন্দরে দোলাচল। শনিবার দিনভর রাজনীতিবিদ থেকে আমজনতা, ইংরেজ থেকে অভিবাসী— অজস্র চর্চা, প্রশ্ন, ক্ষোভ ঘুরপাক খেয়েছে ব্রিটেনে। সেন্ট্রাল লন্ডনে ব্রেক্সিট-বিরোধীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। চলছে ইন্টারনেটে প্রচারও। ফের গণভোটের দাবিতে এক অনলাইন পিটিশনে আজ বিশ লক্ষেরও বেশি স্বাক্ষর জমা পড়েছে। বিলিতি কানুন মোতাবেক, কোনও বিষয়ে এক লক্ষ সই জমা প়ড়লেই তা পার্লামেন্টে উঠবে। সেই হিসেবে দ্বিতীয় গণভোট নিয়েও হয়তো আলোচনা হবে পার্লামেন্টে।
গণভোটে ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’-এর ফারাকটা ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। তা হলে কি পার্লামেন্টে বিতর্ক উঠলে হাজির হবে নতুন কোনও জটিলতা? ইইউ ছাড়ার সিদ্ধান্তেও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সিলমোহর লাগবে। ফলে ব্রেক্সিট রায় নিয়ে উল্লাস বা বিষাদের পাশাপাশি একটা ‘কী হয়-কী হয়’ আবহ এখনও যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে রানির দেশে।
ক্যামরনের পরে ব্রেক্সিটপন্থী নেতা বরিস জনসনকে ডাউনিং স্ট্রিটে দেখছেন কূটনীতিকদের একাংশ। তিনি বলছেন, ‘‘সার্বভৌম দেশ হিসেবে ব্রিটেনই প্রথম ইইউ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই দর কষাকষির জন্য নির্দিষ্ট সময় দিতেই হবে।’’ ঘটনা হল, গত ফেব্রুয়ারিতে ক্যামেরনই বসেছিলেন ইইউ-এর সঙ্গে দর কষাকষিতে। লক্ষ্য ছিল, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্রিটেনের জন্য বিশেষ সুবিধে আদায়। ইইউ কাউন্সিলের তরফে আজ সাফ বলা হয়েছে, ওই চুক্তি এখন অতীত।
ইইউ-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে বার্লিনে জরুরি বৈঠক করেছেন জোটের প্রতিষ্ঠাতা ছয় দেশ— জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গের বিদেশমন্ত্রীরা। গত কালই ব্রেক্সিটকে ‘দুঃখজনক’ বলেছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল। আজ কিন্তু ব্রিটেনকে ছাড়াই বাকি ২৭টি দেশের জোট এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দেন জার্মানির বিদেশমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার। বলেছেন, ‘‘কাউকে আমরা ইউরোপ ছিনিয়ে নিয়ে যেতে দেব না।’’ জোট নিয়ে চিন্তিত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদও। তবু তিনিও চাইছেন, সিদ্ধান্ত যখন হয়েই গিয়েছে, জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাক ব্রিটেন।
যত দ্রুত সম্ভব।