ইবোলা থেকে মুক্তি, তবু ব্রাত্য পরিবারের কাছে

চার মাস হয়ে গেল পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই তাঁর। প্রেমিকও এখন ফোন তোলেন না। নিজের কলেজেও ব্রাত্য তিনি। কারণ শিক্ষক-শিক্ষিকারাও চান না তিনি ক্লাসে আসুন। তাই নিজের গ্রাম, নিজের বাড়ি, নিজের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব সব কিছু ছেড়ে অন্য এক শহরে সম্পূর্ণ একা থাকেন কাডিয়াটু ফান্টা। গিনির এক মেডিক্যাল ছাত্রী।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কোনাকিরি (গিনি) শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৪ ০২:২৩
Share:

চার মাস হয়ে গেল পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই তাঁর। প্রেমিকও এখন ফোন তোলেন না। নিজের কলেজেও ব্রাত্য তিনি। কারণ শিক্ষক-শিক্ষিকারাও চান না তিনি ক্লাসে আসুন। তাই নিজের গ্রাম, নিজের বাড়ি, নিজের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব সব কিছু ছেড়ে অন্য এক শহরে সম্পূর্ণ একা থাকেন কাডিয়াটু ফান্টা। গিনির এক মেডিক্যাল ছাত্রী।

Advertisement

আসলে গত মার্চে ইবোলায় আক্রান্ত হন ২৬ বছরের এই তরুণী। কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পরে ঠিকও হয়ে যান। তিনি সুস্থ হওয়ার পরে হাসপাতালের তরফে তা কাগজ-কলমে জানিয়েও দেওয়া হয়। সেটা এপ্রিল। তবু ফান্টাকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাননি তাঁর পরিবারের লোকজন। অগত্যা অন্য এক শহরে একা থাকতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু চার মাস পরেও ছবিটা পাল্টায়নি। আজও তাঁকে গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে ভয় পায় তাঁর পরিবার।

ফান্টা জানিয়েছেন, রাজধানী কোনাকিরির একটি ক্লিনিকে ইনটার্ন হিসেবে কাজ করতেন তিনি। সেই সময় গিনিতে সদ্য ইবোলার সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। এক রোগী ওই রোগের সংক্রমণ নিয়ে আসেন। তখনও এই রোগ নিয়ে সতর্কতা জারি হয়নি। ফলে আর পাঁচটা সাধারণ রোগীর মতোই ফান্টা ওই রোগীরও চিকিৎসা করেন। ব্যস। সেখান থেকে তাঁর শরীরেও ছড়িয়ে পড়ে ইবোলার সংক্রমণ। “প্রথমে জ্বর, খিঁচুনি। তার পরে রক্ত বমি। আমি ভাবতে পারিনি যে বেঁচে ফিরতে পারব। কারণ সেই সময় এই রোগ হলে আমাদের দেশে কেউই বাঁচছিল না। কিন্তু আমার সৌভাগ্য আমি বেঁচে গিয়েছিলাম। আর সেটাই কাল হল। এখন আর আমায় কেউ চায় না,” বলতে বলে চোখে জল এসে যায় ফান্টার।

Advertisement

যে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়েন, সেই গামাল আবদেল নাসের বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ক্লাস করা হচ্ছে না ফান্টার। হাসপাতালের দেওয়া সুস্থতার কাগজ দেখানোর পরও তাঁর নাম নতুন করে ঢোকানো হয়নি পড়ুয়াদের তালিকায়। তাঁর আক্ষেপ, “অন্য বন্ধুরা পরীক্ষা দিয়ে নতুন ক্লাসে উঠে গেল। আমাকে তো ওরা পরীক্ষাতেই বসতে দিল না। পুরনো ক্লাসেও যেতে পারছি না।”

শুধু পরিবার আর পঠন-পাঠনই নয়, ফান্টাকে ছেড়ে গিয়েছে প্রেমও। যাঁকে ফান্টা ভালবাসতেন, সেই প্রেমিকও আর তাঁকে চান না। আগে রোজই এক বার করে দেখা হত। “এখন তো ও আমার ফোনই ধরে না। এতগুলো মাস কেটে যাওয়ার পরেও। আসলে সবাই ভয় পায়, আমার থেকে তাদের যদি ওই রোগ হয়ে যায়”, বললেন ফান্টা। এখন তো অর্থেরও বড় অভাব। বাবা-মা ঘরে ব্রাত্য করলেও এত দিন ধরে থাকা-খাওয়ার অর্থটুকু পাঠাচ্ছিলেন। কিন্তু এখন তাতেও টান পড়ছে। ফলে আগামী দিনে কী খাবেন, কোথায় থাকবেন, জানেন না ফান্টা।

তবে এত কিছুর মধ্যেও হাসপাতালের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি এই তরুণী। আর জানিয়েছেন, নিজের বাকি জীবনটা অন্যের চিকিৎসা করেই কাটাতে চান তিনি। তাঁর কথায়, “আমি রোগীদের যত্ন নিতে চাই। কারণ, চিকিৎসকদের জন্যই আমি এখনও বেঁচে রয়েছি। তাই তাঁদের দেখানো পথেই চলতে চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন